ভরা মৌসুমেও চট্টগ্রামে জেলেদের জালে অন্যান্য বছরের অর্ধেকও ধরা পড়ছে না ইলিশ। আশানুরূপ ইলিশ না পেয়ে দাদনের টাকা পরিশোধে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা। অনেকে যে খরচ করে সাগরে মাছ ধরতে যাচ্ছেন, সেই টাকাই তুলতে পারছেন না। ইলিশের অভাবে খা খা করছে চট্টগ্রামের আড়তগুলো। নেই ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাঁকডাক। চলতি বছর প্রথম মৌসুমে জেলেরা প্রত্যাশিত ইলিশ পেলেও এখন হঠাৎ করেই যেন সাগর থেকে উধাও হয়ে গেছে। বঙ্গোপসাগরের বিভিন্ন স্পটে ইলিশ ধরতে যাওয়া জেলেরা ফিরছেন শূন্য হাতে।
ইলিশ স্বল্পতার কারণে নগরীর ফিশারি ঘাটে ৪০০-৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের পাইকারি দাম এখন ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, ৬০০ থেকে ৮০০ গ্রাম বিক্রি হচ্ছে ৮৫০ থেকে ১০০০ টাকার মধ্যে। আর এক কেজি ওজনের ইলিশের দাম এক হাজার ৫০০ থেকে এক হাজার ৬০০ টাকা। অথচ গত বছর এ সময় এ ঘাটে এর অর্ধেক দামে ইলিশ বিক্রি হয়েছিল। ২০ মে থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত নিষিদ্ধ থাকার পর ২৪ জুলাই থেকে মাছ ধরা শুরু হয়। জেলেরা বলছেন, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিুচাপের প্রভাবে সাগর উত্তাল থাকায় এখন ইলিশ ধরা পড়ছে না। নিুচাপের ইলিশে জো নষ্ট হয়ে গেছে। ইলিশ শিকারের জন্য ধারদেনা করে জাল-দড়ি বানিয়েছিলেন অনেকে। পরিকল্পনা ছিল মাছ বিক্রি করে ঋণ শোধ করবেন। কিন্তু এখন ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে চরম হতাশায় পড়েছেন তারা।
এদিকে, ইলিশ আহরণের খরচ বেড়েছে। আবার ইলিশও ধরা পড়ছে কম। এ কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন জেলেরা। ফিশারি ঘাট, রাসমনি ঘাট, আনন্দবাজার ঘাট, উত্তর কাট্টলি, দক্ষিণ কাট্টলি, আকমল আলী ঘাটে আগের মতো ইলিশ আসছে না। এ ছাড়া জেলার বাঁশখালী, মিরসরাই, আনোয়ারা, সন্দ্বীপ ও সীতাকুন্ডের উপকূলীয় এলাকায়ও ইলিশ তেমন ধরা পড়ছে না। ফলে চট্টগ্রামের বাজারে ইলিশ নেই বললেই চলে। অল্প যা মিলছে তার দাম আকাশছোঁয়া। তবে ফিশারি ঘাটের কয়েকজন আড়তদার জানান, ইলিশ তেমন না এলেও বিভিন্ন ধরনের সামুদ্রিক মাছ আসছে।
নগরীর আকমল আলী ঘাট ও ফিশারি ঘাট এলাকায় রোববার গিয়ে দেখা যায়, জেলেরা জাল গুটিয়ে অলস সময় পার করছেন। কেউ কেউ জাল-দড়ি পারিষ্কার করছেন। অন্যান্য বছর এ সময় সাগরে থাকত ট্রলারের মিছিল। জাল ফেললেই ধরা পড়ত রুপালি ইলিশ। ফিশারি ঘাটের জেলে সরোয়ার হোসেন যুগান্তকে বলেন, ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে কয়েকদিন ইলিশ ধরা পড়ছিল। এখন তার অর্ধেকও ধরা পড়ছে না। পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে আছি। বুঝতে পারছি না, মহাজনের টাকা শোধ করব কীভাবে। চট্টগ্রাম মৎস্য সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল হক সরকার বলেন, অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার আড়তে কম ইলিশ আসছে। অনেক জেলে দাদন নিয়ে সাগরে মাছ ধরতে যান। কিন্তু ইলিশ না পাওয়াতে জেলেদের দুশ্চিন্তার শেষ নেই।