কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগে একটি করে মনিটরিং ও মূল্যায়ন অনুবিভাগ (উইং) চালু করা হবে।
সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে গোপনে অভিযোগ গ্রহণ ও অনুসন্ধান করবে এ ইউং। একইসঙ্গে বিধিবিধান মেনে যথাযথভাবে কাজ হচ্ছে কিনা-তা পর্যবেক্ষণ করা হবে। এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন তৈরি করে প্রতি ৩ মাস অন্তর এবং বছরে একবার সচিবের কাছে জমা দিতে হবে।
যুগ্ম সচিব অথবা উপসচিব পর্যায়ের একজন কর্মকর্তার নেতৃত্বে এ অনুবিভাগের যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
এসব বিষয় অন্তর্ভুক্ত করে সচিবালয় নির্দেশমালা ২০১৪ এর হালনাগাদ খসড়া তৈরি করা হয়েছে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান ও গবেষণা কোষের বৈঠকে প্রণয়ন করা হয় খসড়াটি। এটি অনুমোদনের জন্য শিগগিরই প্রশাসন উন্নয়নসংক্রান্ত সচিব কমিটিতে পাঠানো হবে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী শুক্রবার বলেন, সচিবালয় নির্দেশমালা হালনাগাদকরণের কাজ চলছে। এ ব্যাপারে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মতামত নেওয়া হয়েছে।
পরিসংখ্যান ও গবেষণা অনুবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো থেকে যেসব মতামত পাওয়া গেছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে-রাষ্ট্রপতি কিংবা প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো সার-সংক্ষেপের একটি আদর্শ নমুনা সচিবালয় নির্দেশমালায় সংযুক্ত করতে হবে। বর্তমানে অনুসৃত নির্দেশমালায় এ সংক্রান্ত সার-সংক্ষেপের কোনো বিশেষ নমুনা দেওয়া নেই। ফলে তাদের কাছে পাঠানো সারসংক্ষেপ একেক মন্ত্রণালয় একেকভাবে উপস্থাপন করছে। এতে অনেক সময় বিভ্রান্তি সৃষ্টি হচ্ছে। এটি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সারসংক্ষেপের প্রমিত একটি প্রায় অভিন্ন নমুনা নির্দেশমালায় সংযোজন করার কথা বলা হয়েছে খসড়ায়।
দাপ্তরিক নেমপ্লেটে সচিব ও সিনিয়র সচিব লেখাযুক্ত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে খসড়ায়। কারণ ইতোমধ্যে সিনিয়র সচিবের পদ সৃষ্টি হয়েছে এবং ভারপ্রাপ্ত সচিবের পদ বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া খসড়ায় উল্লেখ করা হয়, এক সময় দাপ্তরিক কাজে ফ্যাক্সের ব্যাপক প্রচলন থাকলেও সময়ের পরিবর্তনে এখন তা অপ্রাসঙ্গিক। তাই নির্দেশমালা থেকে ‘বাংলা বা ইংরেজি ফ্যাক্স’ বাদ যাবে।
প্রশাসনের দাপ্তরিক কাজে ব্যবহৃত ইলেকট্রনিক প্ল্যাটফরম অর্থাৎ জুম আইডি, জুম মিটিং, ভার্চুয়াল মিটিং, হোয়াটসঅ্যাপস ও ভাইবারসহ অন্যান্য পদ্ধতি নির্দেশমালায় অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। যুক্ত হচ্ছে ই-নথিতে ফাইল নিষ্পত্তি কার্যক্রমের পূর্ণাঙ্গ ধারণা।
করোনা মহামারিতে সারা বিশ্ব থমকে দাঁড়িয়েছিল। এ কারণে অনেক কাজ দপ্তরে আবার অনেক কাজ বাসায় বসে করতে হয়েছে। বাসায় কাজের সুবিধা কর্মকর্তাদের জন্য থাকলেও কর্মচারী অর্থাৎ স্টেনোটাইপিস্ট, অফিস সহকারী, প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং ব্যক্তিগত কর্মকর্তাদের নেই।
