কৌশলগত সম্পর্ক গড়তে প্রধানমন্ত্রীর জাপান সফর শুরু


, আপডেট করা হয়েছে : 26-04-2023

কৌশলগত সম্পর্ক গড়তে প্রধানমন্ত্রীর জাপান সফর শুরু

২০১৬ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিংয়ের বাংলাদেশ সফরে দুই দেশের সম্পর্ক ‘কৌশলগত’ মাত্রায় উন্নীত করার ঘোষণা এসেছিল। পরের বছর ২০১৭ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক কৌশলগত মাত্রাকেও ছাড়িয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল দুই পক্ষ। প্রধানমন্ত্রী এবার  জাপানে গেছেন দেশটির সঙ্গে সম্পর্ককে কৌশলগত পর্যায়ে উন্নীত করার লক্ষ্য নিয়ে। আজ বুধবার বিকেলে জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আনুষ্ঠানিক বৈঠকে এ বিষয়ে অগ্রগতি হতে পারে। সম্পর্ককে কৌশলগত মাত্রায় রূপ দেওয়ার লক্ষ্যের কথা স্থান পেতে পারে দুই দেশের যৌথ ঘোষণায়ও।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, দূরপ্রাচ্যে অবস্থান হলেও পশ্চিমা ধারার গণতন্ত্রের জন্য অনেকে জাপানকে পশ্চিমা দেশ বলে। আবার অনেকে জাপানকে ‘পশ্চিমঘেঁষা’ বলেও অভিহিত করে। তাই পশ্চিমা বা পশ্চিমঘেঁষা জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক কৌশলগত মাত্রায় উন্নীত হলে তাতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ সম্পর্কে জোরালো বার্তা যাবে। 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান সফরের আগমুহূর্তে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, বাংলাদেশ-জাপান কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালের ১৮ থেকে ২৪ অক্টোবর জাপান সফর করেন। সেই সফরে দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ভিত্তি রচিত হয়। জাতির পিতার পররাষ্ট্রনীতির ধারাবাহিকতায় ২০১৪ সালের মে মাসে প্রধানমন্ত্রীর জাপান সফরে বাংলাদেশ-জাপান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ‘সার্বিক অংশীদারিতে’ উন্নীত হয়। এটিই বর্তমান বাংলাদেশ-জাপান বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতার ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, গত বছরের ১০ জানুয়ারি দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণ জয়ন্তীর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক নিকট ভবিষ্যতে নতুন উচ্চতায় বা কৌশলগত অংশীদারিতে উন্নীত করার অঙ্গীকার করেছিলেন।

মোমেন বলেন, বাংলাদেশ ও জাপানের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের আগামীর রূপরেখা প্রণয়নকল্পে বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণের পাশাপাশি কৃষি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, সুনীল অর্থনীতি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, তথ্য-প্রযুক্তি, মানবসম্পদ উন্নয়ন, নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা, কর্মসংস্থান ও জনযোগাযোগ ইত্যাদি ক্ষেত্রে নতুনভাবে সহযোগিতা স্থাপনের মধ্য দিয়ে দুই দেশেই লাভবান হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তাই এ সফর দুই দেশের সম্পর্ক কৌশলগত অংশীদারিতে উন্নীত হওয়ার বিষয়ে আরো গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনার সুযোগ সৃষ্টি করবে।

শেখ হাসিনাকে জাপানে লাল গালিচা সংবর্ধনা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর বোন রেহানাসহ সফরসঙ্গীরা গতকাল সকাল ৮টার দিকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ভিভিআইপি ফ্লাইটে জাপানের উদ্দেশে রওনা হন। বার্তা সংস্থা বাসস জানায়, ওই ফ্লাইট দুপুর পৌনে ২টায় টোকিওর হানেদা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী এ সফর করছেন।

টোকিওর হানেদা বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লাল গালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয়। জাপানের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ইয়ামাদা কেনজি ও জাপানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সাহাবুদ্দিন আহমেদ প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানান। বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে ‘গার্ড অব অনার’ প্রদান করা হয়।

বিমানবন্দর থেকে আনুষ্ঠানিক মোটর শোভাযাত্রাসহকারে প্রধানমন্ত্রীকে আকাসাকা প্রাসাদে নিয়ে যাওয়া হয়। জাপান সফরকালে প্রধানমন্ত্রী টোকিওর এই প্রাসাদেই অবস্থান করবেন।

সফরসূচি অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী আজ জাপানের সম্রাট নারুহিতোর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। এ ছাড়া বাংলাদেশ ও জাপানের প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দুই দেশের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। ওই বৈঠক শেষে কৃষি, মেট্রো রেল, শিল্প উন্নয়ন, জাহাজ রিসাইক্লিং, শুল্কসংক্রান্ত বিষয়, মেধাস্বত্ব, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, আইসিটি ও সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ে আটটি সহযোগিতা চুক্তি বা স্মারক স্বাক্ষরিত হতে পারে।

জাপান সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য চার জাপানি নাগরিককে ‘বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা’ প্রদান করবেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীকাল বৃহস্পতিবার টোকিওতে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি এবং জেট্রোর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘বাংলাদেশ বিজনেস সামিটে’ প্রধান অতিথি হিসেবে ভাষণ দেবেন। এ ছাড়া তিনি জাপানে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশি ও কমিউনিটি আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।

টোকিওতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়োশিমাসা হায়াশি, জাইকা, জেইটিআরও, জেইইআইসি, জেবিপিএফএল, জেবিসিসিইসির শীর্ষ প্রতিনিধিরা বৈঠক করবেন। জাপানের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের সহধর্মিণী আকি আবে ও জাপানি স্থপতি তাদাও আন্দোর সঙ্গেও প্রধানমন্ত্রী দেখা করবেন।

এ ছাড়া জাপানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেল এনএইচকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি সাক্ষাৎকার সম্প্রচার করবে।

প্রধানমন্ত্রী টোকিও থেকে আগামী শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে যাবেন। তিনি আগামী ১ মে বিশ্বব্যাংক সদর দপ্তরে বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাংকের মধ্যে ৫০ বছরের অংশীদারি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৪ মে যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনের উদ্দেশে রওনা হবেন। তিনি লন্ডনে ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লস ও তাঁর স্ত্রী ক্যামিলার রাজ্যাভিষেকে যোগ দেবেন। প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাজ্য সফর শেষ আগামী ৯ মে ঢাকায় পৌঁছবেন।


  • সম্পাদক ও প্রকাশক: ইঞ্জিনিয়ার মো: রায়হানুল ইসলাম

  • উপদেষ্টাঃ মোঃ ইব্রাহীম হায়দার