শিক্ষার ক্ষতি পোষাতে ৮ হাজার কোটি টাকা


, আপডেট করা হয়েছে : 26-02-2023

শিক্ষার ক্ষতি পোষাতে ৮ হাজার কোটি টাকা

করোনা মহামারির কারণে শিক্ষার ক্ষতি পোষাতে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ৭ হাজার ৬৮৭ কোটি ২৯ লাখ টাকার প্রকল্প হাতে নিচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ‘লার্নিং এক্সিলারেশন ইন সেকেন্ডারি এডুকেশন’ নামে এ প্রকল্প চলতি বছরের জুলাই থেকে ২০২৮ সালের জুন পর্যন্ত বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে সিংহভাগ অর্থ ঋণ হিসেবে নেওয়া হবে বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে। ৭ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা ঋণ দেবে সংস্থাটি। এ প্রকল্পে উচ্চবেতনে নিয়োগ দেওয়া হবে চার বিদেশি ও ১৩ দেশি পরামর্শক। তাদের বেতন বাবদই ধরা হয়েছে ৫৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা। এ প্রকল্পের আওতায় গাড়ি কেনা হবে চারটি। শুধু ভ্রমণ বাবদই ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫ কোটি টাকা। বিভিন্ন দফতরে ইন্টেরিয়র ডিজাইন বাবদ ব্যয় ধরা হয়েছে সাড়ে ১৩ কোটি টাকা। এ ছাড়া প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পারফরম্যান্স বেজড্ গ্রান্টস/ইনসেনটিভ বাবদ প্রায় ১ হাজার ২৪৭ কোটি ৬০ লাখ টাকা সংস্থানের প্রস্তাব করা হয়েছে। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সভাকক্ষে লার্নিং এক্সিলারেশন ইন সেকেন্ডারি এডুকেশন প্রকল্পের যাচাই কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব সোলেমান খান। প্রকল্পসূত্র জানান, করোনা মহামারির কারণে তৈরি হওয়া শিখন ঘাটতি পুনরুদ্ধার, শিখন ত্বরান্বিত করা, শিক্ষা থেকে ঝরে যাওয়া শিক্ষার্থীদের মূলধারায় ফিরিয়ে আনা, শিক্ষকদের কার্যকারিতা বাড়ানো, শিক্ষার প্রধান প্রধান ক্ষেত্র শক্তিশালী করা, শিক্ষা সংস্কারে সহায়তা করা ছাড়াও বিভিন্ন প্রকল্পের পদক্ষেপকে স্কেলআপ করা হবে এ প্রকল্পের মাধ্যমে। প্রকল্পটির মূল অংশীজন হিসেবে রয়েছে মাধ্যমিক পর্যায়ের সাধারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও মাদরাসা। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম সৃজন, অতিরিক্ত শিক্ষকদের মাধ্যমে অতিরিক্ত ক্লাস পরিচালনা, পাঠাভ্যাস উন্নয়ন, শিক্ষাসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে সক্ষমতা বৃদ্ধি, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র কেনাকাটা, অফিস সরঞ্জামাদি কেনা, শিক্ষা উপকরণ সরবরাহও প্রকল্পের আওতায় রাখা হয়েছে। প্রকল্পের উপযোগিতা হিসেবে সভায় অংশ নিয়ে বক্তারা বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বাংলাদেশ শিক্ষা ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করলেও কভিড ১৯ মহামারিসহ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এ অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী দ্রুত বিকশিত (ট্রান্সফরমেটিভ) শিক্ষার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে শিক্ষার ক্ষতি পুনরুদ্ধারের পাশাপাশি আইসিটির বিকাশ প্রয়োজন। জানা গেছে, এ প্রকল্পের পরিচালক তৃতীয় গ্রেডে বেতন পাবেন। প্রকল্পের উপপরিচালকসহ বিভিন্ন ক্যাটাগরির ৩০-৩৩ পদে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের প্রেষণে নিয়োগের প্রস্তাব করা হয়েছে।

