রাজনৈতিক সংকট: শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য সংলাপের তাগিদ


, আপডেট করা হয়েছে : 20-06-2023

রাজনৈতিক সংকট: শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য সংলাপের তাগিদ

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র মাস সাতেক বাকি। কিন্তু দেশে রাজনৈতিক বিভাজন প্রকট হয়ে পড়েছে। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপরও ভরসা কম তৃণমূলের মানুষের। এ অবস্থায় চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসন না করে অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন আয়োজন সম্ভব হবে, এমন আশা দেখছে না তারা। এতে সংঘাত ও সহিংসতার ঝুঁকি বাড়ছে। সারা দেশে মাঠপর্যায়ের এক সমীক্ষায় এমন চিত্রই উঠে এসেছে। বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউট (বিইআই) এ সমীক্ষা চালিয়েছে।


সমীক্ষার ফলাফল নিয়ে গতকাল সোমবার এক আলোচনায় বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, দেশে রাজনৈতিক দল ও সব মতের মানুষের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান তৈরি করা দরকার। আর শান্তিপূর্ণভাবে সংকটের সমাধান পেতে হলে আলাপ-আলোচনা শুরু করতে হবে। আর এই সংলাপ শুরুর দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে।


অনুষ্ঠানে সমীক্ষার মাধ্যমে পাওয়া সাধারণ মানুষের ভাবনাগুলো তুলে ধরেন বিইআই প্রেসিডেন্ট ও সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির। বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সমীক্ষা চালানো হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, রাজনৈতিক বিভাজন আগের চেয়ে প্রকট হয়েছে বলে মনে করে মানুষ। সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য বেড়েছে। জবাবদিহি কমে যাওয়া রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর মানুষের আস্থা কমেছে। দুর্নীতি বেড়েছে। এতে ভোটসহ নাগরিকদের অনেক অধিকার খর্ব হচ্ছে।


ভয়ের সংস্কৃতি প্রসঙ্গে হুমায়ুন কবির বলেন, ‘বিরোধী দলের লোকেরা ভয়ে থাকে, মামলা হচ্ছে। কখন পুলিশ ধরে ফেলে। আর সরকারি দলের লোকেরা ভয়ে আছে, দল যদি নির্বাচনে হেরে যায়, তাহলে কী হবে?’


রাজনৈতিক দল, ব্যাংক ও আমলাতন্ত্রে মানুষের আস্থা কমেছে, এমন পর্যবেক্ষণ মাঠ থেকেই পাওয়া গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, গণতন্ত্র চর্চার সুযোগ সংকীর্ণ হয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের লোকজনও এখন দুর্নীতির শিকার হচ্ছেন। তাঁরাও প্রতিকার চান। কিন্তু পাচ্ছেন না। দেশে পরামর্শমূলক কোনো প্রক্রিয়া নেই। এ অবস্থা সংঘাত ও সহিংসতার ঝুঁকি বাড়িয়ে দিয়েছে।


এরপরও তৃণমূলে এখনো দেশের ভবিষ্যৎ, অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও সৃজনশীলতার বিষয়ে আশাবাদ আছে জানিয়ে সাবেক এই কূটনীতিক বলেন, মানুষ অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন চায়। কিন্তু তাঁদের আশাবাদকে বাস্তবে রূপ দিতে হলে রাজনৈতিক ঐকমত্য দরকার। আলাপ-আলোচনা দরকার।


এ বিষয়গুলোর ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে সাবেক নির্বাচন কমিশনার অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাখাওয়াত হোসেন বলেন, দেশে রাজনৈতিক প্রক্রিয়া ভেঙে পড়েছে। দলগুলো এখন ভোটের ফল পক্ষে নিতে পেশিশক্তি ও টাকার জোরের ওপর ভরসা করে। নির্বাচন কর্মকর্তাদের এখন খাকি খাম দেওয়া হয়। যতক্ষণ সরকারি প্রভাবে নির্বাচন হবে, ততক্ষণ ভোট সুষ্ঠু হওয়া অসম্ভব।


গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচনকালীন সরকার ও নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থা আনার তাগিদ দিয়ে অনুষ্ঠানে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, নির্বাচন কোন সরকারের অধীনে হবে, তা দলগুলোকে ঠিক করতে হবে। আলোচনার পরিবেশ তৈরি করতে হবে। আর এসব দাবি জনগণের কাছ থেকেও আসত হবে।


রাজনৈতিক শক্তির ভারসাম্য নষ্ট হওয়া, দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তায়ন বেড়ে যাওয়ার ফলে ‘রাজপথ মুখোমুখি’ অবস্থায় আছে উল্লেখ করে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ বলেন, নির্বাচনের আর সাত মাস আছে। সমাধানের পথ খুঁজতে এটা কম সময় নয়।


রাজনীতি জনসেবা, এটা চাকরি নয়, এমনটি উল্লেখ করে সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক নুরুল হুদা বলেন, চাকরি পাওয়ার পর সরকারি কর্মচারীরা মনে করেন, তাঁরা ৩২ বছর থাকবেন। এখন রাজনীতিকেরাও যদি মনে করেন, তাঁরাও ৩২ বছর থাকবেন, তাহলে চলবে না।


নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংগঠন ব্রতীর শারমীন মুরশিদ বলেন, রাজনীতিকেরা এখন আর নীতিনৈতিকতা মানতে চান না। সংবিধানের দোহাই দিয়ে সংবিধান বদলে দেন। এর অবসান হওয়া দরকার।


বিএনপি নেতা নিতাই রায় চৌধুরী, শামসুজ্জামান দুদু ও মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, আওয়ামী লীগের নাহিম রাজ্জাক এমপি ও নাজমা আখতার, জাতীয় পার্টির শামীম হায়দার পাটোয়ারী এমপি, জাতীয় পার্টির একাংশের নেতা শেখ শহীদুল ইসলাম, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি ও গণ অধিকার পরিষদের নুরুল ইসলাম নুরুসহ কয়েকটি দলের নেতারা আলোচনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।


বিএনপি নেতারা নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি পুনর্ব্যক্ত করেন। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগ নেতারা বর্তমান সংবিধানের অধীনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনেই ভোটের আয়োজনের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন।


জাতীয় পর্যায়ে সংলাপের তাগিদ দিয়ে শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, সংলাপ ছাড়া সংকট মোচন হবে না। আর সংলাপ শুরুর দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে।

জোনায়েদ সাকি বলেন, নির্বাচনে সব দলের জন্য সুযোগের সমতা তৈরি করতে হবে। ভোটের পর শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যবস্থা থাকতে হবে।


বিষয়:



  • সম্পাদক ও প্রকাশক: ইঞ্জিনিয়ার মো: রায়হানুল ইসলাম

  • উপদেষ্টাঃ মোঃ ইব্রাহীম হায়দার