২৮ মার্চ ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৪:২৩:০০ অপরাহ্ন
কুরবানির পশুর ডিজিটাল হাট জমজমাট
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৩-০৭-২০২২
কুরবানির পশুর ডিজিটাল হাট জমজমাট

কুরবানির পশু কেনার ভোগান্তি এড়াতে ডিজিটাল হাট এখন জমজমাট হয়ে উঠেছে। কর্মব্যস্ত শহর এলাকার বাসিন্দাদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে ‘ডিজিটাল কুরবানির পশুর হাট’। এসব হাটে কেউ পশু বুকিং করে রাখছেন, যা ঈদের আগের দিন বাসায় পৌঁছে দেবেন খামারিরা। আবার অনেকে কুরবানি সম্পন্ন করে প্যাকেটজাত মাংস বাসায় পৌঁছে দেওয়ার শর্তে পশু কিনছেন।

ঢাকাসহ দেশের বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোয় এ সংস্কৃতি শুরু হয়েছে। এবার অনলাইন প্ল্যাটফরমের হাট থেকে পশু কেনাবেচার হার বেড়েছে। সতর্কতা অবলম্বন করে মধ্যস্বত্বভোগীদের বয়কট করে খামারিদের কাছ থেকে ডিজিটাল প্ল্যাটফরমে পশু কেনাবেচা করতে পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম শনিবার যুগান্তরকে বলেন, ‘হাটে গিয়ে পশু কিনতে অনেক ধরনের ভোগান্তি মাড়াতে হয়। বর্তমানে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধিসহ নানাবিধ স্বাস্থ্যঝুঁকিও রয়েছে। এসব কারণে শহর এলাকার মানুষ অনলাইন প্ল্যাটফরমে পশু কিনতে আগ্রহী। মানুষের এ আগ্রহকে আমরা সাধুবাদ জানাই। আগ্রহীদের পশু কেনা সহজ ও হয়রানিমুক্ত করতে গত বছর থেকে ডিজিটাল প্ল্যাটফরম থেকে পশু কেনার ব্যবস্থা করেছে ডিএনসিসি। এবারও এ আয়োজন রয়েছে।’

অনলাইন প্ল্যাটফরমের পশু বিক্রি সম্পর্কে বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. ইমরান হোসেন যুগান্তরকে বলেন, ‘গত বছর অনলাইনে কুরবানির সাড়ে ৩ লাখ পশু বিক্রি হয়। যার বাজারমূল্য ছিল আড়াই হাজার কোটি টাকা। এ বছরও ইতোমধ্যে অনলাইনে বিক্রি শুরু হয়েছে। এখনো সামনে কিছুদিন সময় রয়েছে। আমরা আশা করছি, এ সময়ের মধ্যে অনলাইনের বিক্রি কয়েকগুণ বাড়বে।’

জানা যায়, ঢাকায় কুরবানির পশুর অস্থায়ী হাটগুলো বসানোর প্রস্তুতি চলছে। এমন সময় খামারিরা অনলাইন প্ল্যাটফরমে গরু বিক্রি প্রায় শেষ করে ফেলেছেন। অনলাইনে দুই মাস আগ থেকে কুরবানির পশু বিক্রি শুরু হয়েছে। সেসব খামারে এখন স্বল্প পরিমাণ গরু রয়েছে। বিক্রীত গরুগুলো কুরবানি পর্যন্ত ওইসব খামারেই থাকছে। খামারিরা গরুর খাওয়া ও দেখভালের দায়িত্ব পালন করছেন। এসব খামার থেকে কেউ ঈদের আগের দিন, যাদের নিজেদের তত্ত্বাবধানে কুরবানি করা কষ্টকর, তারা খামার বা তাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনা থেকে পশু কুরবানি করে প্যাকেটজাত সম্পন্ন করে মাংস বাসায় নিয়ে যাবেন।

আরও জানা যায়, অনলাইন পশুর হাট নিয়ে কারও কারও মধ্যে সন্দেহও রয়েছে। কেননা ইভ্যালি, কিউকম, ই-অরেঞ্জ, ধামাকা, আলাদিনের চেরাগ, আলেশা মার্টের প্রতারণার কারণে অনেক মানুষ আস্থাহীনতায় ভুগছে। কুরবানির পশু কিনে প্রতারণা বা হয়রানি থেকে বাঁচতে স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠিত খামার থেকে পশু কেনার পরামর্শ দিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।