এ প্রকল্পের আওতায় প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুটি করে মোট ২০ হাজার ৫৩৯টি মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম সৃজনের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পটির লক্ষ্য-উদ্দেশ্য যথাযথভাবে অর্জনের জন্য মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি করার মত দেওয়া হয়। প্রকল্পের আওতায় দেশে ও দেশের বাইরে মোট ৬ লাখ ৯১ হাজার ৭৭৯ জন প্রশিক্ষণার্থীর জন্য ২ হাজার ৮৫১ কোটি ২৮ লাখ টাকার সংস্থানের প্রস্তাব করা হয়। প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষণার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে প্রকল্পের লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তাদের অগ্রাধিকার দেওয়ার বিষয়ে সভায় মত দেন উপস্থিতরা। প্রকল্পের আওতায় শিক্ষার্থীদের লার্নিং লস পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গণিত, বিজ্ঞান ও ইংরেজি বিষয়ে অতিরিক্ত ক্লাস নেওয়ার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। অতিরিক্ত ক্লাসের জন্য প্রকল্পের আওতায় ৯ হাজার ৬০০ অতিরিক্ত শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার প্রয়োজন হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে অবসরপ্রাপ্ত আগ্রহী শিক্ষকদের এ ক্ষেত্রে নিয়োগ দিতে উপস্থিতরা সভায় একমত হন।

প্রকল্পের আওতায় চারটি গাড়ি কেনার সংস্থান করা হয়েছে। এ ছাড়া গাড়ি ভাড়া বাবদ আরও ৩ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। সভায় উপস্থিতরা অতিরিক্ত এ ৩ কোটি টাকা অযৌক্তিক উল্লেখ করে বরাদ্দের বিষয়টি থেকে বাদ দেওয়ার বিষয়ে মত দেন। এ ছাড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর, এনসিটিবি, পিআইইউ, নায়েম, বিআইএসই, বিইডিইউ, টিটিসি, জোনাল অফিস, জেলা অফিস, উপজেলা অফিসসহ অন্যান্য দফতরের আসবাবপত্র কেনা বাবদ ১১ কোটি ৫৭ লাখ টাকা সংস্থানের প্রস্তাব করা হয়েছে। বিভিন্ন দফতর ইন্টেরিয়র ডিজাইন বাবদ রাখা হয়েছে ১৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এ ছাড়া ইন্টারনেট সংযোগ, ভ্রমণ, দিবস পালন, পাঠাভ্যাস উন্নয়ন, গবেষণা বাবদ রাখা হয়েছে ৮৩৮ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে শুধু ভ্রমণ বাবদ রাখা হয়েছে ১৫ কোটি টাকা।

 

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ এ প্রকল্প সম্পর্কে গতকাল এই প্রতিবেদককে বলেন, প্রকল্পে লার্নিং লস পুনরুদ্ধারের পাশাপাশি বেশ কিছু বিষয় রাখা হয়েছে। শিক্ষায় সবচেয়ে সংকট হলো প্রশিক্ষণের। শিক্ষকদের কাছ থেকে সবাই অনেক বেশি প্রত্যাশা করেন। কিন্তু তাদের প্রশিক্ষণের তেমন কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি। অথচ প্রশিক্ষণের মাধ্যমেই একজন যোগ্য শিক্ষক হিসেবে গড়ে ওঠেন। তাই শিক্ষকদের প্রশিক্ষণে এ প্রকল্পে বেশি জোর দেওয়া হবে। প্রকল্প ব্যয় উচ্চাভিলাষী কি না- এমন প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে মহাপরিচালক বলেন, একটি বিষয় হচ্ছে বেশ কিছু ডলার আমাদের দেশে আসবে। তা ছাড়া ঋণের পাশাপাশি কিছু অনুদানও রয়েছে এ প্রকল্পে। তা ছাড়া প্রকল্পের আওতায় ৮ লাখ শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া ভাবনায় রয়েছে। জাতির স্বার্থে শিক্ষার জন্য এ অর্থায়ন করতে হবে আমাদের।


  • সম্পাদক ও প্রকাশক: ইঞ্জিনিয়ার মো: রায়হানুল ইসলাম

  • উপদেষ্টাঃ মোঃ ইব্রাহীম হায়দার