যেসব আমলে অন্তরের কঠোরতা দূর হয়


, আপডেট করা হয়েছে : 30-05-2022

যেসব আমলে অন্তরের কঠোরতা দূর হয়

আল্লাহর অবাধ্যতা ও পাপের কারণে মানুষের অন্তর কঠোর হয়ে যায়। ইরশাদ হয়েছে, ‘অতঃপর তোমাদের অন্তর কঠিন হয়ে গেল, তা পাষাণ কিংবা তার চেয়ে বেশি কঠিন…। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ৭৪)

নিম্নে অন্তরের কঠোরতা দূর করার উপায় বর্ণনা করা হলো—

১. আল্লাহকে চেনা : অন্তরের কঠোরতা দূর করার প্রধান উপায় হলো আল্লাহর রহমত, ক্ষমা, শাস্তি ও মর্যাদা জানার মাধ্যমে অন্তর নরম করার চেষ্টা করা এবং আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করা। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘(আল্লাহ) পাপ ক্ষমাকারী, তাওবা কবুলকারী, কঠোর শাস্তিদাতা ও সামর্থ্যবান।

তিনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। তাঁর দিকেই হবে প্রত্যাবর্তন। ’ (সুরা : গাফির, আয়াত : ৩)

২. কোরআন তিলাওয়াত করা : কোরআন তিলাওয়াত করা ও এর অর্থ বুঝে আমল করার মাধ্যমে অন্তর নরম হয়। আল্লাহ বলেন, ‘(বিনয়ী হলো তারা) যাদের অন্তর আল্লাহর নাম স্মরণ করা হলে বিনীত হয় এবং যারা বিপদ-আপদে ধৈর্য ধারণ করে। ’ (সুরা : হজ, আয়াত : ৩৫)

৩. অন্তরকে পরকালীন চেতনায় উজ্জীবিত করা : অন্তরকে বোঝাতে হবে যে দুনিয়ার জীবন ক্ষণস্থায়ী। এ জীবনের পরে আছে স্থায়ী ও অনন্ত জীবন। সে জীবনের তুলনায় এ নশ্বর জীবন নিতান্তই তুচ্ছ ও নগণ্য। রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর কসম! আখিরাতের তুলনায় দুনিয়ার উপমা যেমন তোমাদের কেউ মহাসাগরের মধ্যে নিজের একটি আঙুল ডুবিয়ে দেয়, এরপর সে লক্ষ করে দেখুক তা কী (পরিমাণ পানি) নিয়ে এলো। ’ (মুসলিম, হাদিস : ২৮৫৮)

অন্য হাদিসে এসেছে, জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) একটি কান কাটা মৃত বকরির বাচ্চার কাছ দিয়ে অতিক্রমকালে বলেন, তোমাদের মধ্যে এমন কে আছে, যে একে এক দিরহামের বিনিময়ে ক্রয় করতে পছন্দ করবে? সাহাবায়ে কিরাম বলেন, আমরা তো একে কোনো কিছুর বিনিময়েই ক্রয় করতে পছন্দ করব না। তখন তিনি বলেন, আল্লাহর কসম! এটা তোমাদের কাছে যতটুকু নিকৃষ্ট, আল্লাহর কাছে দুনিয়া এর চেয়েও বেশি নিকৃষ্ট। (মুসলিম, হাদিস : ২৯৫৭)

৪. মৃত্যু ও মৃত্যু-পরবর্তী অবস্থার কথা চিন্তা করা : দুনিয়ার জীবনের পর সবাইকে মরতে হবে এবং দুনিয়ার জীবনের হিসাব আল্লাহর কাছে দিতে হবে। এ চিন্তা ও বিশ্বাসই মানুষের অন্তর নরম করতে পারে। মরণের পর কবরে যেতে হবে, মুনকার-নাকিরের প্রশ্নের জবাব দিতে হবে, হাশরের ময়দানে আমলনামা নিয়ে উঠতে হবে, আমল ভালো হলে জান্নাত, না হয় জাহান্নাম। এ কথা চিন্তা ও বিশ্বাসের মাধ্যমেই অন্তর নরম হয়।

