তাসকিন আহমেদ উৎসব শুরুই করে দিয়েছিলেন। কিন্তু একটু নাটকীয়তা হলো। আফগানদের শেষ উইকেট জহির খান প্রথম বেঁচে গেলেন বল তাঁর গ্লাভস স্পর্শ না করায়। পরে তাসকিন তাঁকে বোল্ড করলেন। সেটি হলো ‘নো’ বলের সৌজন্যে। শেষ পর্যন্ত জহির বিদায় নিলেন তাসকিনের বলে আঘাত পেয়ে। উদ্যাপনের সুরটা কেটে যাওয়ায় বাংলাদেশ মাঠ ছাড়ল উচ্ছ্বাস ছাড়াই। অথচ বাংলাদেশ ম্যাচটা জিতেছে ৫৪৬ রানে। রানের ব্যবধানে যেটি টেস্টে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয়।
জয়ের সুবাস নিয়ে তৃতীয় দিনে খেলা শেষ করা আজ বাংলাদেশ বাকি কাজটা সারতে নিয়েছে ১৩৩ মিনিট। লাঞ্চের আগেই আফগানদের গুটিয়ে দিয়ে নিজেদের ইতিহাস তো বটেই এশিয়ার মাঠে সবচেয়ে বড় আর টেস্ট ইতিহাসে রানের ব্যবধানে তৃতীয় বড় জয় নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ। আর তাতে চার বছর আগে এই আফগানদের কাছে হারের একটা মধুর প্রতিশোধও নিল বাংলাদেশ।
অগ্নিঝরা বোলিংয়ে মিরপুর টেস্টে চতুর্থ দিনের সকালটা রাঙিয়ে তোলেন বাংলাদেশের পেসাররা। ৬৬২ রানের লক্ষ্য তাড়ায় নেমে দ্বিতীয় ইনিংসে থেমে গেছে তারা ৯ উইকেটে ১১৫ রানে। তাতে বাংলাদেশ পেল ৫৪৬ রানের জয়। এর আগে ২০০৫ সালে চট্টগ্রামে জিম্বাবুয়েকে ২২৬ রানে হারিয়েছিল তারা।
চতুর্থ দিন প্রথম সেশনে ৭০ রান যোগ করতেই ৭ ব্যাটারকে হারিয়েছে আফগানিস্তান। চতুর্থ দিনের তৃতীয় ওভারেই নাসির জামালকে ফেরান ইবাদত হোসেন। ৬ রান আসে এই মিডলঅর্ডারের ব্যাট থেকে আসে। এরপর আফসার জাজাইকেও ৬ রানে ফেরান শরিফুল ইসলাম।
ঘরোয়া লিগে দারুণ পারফরম্যান্স করা বাহির শাহের অভিষেকটাও সুখকর হয়নি। যদিও এই টেস্টে আফগানিস্তানের একাদশেই ছিলেন না তিনি। কিন্তু গতকাল তাসকিন আহমেদের লাফিয়ে ওঠা বল সরাসরি এসে লাগে হাসমতউল্লাহ শাহিদির হেলমেটের পেছনে। মাথায় আঘাত পেয়ে মাঠ ছাড়েন আফগান অধিনায়ক। আজ তাঁর জায়গায় অভিষেক হয় বাহিরের।
শরিফুলের দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে স্লিপে তাইজুল ইসলামকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন বাহির। অভিষেক ইনিংসে করলেন ৭ রান। টপ অর্ডার ব্যাটার রহমত শাহ প্রতিরোধের চেষ্টা করেও টিকে থাকতে পারলেন না। ৭৩ বলে ৩০ রানের ইনিংস খেলে তাসকিনের শিকার হন। করিম জানাতকেও বোল্ড করে ১৮ রানে ফেরান এই পেসার।
গতকাল ২৬ রানেই আফগানিস্তানের দুই উইকেট ড্রেসিংরুমে পাঠান শরিফুল ও তাসকিন। তবে আর বিপর্যয় না ঘটিয়ে ৪৫ রানে তৃতীয় দিনের খেলা শেষ করেন আফগানরা। ছন্দে থাকা ইবরাহিম জাদরান মিরপুর টেস্টে প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয় ইনিংসেও হলেন ব্যর্থ। আগের ইনিংসে ৬ রান করলেও এবার গোল্ডেন ডাকেই ফিরলেন। ইনিংসের প্রথম বলেই দারুণ এক ডেলিভারিতে তাঁকে ফেরান শরিফুল।
ব্যাট হাসেনি আরেক ওপেনার আব্দুল মালিকেরও। ৫ রানে তাসকিন আহমেদের বলে উইকেটরক্ষক লিটন দাসকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। তাসকিনের বলে মাথায় আঘাত পেয়ে ১৩ রান করে মাঠ ছাড়েন হাসতমউল্লাহ।
এর আগে দুই বছর পর মুমিনুল হকের সেঞ্চুরি ও নাজমুল হোসেন শান্তর জোড়া সেঞ্চুরির সৌজন্যে বাংলাদেশ লিড পায় ৬৬১ রানের। এর আগে টেস্ট ক্রিকেটে এত বড় লিড পায়নি তারা। প্রথম ইনিংসে ২৩৬ রানে এগিয়ে থাকা বাংলাদেশ ৪ উইকেটে ৪২৫ রান করে ইনিংস ঘোষণা করে। এক নাজমুল হোসেন শান্তর রানও করতে পারেনি আফগানিস্তান। দুই ইনিংস মিলিয়ে শান্ত রান করেছেন ২৭০ আর আফগানিস্তানের দুই ইনিংস মিলিয়ে করেছে ২৬১ রান। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, বাংলাদেশ আফগানদের জানিয়ে দিল, টেস্টে তারাও উড়িয়ে দিতে জানে!