‘এভাবে দাম বাড়তে থাকলে পথে পথে ভিক্ষা করতে হবে’


, আপডেট করা হয়েছে : 23-03-2023

‘এভাবে দাম বাড়তে থাকলে পথে পথে ভিক্ষা করতে হবে’

রাজধানীর বসন্ধুরা এলাকার জোয়ারসাহারা কাঁচা বাজারে বৃহস্পতিবার বাজার করতে এসেছিলেন সরকারি অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম। বর্তমান বাজার পরিস্থিতি বিষয়ে জানতে চাইলে যুগান্তরকে বলেন, কী আর বলব, যেটাতেই হাত দেই সেটারই দাম বেড়েছে। অল্প কিছু টাকা মাইনে পাই, সেটা দিয়ে কোনোভাবে বেঁচে থাকি। যেভাবে বাজারের দাম ঊর্ধ্বগতি এভাবে বাড়তে থাকলে পথে পথে ভিক্ষা করতে হবে মনে হয়।  

শুধু নজরুল ইসলাম নয়, বাজার করতে আসা অসংখ্যা ব্যক্তি জানিয়েছেন, কয়েক মাস ধরে গরু ও খাসির মাংস ছোঁয়াই যাচ্ছে না, এমতাবস্থায় মুরগির মাংস দিয়ে প্রোটিনের স্বাদ নেওয়ার চেষ্টা করছিলাম। শুধু আমি নই, মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষও।

মুরগির দাম বাড়তে বাড়তে রমজান সামনে রেখে রেকর্ড গড়েছে। দেশের ইতিহাসে এতো দামে মুরগি বিক্রির নজির নেই। শুধু তাই নয়, মাছের দামও নাগালের বাইরে চলে গেছে। সবজির বাজারেও আগুন। মাংসের পর সবজি ও মাছের এ অসহীয় মূল্যে নাজেহাল নিম্ন আয়ের মানুষ।

রাজধানীর বসন্ধুরা এলাকার জোয়ারসাহারা মাংসবাজার ঘুরে দেখা গেছে, সোনালি মুরগি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৭০ টাকা, অথচ কয়েক দিন আগেও ছিল ২৭০ টাকা। ব্রয়লার ২৭০ টাকা বিক্রি হচ্ছে, যা কয়েক দিন আগে ছিল ২৪০-২৫০ টাকা কেজি। গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকা, যা কয়েক দিন আগে ছিল ৭০০ টাকা। খাসির মাংস ১ হাজার ২৫০ টাকা, যা আগে ছিল ১ হাজার টাকা।   

মাছের বাজার গিয়ে দেখা গেছে, মাঝারি আকৃতির রুই মাছ প্রতি কেজি ৩৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে; অথচ কয়েক দিন আগেও ছিল ২৬০ টাকা। জাপানি মাছ প্রতি কেজি ২৩০ টাকা, যা আগে ছিল ১৯০ টাকা। মৃগেল মাছ ২৫০ টাকা, যা আগে ছিল ২১০ টাকা। কই মাছ কেজি প্রতি ৩০০ টাকা, যা আগে ছিল ২১০ টাকা। মাঝারি গলদা চিংড়ি মাছ ৬০০ টাকা, যা আগে ছিল ৫৫০ টাকা।

তেলাপিয়া প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকা, যা আগে ছিল ১৮০ টাকা। গরিবের মাছ বলে পরিচিত পাঙাশও বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকা কেজি, যা আগে ছিল ১৮০ টাকা। পাবদা বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকায় যা আগে ছিল ৪০০ টাকা।

সুরমা মাছ বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকা, যা আগে ছিল ২০০ টাকা। অন্যদিকে দেশি কই মাছ প্রতি কেজি ৬০০ টাকা, যা আগে ছিল ৪০০ টাকা।  চিংড়ি প্রতি কেজি ৮০০ টাকা, যা আগে ছিল ৬০০ টাকা। শোল মাছ প্রতি কেজি ৬০০ টাকা, যা আগে ছিল ৫০০ টাকা। ট্যাংরা প্রতি কেজি ৫০০ টাকা, যা আগে ছিল ৩৫০ টাকা। 
এদিকে শুধু মাছ ও মাংসের দাম বাড়েনি। পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ডিমের দামও। বর্তমানে প্রতি হালি ডিম বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা, যা কয়েক দিন আগেও ছিল ৪০ টাকা।
মুরগির দাম বাড়ার বিষয়ে ব্যবসায়ী সুলাইমান ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, রমজান উপলক্ষ্যে মানুষ অতিরিক্ত মাংস কিনে ফ্রিজে রাখার চেষ্টা করছে। এ জন্য মুরগির প্রচুর চাহিদা।

