শিক্ষার্থীরা আন্দোলন স্থগিত করায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনদিন পর স্বাভাবিক হয়েছে শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম।
সাত দফা দাবি বাস্তবায়নে উপাচার্যের আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন প্রত্যাহার করায় স্বস্তি ফিরলেও ক্যাম্পাস এখনো থমথমে। এ পরিস্থিতিতেই মঙ্গলবার সকাল থেকে শুরু হয়েছে সকল ক্লাস ও পরীক্ষা। খুলে দেয়া হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়ক। রাত থেকে এ মহাসড়কে যান চলাচল শুরু হয়।
ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা গেছে, সকাল থেকেই ক্যাম্পাসের সব দোকানপাট খুলতে শুরু করে। টুকিটাকি চত্বর, পরিবহন চত্বরের দোকানগুলোয় ফিরেছে শিক্ষার্থীদের কোলাহল। চায়ের দোকানগুলোতেও শুরু হয় আড্ডা। ক্লাসে ফিরছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসগুলো সকালে নির্ধারিত সময়ে ছেড়ে গিয়ে নগরীর বিভিন্ন জায়গা থেকে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের নিয়ে আসছে।
এদিকে, ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে স্বাভাবিক হয়েছে যান চলাচল। সকাল সাতটা থেকে চলছে বাস-ট্রাকের মতো বড় যান। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক ও বিনোদপুর গেটের সামনে পুলিশের অবস্থান দেখা গেছে। গতকাল সোমবার রাতে বিনোদপুর ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছিল। তবে সকালে সেটি খুলে দেওয়া হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক দূর করতে আজ থেকে ক্লাস-পরীক্ষা শুরু হয়েছে। ক্যাম্পাস স্বাভাবিক করতে তাঁরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন। শিক্ষার্থীদের দাবি নিয়ে ছাত্রসংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসা হবে।
গত শনিবার বগুড়া থেকে বাসে করে রাজশাহী আসছিলেন রাবির সমাজবিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষার্থী। সিটে বসাকে কেন্দ্র করে এক ব্যক্তির সঙ্গে বাগবিতণ্ডার জেরে স্থানীয়দের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত দফায় দফায় সংঘর্ষে দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। যাদের মধ্যে ৯০ জন ছাত্রকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। এদের মধ্যে তিনজনকে উন্নত ঢাকায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে চিকিৎসকরা।
এ ঘটনার জেরে রোববার দিনভর বিক্ষোভ উত্তাল ছিল ক্যাম্পাস। এর অংশ হিসেবে রোববার রাতে রেললাইনে আগুন জ্বালিয়ে রেল যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়। রাত ১২টার দিকে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে শিক্ষার্থীরা সরে গেলে রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক হয়।
এ সব ঘটনায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, পুলিশ ও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে তিনিটি মামলা করা হয়। নগরীর মতিহার থানা ও রাজশাহী জিআরপি থানায় এ সব মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মামলায় আসামী করা হয় ৫০০ জনকে। আর পুলিশ ও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের মামলায় আসামী করা হয়েছে ৩০০ জন করে। এ ছাড়া ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের কমিটি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।