কোনো মানুষ যদি কবরের কাছে গিয়ে এই চিন্তা করে যে, এই কবরে যে আছে সে একদিন দুনিয়ায় ছিল, আমার মতো খাওয়াদাওয়া করত, চলাফেরা করত। আজকে সে কবরে চলে গেছে, তার দেহ মাটি হয়ে গেছে, তার সম্পদ তার ছেলেমেয়েরা ভাগ করে নিয়েছে। আমাকেও একদিন তার মতো কবরে যেতে হবে। তাহলে অন্তর নরম হবে। রাসুল (সা.) বলেছেন, আমি প্রথমে তোমাদের কবর জিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম, এখন তোমরা কবর জিয়ারত করো। কেননা এটা অন্তরকে নরম করে। (মুসনাদ হাকেম, হাদিস : ১৩৯৩)

৫. আল্লাহর নিদর্শনাবলি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা : আল্লাহ কোরআনে আজাব-গজবের অনেক আয়াত নাজিল করেছেন। বিভিন্ন জাতি অবাধ্য হওয়ার কারণে তাদের ধ্বংস করে দেওয়ার কাহিনি বর্ণনা করেছেন। চিন্তাশীল মানুষ যদি এগুলো নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করে তাহলে তার অন্তর নরম হবে। আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ উত্তমবাণী তথা কিতাব নাজিল করেছেন, যা সামঞ্জস্যপূর্ণ, পুনঃপুনঃ পঠিত। এতে তাদের পশম কাঁটা দিয়ে ওঠে চামড়ার ওপর, যারা তাদের পালনকর্তাকে ভয় করে, এরপর তাদের চামড়া ও অন্তর আল্লাহর স্মরণে বিনম্র হয়। এটাই আল্লাহর পথনির্দেশের মাধ্যম। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পথ প্রদর্শন করেন। আর আল্লাহ যাকে গোমরাহ করেন তার কোনো পথ প্রদর্শক নেই। ’ (সুরা : জুমার, আয়াত : ২৩)

৬. সেলাকদের সঙ্গী হওয়া : সেলাকদের সঙ্গে থাকা, তাদের সঙ্গে চলাফেরা করা ও তাদের থেকে উপদেশ নেওয়ার মাধ্যমে মানুষের অন্তর নরম থাকে। আল্লাহ বলেন, ‘আপনি নিজেকে তাদের সৎসঙ্গে আবদ্ধ রাখুন, যারা সকাল-সন্ধ্যায় তাদের পালনকর্তাকে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে আহ্বান করে এবং আপনি পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য কামনা করে তাদের থেকে নিজের দৃষ্টি ফিরিয়ে নেবেন না। যার মনকে আমার স্মরণ থেকে গাফেল করে দিয়েছি, সে নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে এবং যার কার্যকলাপ হচ্ছে সীমা অতিক্রম করা, আপনি তার আনুগত্য করবেন না। ’ (সুরা কাহফ, আয়াত : ২৮)

৭. দোয়া করা : দোয়া প্রত্যেক মুমিনের প্রধান হাতিয়ার এবং অন্তরের কঠিনতা থেকে পরিত্রাণকারী। অন্তরের চিকিৎসার জন্য নিম্নোক্ত দোয়াটি পড়া যায়, যা রাসুল (সা.) পাঠ করতেন—

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা মুছার্রিফাল কুলুব, ছাররিফ কুলুবানা আলা তাআতিক।

অর্থ : হে হৃদয় পরিবর্তনকারী! আমাদের হৃদয়গুলো আপনার আনুগত্যের দিকে ঘুরিয়ে দিন। (মুসলিম, হাদিস : ২৬৫৪)

মহান আল্লাহ আমাদের অন্তরের কঠোরতা দূর করে দিন।


  • সম্পাদক ও প্রকাশক: ইঞ্জিনিয়ার মো: রায়হানুল ইসলাম

  • উপদেষ্টাঃ মোঃ ইব্রাহীম হায়দার