এ ছাড়া সব কিছু দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় মুরগির ফিডেরও দাম বেড়েছে। ফলে খামারিদের মুরগির খরচ বৃদ্ধি হওয়ায় পাইকারি দামও বেড়েছে। ফলে বাজারে বিক্রেতারাও বেশি দামে বিক্রি করছে।  
মাছের দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে মাছ ব্যবসায়ী আল আমিন যুগান্তরকে বলেন, মাছের ফিডের (খাবার) দাম বাড়ার পর থেকে মাছের দাম বেড়ে গেছে। ফিডের দাম বাড়ায় মাছচাষিদের অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে। ফলে ব্যবসায়ীদের কাছ বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। বেশি দামে ক্রয় করার ফলে ব্যবসায়ীদেরও বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।  
অন্যদিকে শীতের শেষের দিক থেকেই বাড়তি দামে সব ধরনের সবজি বিক্রি শুরু হয়েছে। তবে রমজান উপলক্ষ্যে কয়েক দিন থেকে আরও বেড়েছে সব সবজির দাম। রমজানকে ঘিরে বেশি দাম বেড়েছে শসা, ক্ষিরা, লেবু, মরিচ, গাজর পেঁয়াজে। কোনো সবজিই এখন ৫০-৬০ টাকার কমে পাওয়া যাচ্ছে না।

বসুন্ধরা এলাকার জোহার সাহারা কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, পটল প্রতি কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, টমেটো প্রতি কেজি ৪০ টাকা; অথচ কয়েক দিন আগে ছিল ৩০ টাকা, শসা প্রতি কেজি ৮০ টাকা; অথচ কয়েক দিন আগেই ছিল ৬০ টাকা, বেগুন প্রতি কেজি ১০০ টাকা, যা আগে ছিল ৮০ টাকা, বরবটি প্রতি কেজি ৮০ টাকা,

সিম প্রতি কেজি ৬০ টাকা, যা আগে ছিল ৩০ টাকা, লেবু প্রতি হালি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা অথচ কয়েক দিন আগে ছিল ২০-৩০ টাকা, মুলা বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা, যা আগে ছিল ৪০ টাকা, পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৪৫ টাকা, যা আগে ছিল ৩০ টাকা, আদা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা, যা আগে ছিল ১০০ টাকা।
এ ছাড়া পেঁপে প্রতি কেজি ৪০ টাকা, যা আগে ছিল ৩০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া প্রতি কেজি ৪০ টাকা, মুলা প্রতি কেজি ৫০ টাকা, যা আগে ছিল ৪০ টাকা, ফুলকপি প্রতি পিস ৫০ টাকা, গাজর প্রতি কেজি ৬০ টাকা যা আগে ছিল ৪০ টাকা এবং কাঁচাকলা প্রতি হালি ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছ। 

শুধু সবজি বাজারে নয়, ফল বাজার অধিকাংশই ফলেরও দাম বেড়েছে। বিশেষ করে রমজান উপলক্ষ্যে দাবাস খেজুর ৩০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে অথচ কয়েক দিন আগে ২৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছিল। মরিয়ম খেজুর ১২০০ টাকা, যা আগে ছিল ১ হাজার টাকা। আজোয়া খেজুর প্রতি কেজি ৯০০ টাকা, যা আগে বিক্রি হতো ৭০০ টাকা, আপেল ৩২০ টাকা, যা আগে ছিল ২০০ টাকা, কমলা ২৪০ টাকা, যা আগে ছিল ২০০ টাকা। 
এদিকে ঊর্ধ্বগতির বাজারে কয়েকটি সবজির দাম বৃদ্ধি পায়নি। লাউ প্রতি পিস বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা, ঢেঁড়স বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা।

ইউনাইটেড হাসপাতালে চাকরি করেন ড্যানিয়েল। মাছ বাজারে তার সঙ্গে কথা হয়। তিনি যুগান্তরকে জানান, আমাদের দুঃখ দেখার মানুষ নেই। আমরা যে বেতনে চাকরি করি এতে মাংসের দোকানে যাওয়া তো সম্ভব না। যেভাবে মাছের দাম বাড়ছে মাছের বাজারেও আসা কঠিন হয়ে যাবে। সবজি বাজারের কথা আর না বলি । সেখানেও আগুন। 

সবজি বাজারে গিয়ে কথা হয় নাট্যকর্মী মোজাক্কির আলমের সঙ্গে। তিনি জানান, মানুষ কোন কিছু কিনতে না পারলে সবজি দিয়ে ভাত খেয়ে দিন পার করার চেষ্টা করে। কিন্তু বর্তমানে যে হারে সবজির দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে সেটা নিম্ন আয়ের মানুষ ক্রয় করতে অক্ষম হবেন।


  • সম্পাদক ও প্রকাশক: ইঞ্জিনিয়ার মো: রায়হানুল ইসলাম

  • উপদেষ্টাঃ মোঃ ইব্রাহীম হায়দার