লিবিয়ায় ৭ যুবককে আটকে রেখে মুক্তিপণ দাবি


, আপডেট করা হয়েছে : 21-08-2022

লিবিয়ায় ৭ যুবককে আটকে রেখে মুক্তিপণ দাবি

উন্নত জীবনের আশায় লিবিয়া থেকে ইতালিতে পাড়ি জমিয়েছেন রবিন শিকদার। কিন্তু পড়েছেন দালালের খপ্পরে। তাকে জিম্মি করে ১০ লাখ টাকা দাবি করেছেন দালাল।


তাইতো রবিনের মা নুরজাহান কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার ছেলেকে জিম্মি করে ১০ লাখ টাকা চাচ্ছে দালাল। এখন আমি এত টাকা কোথায় পাব?


তিনি বলেন, রবিনকে ৯ লাখ ৬৫ হাজার টাকায় হারুন দালালের মাধ্যমে লিবিয়া দিয়ে ইতালিতে পাঠানোর কথা হয়েছিল। হারুন আমার ছেলেকে লিবিয়ায় বন্দি রেখে অন্য দালালের কাছে বিক্রি করে দেয়। এর কয়েক মাস পরে ওই দালাল আমাদের কাছে আরও ৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন।


না দিলে আমার ছেলেকে মেরে ফেলা হবে বলে হুমকি দেয়। তাকে নির্যািতন করার দৃশ্য মোবাইল ফোনে দেখায়। এরপর আমরা তাকে আমাদের জমি-বাড়ি বিক্রি করে ৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা দিলে কয়েক দিন যোগাযোগ করতে পারি।


এদিকে হঠাৎ করে আবার ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণের দাবিতে ছেলেকে মারধর করে মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণ করে ইমোতে কল দিয়ে আমাদের দেখায়। আমরা এখন নিরুপায়। টাকা না দেওয়ার কারণে ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। এখন ছেলেকে ফেরত আনার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি। আমার ছেলেকে ফেরত এনে দেন।


৫ মাস আগে ইতালি যাওয়ার উদ্দেশ্যে লিবিয়ায় পাড়ি জমান মাদারীপুরের সাত যুবক। তারা লিবিয়ায় পৌঁছালেও এরপর থেকে তাদের আর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে পরিবারের।


তাদের স্বজনরা জানান, লিবিয়ায় ওই যুবকদের জিম্মি করে বাড়িতে ভিডিও কল দিয়ে মুক্তিপণ চাওয়া হয়েছে। টাকা না দিলে তাদের নির্যাতনের হুমকি দিয়েছে জিম্মিকারীরা।


এসব পরিবারের ভাষ্য অনুযায়ী, মুক্তিপণের টাকা দেওয়ার সাধ্য তাদের কারও নেই। এ অবস্থায় আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে পরিবারের সদস্যরা। সন্তানদের দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য আকুতি জানিয়েছেন তারা।


তবে পুলিশ বলছে, মামলা করলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


ওই সাত যুবক হলেন, মাদারীপুর সদর উপজেলার বাহাদুরপুর গ্রামের আবুল হোসেন হাওলাদারের ছেলে রকিব হাওলাদার, আবদুল হাকিম খলিফার ছেলে এলেম খলিফা, সিরখাড়া ইউনিয়নের রব সিকদারের ছেলে রবিন সিকদার, বাহাদুরপুর ইউনিয়নের মিথাপুর গ্রামের ফুকু বেপারীর ছেলে জসিম বেপারী, মিঠাপুর এলাকার আসমত আলী মোল্লার ছেলে ইব্রাহীম মোল্লাসহ আরও অনেকে। তাদের বয়স ১৯-২১ বছরের মধ্যে।


লিবিয়ায় বন্দি রবিন শিকদারের মামা ইব্রাহিম মোল্লা বলেন, হারুন দালালের মাধ্যমে লিবিয়া পৌঁছানোর কয়েক দিন পর (২৬ মে ২০২২) রবিন লিবিয়া থেকে ফোন করে জানায়, দালাল হারুন তাকেসহ আরও কয়েকজনকে অন্য দালালের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে।


এখন যদি আরও সাড়ে ৯ লাখ টাকা না দেওয়া হয় তাহলে তারা তাকে মেরে ফেলবে। এখন নিরুপায় আমরা সরকারের সাহায্য সহযোগিতা চাচ্ছি।


পরিবারগুলো জানায়, ইতালি যেতে চন্ডিবর্দি এলাকার হারুন দালালের সঙ্গে কথা হয় তাদের।আলোচনায় ঠিক হয়, তাদের লিবিয়া হয়ে ইতালি নিয়ে যাওয়া হবে। জনপ্রতি সাড়ে ৯ লাখ ৬৫ হাজার টাকা করে চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী, হারুনের কাছে সাড়ে ৯ লাখ ৬৫হাজার টাকা করে পরিশোধ করে ওই ৭ যুবকের পরিবার।


এরপর লিবিয়ার উদ্দেশ্যে তারা দেশ ছাড়েন দেড় মাস আগে। এরই মধ্যে তারা লিবিয়ায় গিয়ে পৌঁছায়। সেখান থেকে গত ২৬ মে ইটালি যেতে সাগর পাড়ি দেয়ার কথা বলে নিয়ে তাদের জিম্মি করা হয়।


পরিবারের সদস্যদের দাবি, এরপর প্রত্যেক যুবকের পরিবারের কাছে তাদের সন্তানদের দিয়ে ভিডিও কল করিয়ে ৯ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। এক মাস না যেতেই আবার ১০ লাখ টাকা দাবি করেন দালাল চক্র।


ইতালির উদ্দেশ্যে পাড়ি জমানো এলেম খলিফার বাবা আবদুল হাকিম খলিফা বলেন, ‘আমার ছেলেকে জিম্মি করে ৯ লাখ টাকা দাবি করছে। এখন আমি এত টাকা কোথায় পাব? যে দালালের মাধ্যমে লিবিয়ায় পাঠিয়েছি, তাকেও পাওয়া যাচ্ছে না। এখন আমার ছেলেকে ফেরত আনার জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানাই। আমার ছেলেকে ফেরত চাই।’


ইউনুস শেখের বাবা সিরাজ শেখ বলেন, ‘ধার-দেনা করে পোলারে বিদেশ পাঠাইলাম। এখন আর টাকা দেওয়ার মতো সাধ্য আমার নেই। দালালের কাছে ধরনা দিয়েও কোনো কাজে আসছে না। টাকা না দিতে পারায় আমার ছেলের সঙ্গে পাঁচ মাস ধরে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে দালালরা।


অভিযোগের বিষয়ে জানতে চন্ডিবর্দি এলাকার দালাল হারুনের ইমো ও হোটাসঅ্যাপে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। মেসেজ দিয়েও তার সাড়া মেলেনি।


তার গ্রামের বাড়িতে যোগাযোগ করলে, কেউ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি। অপরদিকে দালাল হারুন গ্রামের বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। স্থানীয়রা জানান, তিনি গা ঢাকা দিয়েছেন।


মাদারীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনোয়ার হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘ভুক্তভোগী পরিবারগুলো মানবপাচার মামলা করলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অভিযুক্তদের খুঁজে বের করা হবে।’


  • সম্পাদক ও প্রকাশক: ইঞ্জিনিয়ার মো: রায়হানুল ইসলাম

  • উপদেষ্টাঃ মোঃ ইব্রাহীম হায়দার