বলের নিয়ন্ত্রণ মোটেও ছিল না বাংলাদেশের। ছিল না মাঝমাঠ বলতে কিছু। ম্যাচের প্রায় পুরোটা ছড়ি ঘোরালো কম্বোডিয়া। বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য আক্রমণ বলতে গেলে একটি। সেই আক্রমণটাই পাল্টে দিল ম্যাচের ফল। প্রিয় প্রতিপক্ষ কম্বোডিয়াকে হারিয়ে স্নায়ুর পরীক্ষায় জয় বাংলাদেশের।
২১ জুন থেকে শুরু হওয়া বেঙ্গালুরু সাফের আগে নিজেদের ভুলত্রুটি শোধরানোর একটাই সুযোগ পেয়েছে বাংলাদেশ। নম পেন জাতীয় অলিম্পিক স্টেডিয়ামে সেই পরীক্ষায় টেনেটুনে পাস হাভিয়ের কাবরেরার দল। স্বাগতিক কম্বোডিয়ার বিপক্ষে তেমন মন ভরানো খেলা খেলতে না পারলেও ঠিকই ১-০ গোলের জয় তুলে নিয়েছেন জামাল ভূঁইয়ারা। নিজের প্রথম আন্তর্জাতিক গোলে বাংলাদেশকে জয় এনে দিয়েছেন ১৮ বছর বয়সী মিডফিল্ডার মুজিবর রহমান জনি।
এই ম্যাচ জিতে কম্বোডিয়ার বিপক্ষে নিজেদের অপরাজিত রাখল বাংলাদেশ। সব মিলিয়ে কম্বোডিয়ার বিপক্ষে ষষ্ঠ ম্যাচে লাল-সবুজদের এটি পঞ্চম জয়।
জয় পেলেও বড় একটা ক্ষতিও হয়েছে বাংলাদেশের। বলের নিয়ন্ত্রণ নিতে না পেরে অতিমাত্রায় শরীর নির্ভর ফুটবল খেলে গণহারে রেফারির কাছ থেকে কার্ড দেখেছেন বাংলাদেশি ফুটবলাররা। খেলার একদম শেষভাগে এসে রেফারির সঙ্গে অহেতুক তর্ক করে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন ডিফেন্ডার তারিক কাজী রায়হান। লাল কার্ড দেখায় লেবানন ম্যাচে এই সেন্টারব্যাককে পাবে না বাংলাদেশ। একই ম্যাচে জামাল ভূঁইয়া, সোহেল রানা, অভিষিক্ত রফিকুল ইসলামও কার্ড দেখেছেন। খেলোয়াড়দের হলুদ কার্ডে সাফে ভালোই বিপদে পড়তে পারে বাংলাদেশ।
সাফে বাংলাদেশ বিপদে পড়তে পারে খেলার ধরনেও। র্যাঙ্কিংয়ের ১৭৬তম স্থানে থাকা কম্বোডিয়ার ফুটবলারদের পা থেকে বলতে গেলে বলই কাড়তে পারেননি বাংলাদেশি ফুটবলাররা। ৩০ হাজার কম্বোডিয়ার দর্শকের সামনে ছিল স্নায়ুর চাপও। ম্যাচের প্রথম মিনিট থেকেই নড়বড়ে জামালরা। ৪০ সেকেন্ডের মাথায় নিজেদের বক্সের সামনে কম্বোডিয়াকে ফ্রিকিক উপহার দেন সোহেল রানা। সেই ফ্রিকিকে বিপদ না হলেও খেলার দ্বিতীয় মিনিটে অল্পের জন্য রক্ষাও পায় হাভিয়ের কাবরেরার দল। কর্নার থেকে উড়ে আসা বলে কম্বোডিয়ার অধিনায়ক কাউচ-সকুমফেকের শট বাঁ পোস্ট ঘেঁষে চলে যায় বাইরে।
ম্যাচের ২৩ মিনিট পর্যন্ত প্রায় পুরোটা সময় বলের দখল নিজেদের পায়ে রেখেছে কম্বোডিয়া। স্বাগতিকদের আক্রমণে ২৪ মিনিটের মাথায় প্রথম আক্রমণ বাংলাদেশের আর তাতেই সাফল্য। মাঝমাঠের ডান প্রান্ত থেকে লম্বা করে কম্বোডিয়ার ডিবক্সে বল বাড়ান ফয়সাল আহমেদ ফাহিম। বক্সে তখন প্রায় অরক্ষিত অবস্থায় দাঁড়িয়ে মুজিবর রহমান জনি। সুযোগটাকে দারুণভাবে কাজে লাগিয়েছেন জনি, ফাহিমের বাড়ানো বল মাটিতে পড়ার আগেই দারুণ প্লেসিংয়ে দেশের হয়ে প্রথম গোল তুলে নেন ফর্টিস এএফসির হয়ে খেলা ১৮ বছর বয়সী মিডফিল্ডার।
পিছিয়ে পড়ে কম্বোডিয়া সমতায় ফিরতে পারত দুই মিনিট পরেই। পাল্টা আক্রমণ থেকে বাংলাদেশের বক্সে প্রায় অরক্ষিত অবস্থায় বল পান সোস-সুহানা। জোরের সঙ্গে শট নিলেও বাংলাদেশের ভাগ্য ভালো ক্রসবারের ওপর দিয়ে গেছে বল।
প্রথমার্ধে বাংলাদেশকে বাঁচিয়েছেন গোলরক্ষক আনিসুর রহমান জিকোও। ৪১ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে লক্ষ্যে শট নিয়েছিলেন কম্বোডিয়ান মিডফিল্ডার ওরন চানপোলিন। সতর্ক জিকো ঝাঁপিয়ে ঠেকান সেই শট।
সমতা ফেরাতে দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক কম্বোডিয়া। এই অর্ধের প্রথম ৬ মিনিটে তিনবার বাংলাদেশকে বিপদে ফেলতে পারত দলটি। দুবার সোস-সুহানাকে গোলবঞ্চিত করেছেন বাংলাদেশ গোলরক্ষক জিকো।
৫৭ মিনিটে দুই পরিবর্তনে খেলায় ফেরার চেষ্টা বাংলাদেশের। হলুদ কার্ড দেখা অধিনায়ক জামালকে তুলে নিয়ে শেখ মোরসালিনকে অভিষেক করান কোচ কাবরেরা। গোলদাতা জনির পরিবর্তে মাঠে নামেন মোহাম্মদ ইব্রাহিম।
একাধিক পরিবর্তন করেও খেলার নিয়ন্ত্রণ নিজেদের পায়ে নিতে ব্যর্থ বাংলাদেশ। উল্টো ৬৮ মিনিটে সমতাসূচক গোল প্রায় পেয়েই বসেছিল কম্বোডিয়া। ডানপ্রান্ত থেকে সতীর্থের বাড়ানো বলে হেড নেন বদলি ফরোয়ার্ড লিম পিসতো। জিকো হার মানলেও পিসতোর হেড অল্পের জন্য লক্ষ্য ছাড়া হওয়ায় আবারও রক্ষা অতিথিদের। ৭৪ মিনিটে এই পিসতোর আরেকটি হেডও ঠেকান জিকো। ম্যাচের বাকিটা সময় কম্বোডিয়া বড় কোনো পরীক্ষা নিতে না পারলেও তারিক কাজীর অহেতুক লাল কার্ডটা এখন বাংলাদেশের গলার কাঁটা!