জাবিতে হল ছাড়ছেন না সাবেকরা, আবাসন সংকট বাড়ছেই


, আপডেট করা হয়েছে : 19-10-2022

জাবিতে হল ছাড়ছেন না সাবেকরা, আবাসন সংকট বাড়ছেই

স্নাতকোত্তর পর্বের পাঠদান শেষ হলেও র‌্যাগ (শিক্ষা সমাপনী অনুষ্ঠান) না হওয়ায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) হলে অবস্থান করছেন সাবেক শিক্ষার্থীরা। এতে করে আবাসিক হলগুলোতে আবাসন সংকট বেড়েই চলছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট সূত্রে জানা যায়, ৪৪ ব্যাচ (২০১৪-১৫ সেশন) পর্যন্ত সবগুলো বিভাগেই মাস্টার্স শেষ হয়েছে। ৪৫ ব্যাচেরও (২০১৫-১৬ সেশন) বেশকিছু বিভাগের মাস্টার্স পরীক্ষা চলমান আছে। তবে প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে হলে অবস্থান করছেন ৪৩ ও ৪৪ ব্যাচের (২০১৩-১৪ ও ২০১৪-১৫ সেশন) অধিকাংশ শিক্ষার্থী। এমতাবস্থায় হলে আবাসন সংকট চরমে উঠেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রশৃঙ্খলা সংক্রান্ত অধ্যাদেশ ২০১৮ এর ৫(ট) ধারা অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের চূড়ান্ত স্নাতক/স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ছাত্রছাত্রীরা পরীক্ষা সমাপ্তির ৭ দিনের মধ্যে তাদের পরিচয়পত্র, চিকিৎসা ও গ্রন্থাগার কার্ড ফেরত দিয়ে নিজ নিজ আবাসিক হল ত্যাগ করবে। একই ধারায় এ বিধি অমান্য করার শাস্তি উল্লেখ আছে, যারা এ বিধি অমান্য করবে তাদের ফলাফল প্রকাশ স্থগিত থাকবে।

তবে শিক্ষার্থীদের দাবি, ক্যাম্পাসে প্রচলিত রীতি অনুযায়ী র‌্যাগ (শিক্ষা সমাপনী অনুষ্ঠান) না হওয়া পর্যন্ত হল ছাড়ার কোনো নজির নেই। সর্বশেষ ৪২ ব্যাচের (২০১২-১৩ সেশন) র‌্যাগ অনুষ্ঠিত হয় চলতি বছরের ১২ মার্চ। এরপর ৪৩ ব্যাচ এবং ৪৪ ব্যাচের মাস্টার্স শেষ হলেও র‌্যাগ অনুষ্ঠান না হওয়ায় তারা এখনো আবাসিক হলেই অবস্থান করছেন।

৪৩ ব্যাচের র‌্যাগ অনুষ্ঠানের আহবায়ক প্রীতম আরিফ জানান, আগামী বছরের জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারিতে র‌্যাগ অনুষ্ঠান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বশেষ ৫০ ব্যাচের (২০২০-২১ সেশন) ক্লাস শুরু হয় চলতি বছরের এপ্রিলে। সে হিসেবে স্নাতকের ৪টি বর্ষ ও স্নাতকোত্তরের একটি বর্ষের মোট বৈধ শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১২ হাজার ৯৩৮ জন। কিন্তু স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা আরও দুটি ব্যাচের শিক্ষার্থীরা হল না ছাড়ায় এ সংখ্যা প্রায় ১৬ হাজারে গিয়ে ঠেকেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোর ধারণক্ষমতা হিসেব করে পাওয়া যায়, হলগুলো একই সঙ্গে ৮ হাজার ২৭৮ জন শিক্ষার্থীকে জায়গা দিতে সক্ষম। অর্থাৎ হলগুলোতে ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ শিক্ষার্থী অবস্থান করতে বাধ্য হচ্ছেন। তীব্র আবাসন সংকটের জন্য পড়াশোনা শেষ করা শিক্ষার্থীদের হলে অবস্থানকেই দায়ী করছেন শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিস সূত্রে জানা যায়, ফার্মেসি বিভাগ ব্যতীত সবগুলো বিভাগেরই ৪৪ ব্যাচ পর্যন্ত নিয়মিত শিক্ষার্থীদের স্নাতকোত্তর শ্রেণির ফলাফল ইতোমধ্যেই প্রকাশিত হয়েছে। ফলাফল প্রকাশের পরপরই হল ছাড়ার কথা থাকলেও শুধুমাত্র র‌্যাগ অনুষ্ঠান না হওয়ায় হলে আসন ধরে রাখাকে অযৌক্তিক বলে মনে করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

তবে, সম্প্রতি র‌্যাগ অনুষ্ঠান নিয়ে বিতর্কের ঝড় উঠায় গত ১৭ এপ্রিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রযাে গডে বন্ধে হাইকোর্ট নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। হাইকোর্টের নির্দেশনা মেনে র‌্যাগ ডে পালনেও শঙ্কার কথা জানিয়েছেন আয়োজকরা।

স্নাতকোত্তর সম্পন্ন হওয়ার পরও শিক্ষার্থীরা র‌্যাগ ডে না হওয়ার অজুহাতে হলে থাকতে পারেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে প্রভোস্ট কমিটির সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল্লাহ হেল কাফী বলেন, আসলে মাস্টার্স শেষ হওয়ার পর হলে থাকার নিয়ম নাই। তবে বেশিরভাগই হল ছেড়ে যায়। অল্প কিছু ছাত্র অবশ্য থেকে যায়। র‌্যাগ না হওয়া পর্যন্ত কিছু ছাত্র থেকে যায়। তবে সেটা কোনোভাবেই উচিত না। তাদের অনেক আগেই নোটিশ দেয়া হয়েছে। কিন্তু ছেলেরা চাকরি না হলে কোথায় যাবে?

মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. ওবায়দুর রহমান বলেন, আমরা ইতোমধ্যেই হলের প্রতিটি রুমে নোটিশ পাঠিয়েছি। ৪৩, ৪৪ এবং ৪৫ ব্যাচের যেসব শিক্ষার্থীদের শিক্ষাকার্যক্রম শেষ তাদের হল ছাড়ার আদেশ দিয়েছি। আদেশ পালন না করলে আমাদের আর কিই-বা করার আছে? তাকে তো আমি হল থেকে জোর করে বের করে দিতে পারি না।

এ ব্যাপারে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নূরুল আলম সম্প্রতি এক আলোচনায় নতুন আবাসিক হলগুলোর নির্মাণকাজ শেষ হলে নতুন ব্যাচের শিক্ষার্থীদের সেখানে আবাসনের ব্যবস্থা করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন।


  • সম্পাদক ও প্রকাশক: ইঞ্জিনিয়ার মো: রায়হানুল ইসলাম

  • উপদেষ্টাঃ মোঃ ইব্রাহীম হায়দার