বাংলাদেশ অ্যানালগ ও ডিজিটাল থেকে এখন স্মার্টের দিকে যাচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন স্মার্টভাবে করার পরিকল্পনা করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ উপলক্ষ্যে নতুন একটি স্মার্ট অ্যাপ বানাতে চায় সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। এই অ্যাপের মধ্যে প্রার্থী ও ভোটারের সব তথ্য থাকবে, সেখান থেকে মিলবে ভোটের সব তথ্য।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর ইত্তেফাককে বলেন, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুন্দর এবং সহজ করতে অনেক প্রযুক্তির সহায়তা নেওয়া হবে। এরই একটি হলো স্মার্ট অ্যাপ। এটি তৈরি করতে পারলে আমরা অনেক সুফল পাব। তিনি বলেন, অ্যাপে সব ভোটারের তথ্য থাকবে, ভোটার অ্যাপে ঢুকে জানতে পারবে সে কোন এলাকার ভোটার। কোন কেন্দ্রে এবং বুথে তার ভোট দিতে হবে। এছাড়া ভোটাররা তার কেন্দ্রে কোন পদে কতজন প্রার্থী, তাদের নাম ও প্রতীক এবং ছবিসহ সব প্রার্থীকে দেখতে পাবে।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি শুরু করেছে ইসি। এ নির্বাচন উপলক্ষ্যে নতুন দল নিবন্ধন, সংসদীয় আসনে সীমানাসহ নানা কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি। চলতি বছরের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে ভোটগ্রহণ করার পরিকল্পনা রয়েছে ইসির। এ লক্ষ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। সংবিধানের ৭২ (৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, সংসদের মেয়াদ প্রথম বৈঠকের দিন থেকে পাঁচ বছর। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়েছিল ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর। ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি চলমান সংসদের প্রথম বৈঠক বসে। সেই হিসাবে, আগামী বছরের (২০২৪ সালের) ২৯ জানুয়ারি বর্তমান সংসদের মেয়াদ শেষ হবে। সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে সংবিধানে বলা হয়েছে, ‘(ক) মেয়াদ-অবসানের কারণে সংসদ ভাংগিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাংগিয়া যাইবার পূর্ববর্তী নব্বই দিনের মধ্যে; এবং (খ) মেয়াদ-অবসান ব্যতীত অন্য কোন কারণে সংসদ ভাংগিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাংগিয়া যাইবার পরবর্তী নব্বই দিনের মধ্যে নির্বাচন হইবে।’ সংবিধান মোতাবেক এ বছরের ২৯ অক্টোবর থেকে আগামী বছরের ২৯ জানুয়ারির মধ্যে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন করার পরিকল্পনার কথা জানিয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, সেই মোতাবেক প্রস্তুতি চলছে।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, আগামী নির্বাচনের প্রার্থীরা চাইলে অনলাইনে মনোনয়ন জমা দিতে পারবেন। এজন্য অনলাইন মনোনয়ন ফাইলিং করার পরিকল্পনা রয়েছে ইসির। আগে ওয়েবসাইটে সব প্রার্থীর হলফনামা তথ্য থাকলেও সামনে তা থাকবে অ্যাপে। ফলাফল ঘোষণার সময় প্রার্থীরা অ্যাপে দেখতে পাবেন কোন কেন্দ্রে কত ভোট পেয়েছেন। এছাড়া কোন দল কত ভোট পেয়েছে সেটিও অ্যাপে দেখা যাবে। তবে এসব বিষয়ে কমিশন আলোচনা করছে, যাচাই-বাছাই চলছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে কমিশনের বৈঠকে। এজন্য ইসির সিস্টেম ম্যানেজার রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি টিম কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
এর আগে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহসান হাবিব খান বলেছেন, ‘আগামী দিনে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের শুধু অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার বিধান করতে চায় ইসি। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসাবে সারা বিশ্বে পরিচিত। এখন স্কুলকলেজ থেকে শুরু করে সবকিছুর আবেদনই অনলাইনে জমা দেওয়া হচ্ছে। অনলাইনে সাবমিশন স্বচ্ছতা ও সঠিকতার বহিঃপ্রকাশ।’ জনপ্রতিনিধিরা শোডাউন ও স্লোগান দিয়ে মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময় প্রথম দিনে আচরণবিধি লঙ্ঘন করেন উল্লেখ করে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, অভিযোগ আছে, যারা মনোনয়ন জমা দিতে যান, তাদের কেউ কেউ বাধাগ্রস্ত হন। কোথাও কোথাও একক প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন।
আহসান হাবিব বলেন, এই চিন্তা-ভাবনা কীভাবে বাস্তবায়ন করব এ জন্য ইসির আইসিটি অনুবিভাগ একটি প্রেজেন্টেশন দিয়েছে। মনোনয়ন জমায় যেন অসুবিধা না হয় সেটি বিবেচনা করা হচ্ছে। আহসান হাবিব বলেন, প্রথমে এটির পাইলট প্রকল্প নেওয়া হবে। চ্যালেঞ্জ কী ধরনের তা দেখা হবে। ছোট ছোট নির্বাচন পাইলট হিসেবে শুরু করা হবে। প্রথমে ইউনিয়ন পরিষদ, তারপর উপজেলা, সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও তা ব্যবহার করা হবে। এগুলোতে সফল হলে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও অনলাইনে মনোনয়ন জমা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।