জুলাইয়ে আখাউড়া-আগরতলা রেলপথে চলবে ট্রেন


, আপডেট করা হয়েছে : 07-06-2023

জুলাইয়ে আখাউড়া-আগরতলা রেলপথে চলবে ট্রেন

আগামী জুলাই মাসে শেষ হচ্ছে বহুল প্রত্যাশিত আখাউড়া-আগরতলা ডুয়েল গেজ রেলপথের নির্মাণকাজ। জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে পরীক্ষামূলকভাবে এই পথে ট্রেন চলাচল শুরু হবে। এরপর দুই দেশের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, রেলপথ উদ্বোধনের দিনক্ষণ নির্ধারণ করা হবে। উদ্বোধনের দিন থেকেই আখাউড়া-আগরতলা রেলপথে আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রেন চলাচল শুরু হবে।


সোমবার (০৫ জুন) দুপুরে আখাউড়ায় রেলপথ প্রকল্প এলাকা ঘুরে এসব কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশ রেলপথ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এ সময় ভারতীয় রেলপথ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও ছিলেন। বাংলাদেশের ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন ও পরিকল্পনা) মো. ইয়াসীন। ১৪ সদস্যের ভারতীয় প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন বিভাগের যুগ্ম সচিব সতীশ সিভান।


বাংলাদেশ রেলপথ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আখাউড়া-আগরতলা রেলপথ দুই দেশের (বাংলাদেশ-ভারত) জন্য গুরুত্বপূর্ণ। রেলপথটি চালু হলে ভারত-বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতিতে নতুন দিগন্তের সূচনা হবে।


আখাউড়া-আগরতলা রেলপথ-২জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে পরীক্ষামূলকভাবে এই পথে ট্রেন চলাচল শুরু হবে


নির্মাণকাজের সর্বশেষ অবস্থা দেখে আখাউড়া-আগরতলা ডুয়েল গেজ রেলপথ প্রকল্পের পরিচালক (বাংলাদেশ অংশ) মো. আবু জাফর মিয়া বলেন, ‘দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান হচ্ছে দ্রুত। আগামী জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে আখাউড়া-আগরতলা রেলপথে পরীক্ষামূলকভাবে চলবে আন্তর্জাতিক ট্রেন।’


শিগগিরই আখাউড়া-আগরতলা রেলপথ খুলে দেওয়া হবে বলে জানালেন বাংলাদেশ রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. ইয়াসীন। তিনি বলেন, ‘এই রেলপথ দ্রুত চালু করার জন্য ভারতীয় কর্মকর্তা ও আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এখনও কাজের কিছু অংশ বাকি আছে। আগামী জুলাই মাসে সব কাজ শেষ হবে। এরপর দ্রুত চালু করে দেবো এই রেলপথ। এই পথে ট্রেন চলাচল শুরু হলে ভারতের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ ও ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারিত হবে।’


প্রকল্পের কাজের শুরু থেকে এর সঙ্গে যুক্ত আছেন বলে উল্লেখ করেছেন বাংলাদেশ রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অবকাঠামো) মো. শহীদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের যে সাতটি প্রদেশ রয়েছে, সেগুলোর সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গে যেতে প্রায় সাড়ে ১৪০০ কিলোমিটার ঘুরতে হয়। এই রেলপথ চালু হলে ত্রিপুরা থেকে কলকাতার পথ অন্তত সাড়ে ৯০০ কিলোমিটার কমবে। সেইসঙ্গে ভারতের সাতটি প্রদেশ যুক্ত হলে চট্টগ্রাম ও মাতারবাড়ী বন্দরের বাণিজ্যিক যোগাযোগ প্রসারিত হবে। পণ্য আমদানি-রফতানি গতিশীল হবে। দুই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতি আরও জোরালো হবে।’


উদ্বোধনের দিন থেকেই আখাউড়া-আগরতলা রেলপথে আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রেন চলাচল শুরু হবে


২০১৮ সালের ১০ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভিডিও কনফারেন্সে এই প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। এটি বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের ষষ্ঠ রেলসংযোগ রুট।


প্রকল্প কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আখাউড়া-আগরতলা রেললাইন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে ব্যয় হবে ৪৭৭ কোটি টাকা। আগরতলার নিশ্চিন্তপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে আখাউড়ার গঙ্গাসাগর রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার লাইন নির্মাণের কাজ করছে ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইরকন ইন্টারন্যাশনাল। ভারতীয় অংশে অর্থাৎ ত্রিপুরায় হবে পাঁচ কিলোমিটার এবং বাংলাদেশ অংশে হবে ১০ কিলোমিটার। বাংলাদেশ অংশের ব্যয় ধরা হয়েছে ২৪০ কোটি টাকা এবং ভারতীয় অংশের ব্যয় ধরা হয়েছে ২৩৭ কোটি টাকা। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ অংশের পাঁচ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। সবমিলিয়ে প্রকল্পের কাজ ৮৫ শতাংশ শেষ হয়েছে।


আখাউড়া-আগরতলা রেলপথ-৪আখাউড়া রেলপথ প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখেছেন বাংলাদেশ রেলপথ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা


এদিকে, রেলপথ চালু ঘিরে স্থানীয়দের আগ্রহের শেষ নেই। স্থানীয়রা বলছেন, প্রকল্পের কাজ শেষ হলে অনেকের কর্মসংস্থান হবে, ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারিত হবে।


আখাউড়ার খারকুট গ্রামের বাসিন্দা মো. ফজলুল হক ভূঁইয়া বলেন, ‘প্রকল্পের কাজের জন্য জমি দিয়েছি। বিনিময়ে সরকার টাকা দিয়েছে। তবে আমরা ত্যাগ স্বীকার করেছি। রেলপথ চালু হলে অনেকের কর্মসংস্থান হবে, ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারিত হবে। তাই সংশ্লিষ্টদের কাছে দাবি থাকবে, এখানে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে আমার এলাকার বাসিন্দাদের যেন সুযোগ দেওয়া হয়।’


  • সম্পাদক ও প্রকাশক: ইঞ্জিনিয়ার মো: রায়হানুল ইসলাম

  • উপদেষ্টাঃ মোঃ ইব্রাহীম হায়দার