বিদেশে পাচারের অর্থ ফেরালে দণ্ড মাফ


, আপডেট করা হয়েছে : 25-05-2022

বিদেশে পাচারের অর্থ ফেরালে দণ্ড মাফ

বিদেশে পাচারকৃত অর্থ দেশে ফেরাতে সরকার মরিয়া হয়ে উঠেছে। তাই আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে প্রথমবারের মতো পাচারকারীদের ট্যাক্স অ্যামনেস্টি (আয়কর দিলে দণ্ড মাফ) সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।

এ পন্থায় কেউ অর্থ ফেরত আনলে দেশের অন্য কোনো আইনেও এ নিয়ে প্রশ্ন করা হবে না। এ সুবিধা এক বছরের জন্য দেওয়া হচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) দায়িত্বশীল সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্রগুলো জানায়, ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত যেভাবেই হোক বিদেশে অর্থ স্থানান্তর করলে বা বিদেশ থেকে রপ্তানির অর্থ দেশে না আনলে বিদ্যমান আইনে সেটি অর্থ পাচার হিসাবে বিবেচিত হয়। অনিচ্ছাকৃতভাবে বা আইনের ভয়ে যে অর্থ বিদেশে রাখা হচ্ছে তা দেশে আনতে অনেকেই ভয় পেয়ে থাকেন।

এ ধরনের ব্যক্তিদের জন্যই মূলত আগামী বাজেটে ট্যাক্স অ্যামনেস্টি দেওয়া হচ্ছে। নির্দিষ্ট পরিমাণ কর দিয়ে যে কেউ তার আয়কর রিটার্নে ওই অর্থ-সম্পদ প্রদর্শন করতে পারবেন। এই অর্থ-সম্পদের বিষয়ে সরকারের অন্য কোনো সংস্থা প্রশ্ন করবে না এবং প্রচলিত আইনে বিচারের আওতার বাইরে থাকবেন।

প্রসঙ্গত, গত ১২ মে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) মিলনায়তনে রেমিট্যান্স অ্যাওয়ার্ড প্রদান অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ট্যাক্স অ্যামনেস্টি সুবিধা দেওয়ার ইঙ্গিত দেন। তিনি বলেন, ‘অনেকে বলেন, অর্থ পাচার হচ্ছে। দেশে অর্থ আসছে না। তবে আমি বলব, বিভিন্ন সময় নানাভাবে যদি বিদেশে কেউ টাকা নিয়ে থাকে, সেগুলো দেশে ফেরত আসবে। এমন সুবিধা দেব, যাতে সবাই টাকা নিয়ে ফিরে আসে।’

মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি অর্থ পাচার করলে অথবা অর্থ পাচারের চেষ্টা, সহায়তা বা ষড়যন্ত্র করলে সর্বনিু ৪ বছর ও সর্বোচ্চ ১২ বছর কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এছাড়াও অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সম্পত্তির দ্বিগুণ মূল্যের সমপরিমাণ বা ১০ লাখ টাকার মধ্যে যেটি বেশি সেই অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। অর্থদণ্ড পরিশোধে ব্যর্থ হলে অপরিশোধিত অর্থদণ্ডের পরিমাণ বিবেচনায় অতিরিক্ত কারাদণ্ড দেওয়ার বিধান আছে। পাশাপাশি আদালত অর্থদণ্ড বা দণ্ডের অতিরিক্ত হিসাবে দণ্ডিত ব্যক্তির সম্পত্তি রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করতে পারবে।

প্রস্তাবিত বাজেটে ৩ ভাবে ট্যাক্স অ্যামনেস্টি দেওয়া হচ্ছে। প্রথমত. বিদেশে স্থাবর সম্পত্তি থাকলে সেই সম্পত্তি দেশের আয়কর রিটার্নে দেখাতে চাইলে ১৫ শতাংশ আয়কর দিতে হবে। দ্বিতীয়ত. অস্থাবর সম্পত্তির ওপর ১০ শতাংশ কর দিতে হবে।

তৃতীয়ত. কেউ বিদেশ থেকে টাকা দেশের আনলে সেই টাকার ওপর ৭ শতাংশ কর দিয়ে আয়কর রিটার্নে দেখাতে পারবেন। এক্ষেত্রে ব্যাংক হিসাবে টাকা যোগ হওয়ার পূর্বেই কর পরিশোধ করতে হবে। সব ক্ষেত্রেই অর্থের উৎস নিয়ে প্রশ্ন করা হবে না। এমনকি আইনগত ব্যবস্থাও নেওয়া হবে না।

স্থাবর সম্পত্তি হচ্ছে এমন সম্পদ যা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানান্তর করা যায় না। যেমন জমি, ফ্ল্যাট, আবাসিক ভবন, শিল্পকারখানা বা জমিতে অবস্থানরত সম্পদ (গাছপালা)। আর অস্থাবর সম্পত্তি হচ্ছে স্থানান্তরযোগ্য সম্পদ। যেমন অর্থ, অলংকার, ঘড়ি বা অন্য মূল্যবান ধাতব পদার্থ। যেগুলো সহজেই স্থানান্তর করা যায়।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত ১৭টি দেশ ট্যাক্স অ্যামনেস্টি সুবিধা দিয়েছে। অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, বেলজিয়াম, ইতালি, গ্রিস, ইন্দোনেশিয়া, ইতালি, মালয়েশিয়া, নরওয়ে, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, পর্তুগাল, রাশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, স্পেন এবং আমেরিকার কয়েকটি রাজ্য এ সুবিধা দিয়েছে। করের স্বর্গরাজ্য থেকে অর্থ ফেরাতে ২০১৬ সালে ইন্দোনেশিয়া সরকার ট্যাক্স অ্যামনেস্টি সুবিধা দেয়। এ সুবিধা দিয়ে ৯ মাসে দেশটি ৯৬১ কোটি ডলার কর আদায় করে।

এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, এ ধরনের সুযোগ দেওয়া ঠিক নয়। এটা অনৈতিক কাজকে আরও উৎসাহিত করবে। যদি কেউ বুঝতে পারে বিদেশে টাকা পাচারের পর তা দেশে আনতে কর ট্যাক্স দিয়েও বৈধ করা যাবে, তাহলে মানুষ কেন ২৫-৩০ শতাংশ হারে ট্যাক্স দেবে। আর অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, এ ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিয়েও কালো টাকা সাদা করা যায়নি। নতুন নিয়মে কেউ টাকা দেশে আনবে বলে মনে হয় না।


  • সম্পাদক ও প্রকাশক: ইঞ্জিনিয়ার মো: রায়হানুল ইসলাম

  • উপদেষ্টাঃ মোঃ ইব্রাহীম হায়দার