ভারতের সঙ্গে ‘ন্যায্য বাণিজ্য চুক্তি’ সম্পন্নের খুব কাছাকাছি পৌঁছেছে যুক্তরাষ্ট্র—এমন মন্তব্য করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি জানিয়েছেন, ওয়াশিংটনের আরোপিত শুল্কও শিগগিরই কমানো হবে।
স্থানীয় সময় গত সোমবার (১০ নভেম্বর) হোয়াইট হাউজের ওভাল অফিসে এক অনুষ্ঠানে ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা ভারতের সঙ্গে নতুন একটি চুক্তি করছি, যা আগের চুক্তিগুলোর চেয়ে একেবারেই ভিন্ন। এখন হয়তো তারা আমাকে খুব একটা পছন্দ করছে না, কিন্তু শিগগিরই আবার আমাদের পছন্দ করবে।’
তিনি এ কথা বলেন বিশ্বের সর্বাধিক জনবহুল দেশ ভারতের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নতুন রাষ্ট্রদূত সের্জিও গোরের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে। ভাইস প্রেসিডেন্ট জে. ডি. ভ্যান্সের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত ওই অনুষ্ঠানে ট্রাম্প ভারতের প্রশংসা করে বলেন, ‘ভারত বিশ্বের প্রাচীনতম সভ্যতাগুলোর একটি এবং এক অসাধারণ দেশ, যার জনসংখ্যা দেড় শ’ কোটি। ভারতের রাষ্ট্রদূত হওয়া সত্যিই বড় বিষয়!’
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ভ্যান্স ছাড়াও সিনেটর মার্কো রুবিও ও এরিকা কার্ক। তবে সেখানে কোনো ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্যক্তিকে দেখা যায়নি—এমনকি ভ্যান্সের ভারতীয় বংশোদ্ভূত স্ত্রী উষা ভ্যান্সও উপস্থিত ছিলেন না।
অনুষ্ঠানে ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা এখন একটি ন্যায্য বাণিজ্য চুক্তির দিকে এগোচ্ছি। আগে আমাদের সঙ্গে বেশ অন্যায্য চুক্তি ছিল। ভারত খুব দক্ষ আলোচক, সের্জিও—তুমি বিষয়টা খতিয়ে দেখবে।’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘আমরা এখন প্রায় কাছাকাছি। স্কট, আমার মনে হয় আমরা এমন একটি চুক্তির পথে, যা সবার জন্যই লাভজনক হবে।’ প্রেসিডেন্টের কথার জবাবে ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট বলেন, ‘ঠিকই বলেছেন।’
এরপর আগের প্রশাসনের প্রসঙ্গ টেনে ট্রাম্প বলেন, ‘আগে কি বাইডেন এমন প্রশ্ন করতেন? আমার তো মনে হয় না। ‘ভারতের সঙ্গে কী অবস্থা?’—এমন প্রশ্ন তার জানা ছিল না। তিনি ভারতের কিছুই জানতেন না, কিছুই না। তবে ঠিক আছে।’
ট্রাম্পকে প্রশ্ন করা হয়, ভারত-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য চুক্তির অগ্রগতি এবং নয়াদিল্লির ওপর আরোপিত শুল্ক কমানোর বিষয়ে তার অবস্থান কী। উত্তরে ট্রাম্প বলেন, ‘এখন ভারতের ওপর শুল্ক অনেক বেশি, মূলত রাশিয়া থেকে তেল কেনার কারণে। তবে এখন তারা রুশ তেল আমদানি অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছে। হ্যাঁ, আমরা শুল্ক কমাতে যাচ্ছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘একসময় আমরা অবশ্যই শুল্ক কমাব। কিন্তু মনে রাখতে হবে, শুল্ক না থাকলে আমেরিকা অতীতের মতো আবার বড় বিপদে পড়বে।’
উল্লেখ্য, ট্রাম্প প্রশাসন ভারতের ওপর সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে, যার মধ্যে রুশ তেল আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক ২৫ শতাংশ পর্যন্ত। এ নিয়ে নয়াদিল্লি যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপকে ‘অন্যায্য, অযৌক্তিক ও অবিচারপূর্ণ’ বলে উল্লেখ করেছিল। ভারতের মতে, তাদের জ্বালানি নীতির মূল ভিত্তি নিজস্ব জাতীয় স্বার্থ।
দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তির প্রথম ধাপ নিয়ে এখন পর্যন্ত পাঁচ দফা আলোচনা সম্পন্ন হয়েছে।
গত মাসে নয়াদিল্লিতে এক কর্মকর্তা জানান, দুই দেশ প্রস্তাবিত বাণিজ্য চুক্তির চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। বেশিরভাগ ইস্যুতেই ঐকমত্য তৈরি হয়েছে, এখন মূলত চুক্তির ভাষা ও শব্দচয়ন নিয়ে কাজ চলছে।