এক বাগানেই ৯০ জাতের আম!


, আপডেট করা হয়েছে : 31-05-2022

এক বাগানেই ৯০ জাতের আম!

ফেনীর সোনাগাজীতে একটি আমবাগানে চাষ হয়েছে প্রায় ৯০ প্রজাতির আম। গাছে গাছে থোকায় থোকায় ঝুলছে বিভিন্ন প্রজাতির আম। ফেনী নদী তীরবর্তী মুহুরী সেচ প্রকল্পের এলাকায় সোনাগাজী অ্যাগ্রো কমপ্লেক্সে ছয় হাজার গাছের এই আমের বাগানটি তৈরি করেছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর ও স্থানীয় সাহাপুর এলাকার বাসিন্দা মো. সোলায়মান। 


শুধু আমের মৌসুমে নয়, বারো মাসই আম পাওয়া যায় মেজর অব. সোলায়মানের এই বাগানে। প্রতিদিন জেলা শহর ও দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ এখানে আসেন বাগান দেখতে এবং আম কিনে নিয়ে যাওয়ার জন্য।


চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রংপুর, রাজশাহী, দিনাজপুর, নওগাঁসহ দেশের সব অঞ্চলের আম রয়েছে এ বাগানে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, নেপাল, ভারত, ভুটান ও চীনসহ বিদেশি বাহারি নানা স্বাদের আমও রয়েছে এখানে। সব মিলিয়ে ৯০ জাতের আম মিলছে এই আমবাগানে।


সোলায়মান ১৯৮৬ সালে সেনাবাহিনীর চাকরি থেকে অবসরে যান। এরপর দেশের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে আম, মৎস্য চাষ, গবাদিপশু পালন, মধু, সরিষা উৎপাদন ও নার্সারি তৈরির বিষয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। পরে ১৯৯২ সালে তিন লাখ টাকা পুঁজি নিয়ে পারিবারিক জমিতে খামার প্রতিষ্ঠা করেন। সেনাবাহিনী থেকে অবসরে এসে কৃষিতে শ্রম ও মেধা দিয়ে তিনি সফল হয়েছেন। নিজে শ্রমিকদের সঙ্গে বাগান ও খামার পরিচর্যার কাজ করেন বলে বৃদ্ধ বয়সেও সুস্থ, সবল আছেন। কৃষিতে সময় দিলে কৃষি ভালো ফল দেয় এমনটাই দাবি তার।


তিনি বলেন, ৬৫ একরের সমন্বিত খামারে প্রায় ১৫ একর জমিতে রয়েছে আমবাগান। এর মধ্যে ৪ একর জমিতে শুধুই আম বাগান। বাকি আম গাছগুলো লাগানো হয়েছে পুকুরের পাড়ে। চলতি মৌসুমে এ বাগান থেকে ৪০ টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। কিন্তু বৈরী আবহাওয়ার কারণে ফলন কম হওয়ায় এখন তা ধরা হয় ২৫ টন। এছাড়া বাগানের পাশে স্থাপিত একটি ইটভাটার কারণে ফলনে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। আমবাগানে এ ক্ষতির বিষয়ে তিনি ফল বিজ্ঞানী ড. শরফউদ্দিন ও কৃষিবিদ ড. শাহীনুরের পরামর্শ নিয়েছেন। 




