বাংলাদেশের জন্য রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের অন্তরে রয়েছে অফুরন্ত ভালোবাসা। তার সেই ভালোবাসার পথ ধরে বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে সম্পর্কের সোপান রচিত হয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রানির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। আশির দশকে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ বাংলাদেশ সফর করেন। তারপর সেই সূত্র ধরে একাধিক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সফর করেছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে তিনি বাংলাদেশের জনগণের জন্য শুভকামনা জানিয়েছেন।
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের সিংহাসনে আরোহণের প্লাটিনাম জুবিলি তথা ৭০ বছর উপলক্ষ্যে গোটা বিশ্বে ধুমধামের সঙ্গে উদ্যাপন চলছে। তার অংশ হিসাবে বাংলাদেশেও নানা আয়োজনে তা উদ্যাপন করছে ঢাকায় ব্রিটিশ হাইকমিশন। কমনওয়েলথের আওতায় রানি এলিজাবেথ বিশ্বের ১৫ দেশের রাষ্ট্রপ্রধান। দেশগুলো হলো-যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, নিউজিল্যান্ড, অ্যান্টিগুয়া অ্যান্ড বারবুডা, দ্য বাহামাস, বেলিজ, গ্রেনাডা, জ্যামাইকা, পাপুয়া নিউগিনি, সেন্ট লুসিয়া, সোলেমান দ্বীপপুঞ্জ, সেন্ট কাইটস অ্যান্ড নেভিস, সেন্ট ভিনসেন্ট অ্যান্ড গ্রেনাডিস। ব্রিটিশ ইতিহাসে তিনি সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী রানি।
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ ১৯৮৩ সালে বাংলাদেশ সফরের কথা এদেশে অনেকের মনে আছে। ওই বছর ১৪ থেকে ১৭ নভেম্বর তিনি বাংলাদেশ সফর করেন।
তিনি ট্রেনযোগে রাজধানী ঢাকা থেকে ৩৫ মাইল দক্ষিণে একটি মডেল গ্রামে গিয়ে মুড়ি ভাজা, লেপ-তোশক সেলাই এবং মাটির বাসন প্রস্তুতির মতো হস্তশিল্পের কাজ দেখেন। রানির ওই রাজকীয় সফরকালে ঢাকা বিমানবন্দর থেকে ১৮ মাইল সড়কের বিভিন্ন স্থানে ‘বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য বন্ধুত্ব দীর্ঘজীবী হোক’ লেখা রঙিন ব্যানার এবং বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের পতাকা শোভিত ছিল। সফরকালে রানি জাতীয় স্মৃতিসৌধে গিয়ে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের অমর শহিদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। রানি ও যুবরাজ ফিলিপ ঢাকায় ‘সেভ দ্য চিলড্রেন’ সেন্টার পরিদর্শন করেন। ওই সময়ের স্বাস্থ্য পরিচালক ড. সুলতানা খানম রানিকে সেখানে নিয়ে যান।
রানির বাংলাদেশ সফরের পর ব্রিটিশ রাজ পরিবারের আরও সদস্য প্রিন্স ওয়েলস, প্রিন্সেস ডায়না বাংলাদেশ সফর করেন। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হিসাবে বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ সফর করেন জন মেজর, টনি ব্লেয়ার, ডেভিড ক্যামেরন। তারা বাংলাদেশকে দারিদ্র্য ক্লিষ্ট, বন্যা ও ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ের ভাবমূর্তির দেশ থেকে ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য মডেল হিসাবে গড়ে তোলায় অনুপ্রেরণা জোগান। পরিবর্তনের এই পথে অনুপ্রেরণা দেওয়ার সোপান তা-ই রচনা করেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার আগেও ১৯৬১ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ বাংলাদেশ সফর করেছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে বাংলাদেশের জনগণকে দেওয়া শুভেচ্ছা বাণীতে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ বলেন, ‘আমাদের সম্পর্ক বন্ধুত্ব ও ভালোবাসার। এটা আমাদের সম্পর্কের ভিত্তি। ৫০ বছর আগে এটি রচিত হয়েছিল।’