আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে বিএনপি-জামায়াত জোট এবং সরকারবিরোধী অন্যান্য রাজনৈতিক দল একই প্লাটফরমে এসে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তুলবে। অন্দোলনের নামে ডিসেম্বরেই দেশে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা করবে। শুধু তাই নয়, বিএনপি মনে করে, পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন না হলে সরকার বড় ধরনের নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে পারে।
সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। সম্প্রতি প্রতিবেদনটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যলয়সহ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। সম্ভাব্য পরিস্থিতি মোকাবিলায় সাত দফা সুপারিশ করা হয়। এগুলো হচ্ছে-সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মসূচিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দায়িত্ব পালনকালে সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শন করতে হবে। যাতে তারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ও অন্দোলনের ইস্যু তৈরির সুযোগ না পায়। এছাড়া সুপারিশে আছে, বিএনপি ও জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের গতিবিধি ও যাবতীয় কার্যক্রম পর্যবেক্ষণে রাখাসহ নজরদারি আরও বাড়ানো। কর্মসূচি পালনকালে বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে উচ্ছৃঙ্খল আচরণ দেখা গেলে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। বিএনপি জোটের সঙ্গে যেন বাম ও ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলো যুগপৎ আন্দোলনের সুযোগ না পায় সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। যেসব এলাকায় জামায়াত-শিবির অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী সেসব এলাকায় তাদের আবাসস্থল চিহ্নিত করে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। বিএনপি-জামায়াতের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে অগ্রিম তথ্য সংগ্রহের পাশাপাশি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সমন্বিত নজরদারি বাড়াতে হবে।
ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, জামায়াতে ইসলামী যে কোনো মূল্যে দ্বাদশ নির্বাচনে অংশ নেবে। নিবন্ধন না থাকলেও তারা আমার বাংলাদেশ (এবি), মুসলীম লীগ, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, আধিপত্য বিরোধী অন্দোলন, স্বাধীনতা পার্টি ইত্যাদি সংগঠনের সহায়তায় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ছক আঁকছে। এছাড়া আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে যুদ্ধাপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত শীর্ষ জামায়াত নেতাদের ছেলেমেয়েসহ সংগঠনটির অনেক সিনিয়র নেতা বিদেশে অবস্থান করছেন। দেশের বাইরে বসেই তারা সরকারবিরোধী নানামুখী তৎপরতা চালাচ্ছেন। জামায়াতের দোসররা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেশবিরোধী অপপ্রচার, মিথ্যাচার ও গুজব ছড়িয়ে জনগণকে ক্ষুব্ধ করে সরকারের বিরুদ্ধে খ্যাপিয়ে তুলে দেশে অস্থিরতা সৃষ্টির অপচেষ্টার মাধ্যমে দেশকে সংকটে ঠেলে দেওয়ার পাঁয়তারা চালাচ্ছে।
প্রতিবেদনের ভূমিকায় উল্লেখ করা হয়, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি ও বিদ্যুতের লোডশেডিংসহ নানা জনসম্পৃক্ত ইস্যুকে পুঁজি করে বিএনপি ধারাবাহিকভাবে কর্মসূচি হাতে নিয়ে মাঠে নেমেছে। তারা ডিসেম্বর মাসকে টার্গেট করে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে বৃহত্তর ঐক্যের চেষ্টা চালাচ্ছে। নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনের পরিকল্পনা করছে। জামায়াতে ইসলামী রাজনীতির মাঠে দীর্ঘদিন খুব একটা সক্রিয় না থাকলেও ইদানীং বিভিন্ন ইস্যুতে সরব হয়েছে। রাজনীতির মাঠে নিবন্ধন হারানো এ দলটির নেতাকর্মীরা বিভিন্ন ইস্যুতে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ঝটিকা মিছিল করছে।
প্রতিবেদনের ‘প্রেক্ষিত’ অংশে বলা হয়েছে, সামনের নির্বাচনে বিজয় লাভের টার্গেট করে দলটিকে (বিএনপি) তৃণমূল পর্যায় থেকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। আন্দোলনের কর্মকৌশল ঠিক করতে নেতাকর্মীদের সঙ্গে সিরিজ বৈঠক, রাজনৈতিক সংলাপ এবং ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করছে। পাশাপাশি নতুন নতুন কমিটি গঠন করছে।
রাজনীতির মাঠে বিএনপি সরব হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীও নেতাকর্মীদের মাঠে নামাচ্ছে। আগামীতে বিএনপি ঘোষিত কর্মসূচিতে জামায়াতসহ অন্য শরিক দলের সদস্যরা ব্যাপক জনসমাবেশ ঘটাবে। এর মাধ্যমে দেশে বিশৃঙ্খলা ঘটিয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করার চেষ্টা চালাবে। বিভিন্ন কর্মসূচিতে বিএনপির উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিত হচ্ছে। তাদের মধ্যে চাঙ্গা মনোভাব দেখা যাচ্ছে। প্রায়ই তারা মারমুখী আচরণ করছে। আগামীতে তাদের আগ্রাসী মনোভাব আরও বাড়বে। দলটি চূড়ান্ত অন্দোলনের লক্ষ্যে নিজেদের ঐক্য সুদৃঢ় করার পাশাপাশি অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরি করছে। মানবাধিকার ইস্যুকে সরকারের বিরুদ্ধে কাজে লাগানোর কৌশল গ্রহণ করছে। পাশাপাশি সরকারকে চাপে রাখতে সুশীল সমাজ প্রতিনিধি ও বিদেশি দূতাবাসগুলোর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ও অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করছে।
গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বর্তমান সরকার টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকাকালে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটটি জনসম্পৃক্ত কোনো ইস্যুকে ঘিরে সরকারিবোরোধী অন্দোলন জোরদার করতে পারেনি। সম্প্রতি দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে জনমনে অসন্তুষ্টি ও ক্ষোভ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এই ইস্যুকে পুঁজি করে বিএনপি ধারাবাহিক কর্মসূচির নামে নেতাকর্মীদের মাঠে নামিয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করার মাধ্যমে দাবি আদায়ে তৎপর। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে বিএনপি কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। এরই অংশ হিসাবে সম্প্রতি বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং অস্ট্রেলিয়াসহ বেশ কয়েকটি প্রভাবশালী দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন দলটির শীর্ষ নেতারা। গত একাদশ সংসদ নির্বাচন যেভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর নজরদারির কারণে আগামী নির্বাচন সেভাবে অনুষ্ঠিত না হওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে বিএনপি মনে করে।