ঢাকার শেখেরটেকের বাসিন্দা মো. আলগমীর হোসেন। সপরিবারে দীর্ঘদিন ঢাকায় বসবাস করছেন। প্রতিবছর রোজা ও কুরবানির ঈদ গ্রামে করেন। বৃদ্ধ মা-বাবাসহ পরিবারের দায়িত্ব তার ওপর। কুরবানির গরু কেনার দায়িত্বও তার। ঈদের একদিন আগে গ্রামে গিয়ে গরু কেনা তার জন্য কষ্টকর হবে। এজন্য অনলাইন প্ল্যাটফরমে একটি গরু কিনেছেন। অনলাইনে টাকাও পরিশোধ করেছেন।

শনিবার তিনি যুগান্তরকে বলেন, গরু কেনা নিয়ে খুব দুশ্চিন্তা করছিলাম। কিন্তু এলাকার একজনের পরামর্শে অনলাইনে পশু কিনে ফেললাম। মা-বাবাকে ছবি পাঠিয়েছি। গরু দেখে খুব খুশি তারা। প্রতিষ্ঠিত খামার থেকে অনলাইনে লেনদেন করলে ডিজিটালভাবে পশু কেনায় কোনো ঝুঁকি নেই বলে অভিমত এই ক্রেতার।

ঢাকার পার্শ্ববর্তী উপজেলা সাভারের ভাকুর্তার বাসিন্দা রিপন আহমেদ। তিনিও একটি খামারের মালিক। এই খামারি যুগান্তরকে বলেন, মে মাস থেকে কুরবানির পশু বুকিং শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে সিংহভাগ গরু বিক্রি শেষ। আর অল্প কিছু গরু রয়েছে। পরিচিত কিছু লোকের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তিনি আশা করছেন, এই সপ্তাহের মধ্যে বিক্রি হয়ে যাবে।

কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান যুগান্তরকে বলেন, ‘যারা অনলাইন বা ডিজিটাল প্ল্যাটফরম থেকে পশু কিনবেন, তাদের অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। কোনো মধ্যস্বত্বভোগীর কাছ থেকে পশু কেনা যাবে না। প্রতিষ্ঠিত খামার থেকে পশু কিনতে হবে। তিনি মনে করেন, এ বিষয়গুলো খেয়াল রেখে লেনদেন করলে ক্ষতিগ্রস্ত বা প্রতারিত হবে না ক্রেতারা।

এদিকে ডিএনসিসির প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, কুরবানির হাটে ডিজিটাল ব্যবস্থাপনার সুবিধা নিশ্চিত করতে এবার ৬টি হাটে স্মার্ট লেনদেন চালু করা হয়েছে। ক্রেতারা ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড ব্যবহার করে দাম পরিশোধ করতে পারবেন। দেশের দূর-দূরান্ত থেকে আসা বিক্রেতাদেরও টাকা নিয়ে যাওয়ার কোনো ঝুঁকি নেই। তাদেরেকে কিউআর কোর্ড সংবলিত ব্যাংকের স্লিপ দেওয়া হবে। প্রত্যেকে নিজ নিজ নিরাপদ জায়গা থেকে টাকা উত্তোলন করে নিতে পারবেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে ডিএনসিসি এ উদ্যোগ বাস্তবায়নে কাজ করছে।

প্রসঙ্গত, কুরবানির পশু কেনা-বেচা করতে এবার ২২টি পশুর হাট নির্ধারণ করা হয়েছে। ঢাকাসহ সারা দেশে ৪ হাজার ৪০৭টি পশুর হাট বসবে। ঢাকায় ইতোমধ্যে ১৭টি হাট চূড়ান্ত করা হয়েছে, অন্যগুলো প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এ বছর সারা দেশে ১ কোটি ২১ লাখ ২৪ হাজার ৩৮৯টি কুরবানির পশু প্রস্তত রয়েছে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এর মধ্যে গরু ৪৪ লাখ ৩৭ হাজার ৮৭৯, মহিষ ১ লাখ ৭৩ হাজার ৫০৪, ছাগল ৬৫ লাখ ৭৩ হাজার ৯১৫, ভেড়া ৯ লাখ ৩৭ হাজার ৬৮২ ও অন্যান্য ১ হাজার ৪০৯টি। গত বছর দেশে কুরবানিযোগ্য পশু ছিল ১ কোটি ১৯ লাখ ১৬ হাজার ৭৬৫টি। এর মধ্যে কুরবানি হয় ৯০ লাখ ৯৩ হাজার ২৪২টি পশু।

শেয়ার করুন