নওগাঁয় পূর্বশত্রুতার জের ধরে ছেলেকে অস্ত্র দিয়ে ফাঁসানোর অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করেছেন শেফালী বেগম নামে এক মা। তিনি নওগাঁ শহরের কোমাইগাড়ী দেওয়ান পাড়া মহল্লার আজগর আলী দেওয়ানের স্ত্রী। বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় শহরের বালুডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ডের একটি ভবনে সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে শেফালী বেগম বলেন, আমার ছেলে সোহেল রানা শামীম একজন বস্ত্র ও প্লট ব্যবসায়ি। একই মহল্লার আব্দুল জলিলের ছেলে আব্দুল মালেকের সাথে পাওনা টাকা ও জমি নিয়ে বেশকিছুদিন থেকে বিরোধ চলে আসছিল।
আব্দুল মালেক জমিটি নিয়ে আপোষ-মীমাংসার জন্য ছেলের মোবাইলে একাধিকবার ফোন দিলেও রিসিভ করেনি। পরে আমার মোবাইলে ফোন করলে আপোষ-মীমাংসার জন্য গত ১৯ মার্চ রবিবার তাকে আমার বাসায় আসতে বলি। সেদিন রাত প্রায় ৭টা ৪৫ মিনিটের দিকে সে আমার বাসায় আসে। তখন ছেলে বাসায় ছিলোনা। এক পর্যায়ে সে পানি খেতে চাইলে ছেলের বউ সামিয়া দোকানে নাস্তা নিতে যায়। আর আমি পানি নিয়ে আসতে যাই। এসময় এক ব্যক্তি তার মেয়ের বিয়ের জন্য সাহায্য নিতে আসলে তাকে ৫০ টাকা দিয়ে বিদায় করা হয়। এ সুযোগে আব্দুল মালেক তড়িঘড়ি করে ঘরে চলে যায়। সে আমার ও অন্য একটি ঘর ঘুরে দেখে কিন্তু ছেলের ঘরে যায়নি। আমার ঘরে বসে বিভিন্ন কথা বলার এক পর্যায়ে তর্কবিতর্ক হলে উল্টোপাল্টা কথা বলে সে হুমকি দিয়ে বেরিয়ে যায়। সে প্রায় দেড় থেকে ২ ঘন্টার মতো আমাদের বাসায় ছিলো। আব্দুল মালেক বেরিয়ে যাওয়ার কিছু পরই ছেলে বাসায় আসে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ছেলে বাসায় আসার কিছুক্ষন পরই র্যাব-৫ জয়পুরহাট ক্যাম্প কোম্পানীর অধিনায়ক মেজর মোস্তফা জামান এবং স্কোয়াড কমান্ডার সিনিয়র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ রানার নেতৃত্বে র্যাব সদস্যরা বাসায় এসে ঘরে তল্লাসি শুরু করে। এরপর আমার ঘরের আলমারির একটি ডয়ার থেকে অস্ত্র উদ্ধারসহ ছেলেকে আটক করা হয়। ঘটনাটি আব্দুল মালেকের সম্পন্ন সাজানো নাটক ছিল। আপোষ-মীমাংসার নামে আমাদের বাসায় এসে পানি খাওয়ার নামে সবাইকে ব্যস্ত রেখে অস্ত্র রাখা ছিল তার সাজানো নাটক। মূলত জমিখেকোরা জমিটি গ্রাস করার কৌঁসলে অস্ত্র রেখে আমার ছেলেকে ফাঁসানো হয়েছে। সুষ্ঠু তদন্ত করে ছেলের মুক্তিসহ দোষীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার দাবী জানান তিনি। এসময় সোহেল রানা শামীম এর স্ত্রী সামিয়া এবং তার দুই বোন শ্যামলি ও শ্রাবনি উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে আব্দুল মালেক বলেন, গত প্রায় এক বছর আগে সোহেল রানা শামীম আমাকে অন্যায় ভাবে মারপিট করেছিল। তারপর থেকে পঙ্গুত্ব জীবন যাপন করছি। ক্রাচে ভর দিয়ে হাঁটতে হচ্ছে। ঘটনায় তার বিরুদ্ধে মামলা করেছি। মামলাটি তুলে নিয়ে আপোষ করতে বারং বার শামীম আমাকে ফোন দিতো। পরবর্তীতে ফোনে তার মায়ের (শেফালী বেগম) সাথে কথা হলে বাসায় যেতে বলে। ওইদিন তাদের বাসার দরজায় দাঁড়িয়ে ১০ মিনিটের মতো কথা বলে চলে আসি। আমার বিরুদ্ধে তাদের বাসায় প্রবেশ করে অস্ত্র রাখার যে অভিযোগ করা হচ্ছে তা ভিত্তিহীন এবং মিথ্যা। বিষয়টি জানতে চেয়ে র্যাবের স্কোয়াড কমান্ডার সিনিয়র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ রানার মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
নওগাঁ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি ) ফয়সাল বিন আহসান বলেন, দেশীয় তৈরি দুইটি আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদসহ সোহেল রানা শামীম নামে এক যুবককে গ্রেফতার করেছিল র্যাব। আটকের পর থানায় অস্ত্র আইন-১৮৭৮ অনুসারে মামলা করা হয়। এর পর ২০মার্চ সোমবার আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।#