বারবার আঘাত এলেও লক্ষ্যে অটুট শেখ হাসিনা


, আপডেট করা হয়েছে : 28-09-2022

বারবার আঘাত এলেও লক্ষ্যে অটুট শেখ হাসিনা

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করে ঘাতকের দল। সেদিন দেশের বাইরে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা।

দীর্ঘ নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতির দায়িত্ব নিয়ে ১৯৮১ সালের ১৭ মে মৃত্যুভয়কে উপেক্ষা করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে স্বদেশে ফিরে আসেন শেখ হাসিনা।

এরপর দীর্ঘ সময় ধরে সামরিক জান্তা, স্বৈরশাসন ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে চলে টানা অকুতোভয় সংগ্রাম। জেল-জুলম, অত্যাচার কোনো কিছুই তাকে টলাতে পারেনি একবিন্দু। এরই মধ্যে বারবার তাকে হত্যারও চেষ্টা করা হয়েছে। তবে প্রতিবারই তিনি প্রাণে বেঁচে যান।

১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি চট্টগ্রামে শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা হয়। ওই দিন তার গাড়িবহরে গুলি করা হলে ২৪ নেতাকর্মী শহিদ হন। একই বছরের ১৫ আগস্ট ও ১৯৮৯ সালের ১১ আগস্ট ফ্রিডম পার্টিরকর্মীরা তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাসভবনে গুলিবর্ষণ ও গ্রেনেড নিক্ষেপ করে।

১৯৯১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ধানমন্ডির গ্রিন রোডের পরিবার-পরিকল্পনা ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনকালে গুলিবর্ষণ করা হয়। এতে তিনি প্রাণে বেঁচে যান। ১৯৯৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর পাবনার ঈশ্বরদীতে হত্যার চেষ্টা হয়।

ট্রেনে গুলিবর্ষণ করে তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হলে তিনি প্রাণে বেঁচে যান। ১৯৯৫ সালের ৭ ডিসেম্বর রাসেল স্কয়ারে আওয়ামী লীগের জনসভায় বোমা হামলার সময় নেতাকর্মীরা শেখ হাসিনাকে নিরাপদে সরিয়ে নেন।

১৯৯৬ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল থেকে অস্ত্রধারীরা তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। ২০০০ সালের ২০ জুলাই গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় শেখ হাসিনার জনসভার কাছে ৭৬ কেজি ওজনের বোমা পুঁতে রাখা হয়, তবে বিষয়টি প্রকাশ পাওয়ায় তিনি রক্ষা পান।

২০০১ সালের ২৯ মে খুলনার রূপসা সেতু এলাকায় যাওয়ার কথা ছিল শেখ হাসিনার। ঘাতক চক্র সেখানে শক্তিশালী বোমা পুঁতে রেখেছিল। ২০০২ সালের ৪ মার্চ নওগাঁয় বিএমসি সরকারি মহিলা কলেজের সামনে শেখ হাসিনার গাড়িতে হামলা চালানো হয়।

একই বছর ২৯ সেপ্টেম্বরে বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীরা সাতক্ষীরার কলারোয়ার রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে শেখ হাসিনার ওপর হামলা চালায়। একই বছর ৩০ আগস্ট শেখ হাসিনা সাতক্ষীরার চন্দনপুর ইউনিয়নের হিজলি গ্রামের এক মুক্তিযোদ্ধার ধর্ষিতা স্ত্রীকে দেখতে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে যান।

সেখান থেকে ফেরার পথে তার গাড়িবহরে হামলা চালানো হয়। ২০০৪ সালের ২ এপ্রিল বরিশালের গৌরনদীতে ঘাতকের বুলেট থেকে শেখ হাসিনা রক্ষা পান। একই বছর ২১ আগস্ট তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে গ্রেনেড হামলা করা হয়। এতে ২৪ জন নিহত হন।

২০০৭ সালে (সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়) ১৬ জুলাই অন্যায়ভাবে বিনা ওয়ারেন্টে শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করে সাব- জেলে রেখে খাদ্যে বিষক্রিয়ার মাধ্যমে হত্যার চেষ্টা করা হয়। ২০১১ সালে শ্রীলংকার একটি সন্ত্রাসবাদী গ্রুপের সঙ্গে বাংলাদেশের শত্রুরাষ্ট্র এবং আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী চক্র সুইসাইড স্কোয়াড গঠন করে শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য চুক্তি করে এবং সেজন্য আগাম অর্থও দেওয়া হয়।

২০১১ সালের ডিসেম্বরে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত ও হত্যা করার লক্ষ্যে সামরিক অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। ২০১৪ সালের শেষ দিকে তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র এবং অভ্যুত্থানের পরিকল্পনার কথা স্বীকার করে পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান বিস্ফোরণের ঘটনায় গ্রেপ্তার জঙ্গি শাহানুর আলম ওরফে ডাক্তার।

সর্বশেষ ২০১৫ সালের ৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যাওয়ার পথে কাওরান বাজারে তার গাড়িবহরে বোমা হামলা চালানোর চেষ্টা চালায় জেএমবি। এছাড়া ২০১৮-১৯ সালে কয়েকবার তাকে বহনকারী বিমানে ত্রুটি ধরা পড়ে। এগুলোকেও হত্যাচেষ্টা বা হত্যা ষড়যন্ত্র বলে মনে করেন অনেকে।

এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখনো প্রায়ই ভবিষ্যতে আবারও তার ওপর হামলার শঙ্কার কথা জানান। তবে তা মোকাবিলা করেই লক্ষ্য অটুট রেখে এগিয়ে চলার দৃঢ় প্রত্যয়ের কথাও জানান বঙ্গবন্ধুকন্যা। এবারও একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা দিবসের আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী শঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন-এমন ঘটনা আগামীতেও ঘটতে পারে। দেশের মানুষকে সতর্ক থাকারও আহ্বান জানান তিনি।

ওই দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই আঘাত হয়তো আরও আসবে সামনে। কারণ যখন আমার আব্বা দেশটাকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন, তখনই তো ১৫ আগস্ট ঘটেছে। আর আজকেও বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হয়েছে, উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে।

স্বাধীনতার চেতনায় আবার সেই ‘জয় বাংলা’ ফিরে এসেছে। আবার জাতির পিতার নাম বিশ্বব্যাপী সমাদৃত হচ্ছে। এগুলো যারা সহ্য করতে পারবে না, তারা বসে থাকবে না। তারা আঘাত করবেই। বাংলাদেশকে আবারও সেই জঙ্গি রাষ্ট্রে পরিণত করার চেষ্টা করবে।’


  • সম্পাদক ও প্রকাশক: ইঞ্জিনিয়ার মো: রায়হানুল ইসলাম

  • উপদেষ্টাঃ মোঃ ইব্রাহীম হায়দার