রমজানের পণ্য আমদানিতে দেওয়া হচ্ছে শুল্ক ছাড়


, আপডেট করা হয়েছে : 28-01-2023

রমজানের পণ্য আমদানিতে দেওয়া হচ্ছে শুল্ক ছাড়

দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে আসন্ন রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে দেওয়া হচ্ছে শুল্ক ছাড়। ডলারের উচ্চমূল্যের কারণে আমদানি ব্যয় বেড়ে গেছে। সব জিনিসপত্রের দাম ঊর্ধ্বমুখী। রমজান মাসে ভোগ্যপণ্যের দাম যাতে আর না বাড়ে সে জন্য আমদানি শুল্ক ছাড় দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এতে সায় দিয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। সংশ্লিষ্ট সূত্র এসব জানিয়েছে।

বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন সূত্র জানায়, ডলারের দাম বাড়ার কারণে আমদানিনির্ভর নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম অন্তত ৩০ ভাগ বেড়েছে। সংস্থাটির উপ-প্রধান (চলতি দায়িত্ব) মো. মাহমুদুল হাসান জানান, ডলারের পরিবর্তিত মূল্য সমন্বয় করার কারণে এমনটা হয়েছে। তিনি বলেন, ডলারের উচ্চমূল্যের কারণে শুধু আমদানিকৃত পণ্যের দাম ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।

দেশে নিত্যপণ্যের দাম কোনোভাবেই কমছে না। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবেই এক বছরের ব্যবধানে সব ধরনের ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়েছে। গতকাল পর্যন্ত বিগত এক বছরে চিনির দাম বেড়েছে ৫০ শতাংশের বেশি। খেজুরের দাম বেড়েছে ২০ শতাংশ। এক বছরের ব্যবধানে আদার দাম বেড়েছে ১২২ শতাংশের বেশি। আমদানিকৃত রসুনের দাম বেড়েছে প্রায় ৪৬ শতাংশ। ভোজ্য তেলের দাম বেড়েছে ৯ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত। মসুর ডালের দাম বেড়েছে ১৮ শতাংশের বেশি। ছোলার দাম বেড়েছে প্রায় ১৩ শতাংশ। শুকনা মরিচের দাম বেড়েছে ৯৩ শতাংশ। টিসিবির তথ্যমতে গতকাল প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হয়েছে ১১০ থেকে ১২০ টাকায়। খেজুর ১৫০ টাকা থেকে ৪৫০ টাকা। ছোট দানার মসুর ডাল ১৩০ টাকা কেজিতে। বোতলজাত ভোজ্য তেলের (সয়াবিন) লিটার বিক্রি হয়েছে ১৮০ থেকে ১৮৫ টাকায়। গত বছরের ২৪ জানুয়ারি দাম ছিল ১৫০ থেকে ১৬৫ টাকায়। এদিকে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির জন্য পাইকারি ব্যবসায়ীদের দায়ী করছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, যখন জিনিসপত্রের দাম বাড়ে তখন তারা এক ছটাকও সরবরাহ করতে পারেন না। আবার যখন দাম কমা শুরু করে তখন টন টন জিনিসপত্র দিতে পারবেন বলে আমাদের জানানো হয়। বাজারের এরকম একচেটিয়া ব্যবস্থা বন্ধ করতে পারলে তবেই দাম নিয়ন্ত্রণে থাকবে। এ বিষয়ে ভোক্তা অধিকার-সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, রমজান মাসে নিয়মিত বাজার তদারকি করা হবে। রমজানের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে বর্তমানে যে শুল্ক কাঠামো (ডিউটি স্টাকচার) আছে, তা যদি আমরা নতুন করে গঠন (রিস্টাকচার) করতে পারি নিঃসন্দেহে বাজারে একটা প্রভাব পড়বে। এ বিষয়ে তিনি আরও বলেন, আমরা একটি সুপারিশ পাঠাব বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে। সেখান থেকে আমাদের প্রস্তাবটি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সংশ্লিষ্ট বিভাগে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, দেশে প্রতি মাসে ভোজ্য তেলের চাহিদা থাকে দেড় লাখ মেট্রিক টন। কিন্তু রমজানে এই চাহিদা বেড়ে দাঁড়ায় ৩ লাখ মেট্রিক টনে। একইভাবে রমজানে চিনির মাসিক চাহিদা দেড় লাখ টন থেকে বেড়ে দাঁড়ায় ৩ লাখ মেট্রিক টনে। মসুর ডালের চাহিদা ৪০ হাজার মেট্রিক টন থেকে বেড়ে ১ লাখ টন, পিঁয়াজের চাহিদা ২ লাখ টন থেকে বেড়ে ৪ লাখ টন, ছোলার চাহিদা ১ লাখ টন এবং খেজুরের চাহিদা ৫ হাজার টন থেকে বেড়ে ৫০ হাজার টনে পৌঁছায়। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট সংকটের কারণে ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমদানিনির্ভর নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে। সয়াবিন ও পাম তেলের ওপর আরোপিত ভ্যাট অব্যাহতির মেয়াদ আগামী ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়িয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। স্থানীয় বাজারে ভোজ্য তেলের মূল্য ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে গত বছরের ১৪ মার্চ ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া শুরু করে এনবিআর। এরই ধারাবাহিকতায় এবার রমজানের আগেই নতুন করে ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা দেওয়া হতে পারে চিনি, খেজুর ও ছোলা আমদানিতে।


  • সম্পাদক ও প্রকাশক: ইঞ্জিনিয়ার মো: রায়হানুল ইসলাম

  • উপদেষ্টাঃ মোঃ ইব্রাহীম হায়দার