এমন পরিস্থিতিতে তারাও যেন বাসায় বসে দাপ্তরিক কাজ করতে পারেন সেজন্য তাদের ল্যাটপসহ যাবতীয় সুবিধা প্রদানের বিষয়টি সচিবালয় নির্দেশমালায় অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়। এছাড়া মহামারি বা অতিমারির সময়ে দাপ্তরিক কার্যাবলি নিষ্পত্তির বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা থাকবে নির্দেশমালায়।
মাঠপ্রশাসনে কর্মরত কর্মকর্তাদের অনেক সময় দাপ্তরিক প্রয়োজনে সচিবালয়ে প্রবেশ করতে হয়। তবে তাদের সচিবালয়ে প্রবেশের জন্য স্থায়ী পাশ না থাকায় অনেক সময় তারা সাধারণ পাশ বা অফিস আদেশের চিঠি দেখিয়ে প্রবেশ করেন। এক্ষেত্রে তাদের জন্য স্থায়ী পাশ চালু করার বিষয়টিও খসড়া নির্দেশমালায় উল্লেখ করা হয়। গত ডিসি সম্মেলনেও মাঠ প্রশাসনে কর্মরতদের জন্য সচিবালয়ে প্রবেশ পাশ ইস্যুর বিষয়টি উঠেছিল।
এছাড়া কর্মকর্তাদের বার্ষিক গোপনীয় অনুবেদন (এসিআর) লেখার পদ্ধতির সংক্ষিপ্ত বিবরণ সচিবালয় নির্দেশমালায় অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। অনেক সময় কিছু সরকারি কর্মকর্তা সেবা প্রত্যাশীদের প্রতি নির্দয় আচরণ করেন। এ ধরনের অনাকাক্সিক্ষত নির্দয় আচরণ রোধে জনগণের প্রতি সদয় আচরণসংক্রান্ত একটি নির্দেশাবলি নতুন করে যুক্ত হচ্ছে।
মাঠপ্রশাসনে সাঁট মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর ও অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক নথি উপস্থাপন করে থাকেন। কিন্তু সচিবালয়ে কর্মরত সাঁট মুদ্রাক্ষরিক কাম-কম্পিউটার অপারেটর অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিকরা নথি উপস্থাপন করতে পারবে কিনা তা সচিবালয় নির্দেশমালায় বলা নেই। এক্ষেত্রে তারা ফাইল উপস্থাপন করতে পারবের কিনা-তা সংশোধিত খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে।
দাপ্তরিক কাজে শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে সাঁট মুদ্রাক্ষরিক কাম-কম্পিউটার অপারেটর, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর ও অফিস সহায়কদের ছুটি প্রদানে প্রশাসনিক কর্মকর্তার সুপারিশ নেওয়া হবে। শুধু তাই নয় অফিস সহায়কদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে বার্ষিক গোপনীয় অনুবেদনের (এসিআর) আওতায় আনা হচ্ছে। সে লক্ষে নতুন এসিআর ফরম তৈরি করে তা নির্দেশমালায় সংযোজন করা হবে। বর্তমানে অনুসৃত নির্দেশমালায় এ ধরনের কোনো ব্যবস্থা নেই।
এসডিজি, অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা, বার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাপ্তরিক রুটিন কাজের সঙ্গে সংযোগ করে তা বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ার সংক্ষিপ্ত বিবরণ ও লিংক যুক্ত করা হয়েছে নির্দেশমালার খসড়ায়। সচিবালয় লাইব্রেরি একটি আধুনিক ডিজিটাল লাইব্রেরি। এর সদস্যদের জন্য ই-কার্ডের ব্যবস্থা করা হলেও তা বর্তমান নির্দেশমালায় উল্লেখ নেই। লাইব্রেরির সদস্যরা বই নিয়ে তা আবার ফেরত দিতে কালক্ষেপণ করেন। বারবার তাগিদ দেওয়া সত্ত্বেও বইগুলো ফেরত দেন না।
সেই ক্ষেত্রে ঢাকার বাইরে বদলি হলে লাইব্রেরির কার্ড ও বই অতি দ্রুত ফেরত দেওয়ার বিষয়টি সচিবালয় নির্দেশমালায় অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব রয়েছে খসড়ায়। মন্ত্রণালয় ও বিভাগের শাখা পরিদর্শনের বিষয়টি বর্তমান নির্দেশমালায় উল্লেখ আছে। কিন্তু পরিদর্শন প্রতিবেদন উপস্থাপনের কোনো প্রমিত নমুনা নেই। এটি খসড়ায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।