লাগামহীন পাগলা ঘোড়ার মতো আবারও যেন ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটছে নিত্যপণ্যের দাম। বিক্রেতারা বলছেন, দাম বৃদ্ধির অস্থিরতার পালে বাতাস দিয়েছে বাণিজ্যমন্ত্রীর দাম সমন্বয়ের ঘোষণা। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সরবরাহ সংকট। সব মিলিয়ে টালমাটাল পরিস্থিতি। দামের চাপে মধ্যবিত্তরা হিমশিম খাচ্ছেন, করছেন হা-হুতাশ। অন্যদিকে নিম্নবিত্তদের অবস্থা অবর্ণনীয়।
শুক্রবার (৪ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা যায়, তেমন কোনো কারণ ছাড়াই হঠাৎ বাড়তে শুরু করেছে চাল, ডাল, তেল, আটা, ময়দা, চিনি, পেঁয়াজ, রসুনসহ প্রায় সব নিত্যপণ্যের দাম। এতে বিক্রেতারাও বিরক্ত। কারণ, বাজারে গিয়ে ক্রেতারা ফিরছেন অর্ধেক বাজার করে, তাতে কমেছে বেচাকেনা, আর্থিক লেনদেন।
বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত দু-তিন দিনের মধ্যে খোলা সয়াবিন ও পাম তেলের দাম লিটারে ১০ টাকা বেড়েছে। খুচরা পর্যায়ে বোতলজাত সয়াবিনের দাম না বাড়লেও লিটারে দুই টাকা বেড়েছে ডিলার পর্যায়ে।
নাহিদ নামের এক দোকানি অভিযোগ করে বলেন, সয়াবিন ও পাম তেলের মূল্য সমন্বয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী ঘোষণা দেয়ার পরই প্রায় সবকিছুর দাম আরেক দফা বেড়েছে। হঠাৎ কিছু কিছু পণ্য আবার চাহিদামতো পাওয়াও যাচ্ছে না। এতে এমনিতেই সেসব পণ্যের দাম বেড়ে গেছে।
তিনি জানান, সরকারের ঘোষণার পরই ডিলাররা প্রতি লিটার তেলে ২ টাকা বেশি নিতে শুরু করেছে। প্রতি ড্রাম তেলে বেড়েছে এক থেকে দেড় হাজার টাকা।
মোটা চালের দাম গত সপ্তাহে কেজিতে ২ টাকা বৃদ্ধির পর চলতি সপ্তাহে আরও তিন টাকা বেড়েছে। প্রতি কেজি আটা-ময়দায় ৫-১০ টাকা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেখা দিয়েছে সরবরাহ সংকট। প্রতি কেজি খোলা চিনি ৯০ টাকা এবং প্যাকেটজাত ৯৫ টাকা নির্ধারিত থাকলেও বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১১৫ টাকায়। আর সরকারি চিনিকলের চিনি বাজার থেকে উধাও হয়ে গেছে। এ ছাড়া কেজিতে ৫ টাকা বেড়েছে ডালের দাম। তবে কিছুটা কমে ১৪০ টাকা ডজন বিক্রি হচ্ছে ডিম।
অপর এক দোকানি বলেন, ‘বেশি দামে কেনার কারণে বেশি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে। কিন্তু যখন-তখন দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হচ্ছে। অনেকেই দাম শুনে কিছু না কিনেই চলে যাচ্ছেন। এতে আমাদেরও বেচাকেনা কমেছে।’
এ ছাড়া কাঁচাবাজারে ৮০ টাকার নিচে মিলছে না কোনো সবজি। যে শসার দাম এক সপ্তাহ আগে ছিল প্রতি কেজি ৫০ টাকা, সেটি এখন ৯০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। কম দাম রয়েছে শুধু পেঁপের, প্রতি কেজি ৪০ টাকা। ছোট সাইজের এক পিস বাঁধাকপি বা ফুলকপির দাম ৬০ টাকা। গাজর-টমেটো ১২০ থেকে ১৬০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। দেশি পেঁয়াজ কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা। তবে বাছাই করে নিতে গেলে গুনতে হবে ৭০ টাকা!
মাছের বাজারেও তুঘলকি কাণ্ড। গরিব মানুষের আমিষের উৎস হিসেবে পরিচিত প্রতি কেজি পাঙাশ ২০ টাকা বেড়ে ২০০ টাকায় ঠেকেছে! তেলাপিয়া সাইজভেদে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা, রুই ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা, চাষের কই ২৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। নদী বা সমুদ্রের মাছের দাম কেজিতে ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেড়েছে।
মাছের বাজারে আসা নাজমুল নামের এক ক্রেতা দুঃখ করে বলেন, ‘এতদিন ভালো মাছ কিনতে না পারলেও তেলাপিয়া-পাঙাশ কিনতে পারতাম। এগুলোর দাম কম ছিল। কিন্তু কম দামে এখন আর কোনো মাছ পাওয়া যায় না। এখন বাজারে এসে শুধু ঘুরি। শুধু দেখি। কিছুদিন পর হয়তো দেখলেও টাকা চাইতে পারে।’
এমন পরিস্থিতি নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের কঠোর হস্তক্ষেপের দাবি দামের চাপে পড়া ভোক্তাদের।
কথা হয় বাজার করতে আসা জুলফিকার নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে। বাজার পরিস্থিতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আজ যে দামে কিছু কিনছি, কোনো কারণ ছাড়াই কাল সেটা বেড়ে যাচ্ছে। এভাবে প্রতিনিয়ত সবকিছুর দাম বাড়ছে। কিন্তু আয় তো বাড়ছে না। এদিকে খাওয়া তো আর বন্ধ করে দিতে পারছি না। এসব দেখার দায়িত্ব যাদের, তারা করছেটা কী?’