বাগানে রয়েছে মরিয়ম, আম্রপালী, মধুরানী, হাঁড়িভাঙ্গা,  কাঁচামিঠা, বারি ১ থেকে ১১, কিউজাই, রেড পালমার,  রেড তাইওয়ান,  হানিডিও, আলপানিসো নাম ডগমাই, বারোমাসি, কাটিমন, রাধাসুন্দরী, তোতাপুরি, দোসারি, ল্যাংডা, হিমসাগর। সূর্যডিম, থাইল্যান্ডের আম চিয়াংমাই, গৌরমতি, ক্যান্ট, অস্টেলিয়ান আম উসাইদ, থাইজাম্বুরা, ব্যানানা, গোপালভোগ, ক্ষিরসাপাত, রূপালি, তোলাপুলি, হাঁড়িভাঙা, লুবনা, লক্ষ্মণভোগ, মোহনভোগ, ক্ষিরপুলি, শাহী-পছন্দ, রাজভোগ, মির্জাপুরী, কিষাণভোগ, ফজলি, চোষা, আশ্বিনা, অমৃতভোগ, রানী পছন্দ, কৃষ্ণভোগ, দিল পছন্দ, বোম্বাই (মালদা), সূর্যপুরী, মিসরীভোগ, গোলাপ খাস, বৃন্দাবনী, দিল খোশ, কোহিতুর, বারমাসী ও কাঁচা মিঠা, কোহিনুর, চৈতালী, জাফরান, দুধ কুমার, দুধসর, বাবুই ঝাঁকি, মধুচাকী, মিঠুয়া, শ্রাবণী, স্বর্ণরেখা, সুবর্ণরেখা, ইত্যাদি জাতের আম।


গাছে গাছে ঝুলছে নানা জাতের বাহারী আম। কিছু আমে পাক ধরেছে। কিছু এখনো অপরিপক্ব, আবার কিছু আম রয়েছে বারোমাসি। পুরো খামারটি যেন আমের রাজ্য। আমের ঘ্রাণে মাতোয়ারা চারপাশ। সাধারণ জাতের আমগুলো প্রতি কেজি ১০০ টাকায় বিক্রি হয়। ব্যানানাসহ কয়েকটি জাতের আম বিক্রি হয় প্রতি কেজি ২০০ টাকায়।


খামারের মালিক মেজর অব. সোলায়মান বলেন, এসব আম বাজারে নিয়ে বিক্রি করতে হয় না। খামারে এসেই ক্রেতারা কিনে নিয়ে যান। এছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের কিছু ক্রেতা রয়েছেন যারা কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে আম সংগ্রহ করেন। মোবাইল ব্যাংকিংয়ে টাকা পাঠিয়ে দেওয়ার পরে ঠিকানায় পৌঁছে যায় অর্ডার করা আম।


সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা জানান, বাগানে কীটনাশক বা রাসায়নিক সার ব্যবহার করেন না। কেবল আমের মুকুল আসার দুই মাস আগে একবার কীটনাশক ছিটানো হয়। আর সারা বছর ব্যবহার করেন জৈব সার। বাগানে স্থায়ী কর্মচারীর সংখ্যা ২৫ জন। আর দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে আছেন আরও ১০ জন। তারাই বাগান পরিচর্যা করেন, ফল তোলেন এবং বিপণন করেন।


তিনি জানান, এ খামারটির শুরু করেছিলেন মাত্র ৬ একর জমিতে। বাড়তে বাড়তে এখন সেটি ৬৫ একরের সমন্বিত খামার। খামারের বড় বড় পুকুরে মাছ চাষ হয়। পুকুরের চারপাশে দেশি-বিদেশি জাতের আমগাছ। আছে কাঁঠাল, কলা, পেঁপে, পেয়ারা, নারকেল, ড্রাগন, জামরুলসহ নানা ফলের গাছ। এক পাশে গবাদিপশুর খামার, আরেক পাশে নার্সারি। এছাড়াও মধু চাষ করে উৎপাদিত মধু বিক্রি করছেন প্যাকেটজাত করে।


উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সাজ্জাদ হোসেন মজুমদার বলেন, যেহেতু মেজর অব. সোলায়মান সোনাগাজীর মাটিতে দেশের বিভিন্ন প্রজাতির আম চাষাবাদ করে সফল হয়েছেন সেহেতু ফেনীর এই অঞ্চল আমবাগান করার জন্য উপযোগী। এ বাগানে উৎপাদিত আমের গুণগতমান ভালো। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ কিনে নিয়ে যায় এ বাগানের আম।


  • সম্পাদক ও প্রকাশক: ইঞ্জিনিয়ার মো: রায়হানুল ইসলাম

  • উপদেষ্টাঃ মোঃ ইব্রাহীম হায়দার