১৬ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার, ০১:৩৭:৩৫ অপরাহ্ন
ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ কমাচ্ছে রাশিয়া
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৭-০৭-২০২২
ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ কমাচ্ছে রাশিয়া

ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ আরও কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাশিয়া। দেশটির রাষ্ট্রীয় জ্বালানি কোম্পানি গ্যাজপ্রম জানিয়েছে, প্রধান পাইপলাইনে রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দেশগুলোতে গ্যাস সরবরাহ আরও কমিয়ে দেওয়া হবে। এ সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছে ইইউ। তারা বলছে, মস্কো জ্বালানিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। এ পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার ইইউ দেশগুলোর জ্বালানিমন্ত্রীরা আগামী শীতে গ্যাসের ব্যবহার সীমিত করতে একটি চুক্তিতে পৌঁছান। ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ কমানোর রুশ ঘোষণা আসতে না আসতেই বিশ্বব্যাপী আবারও তেলের দাম বাড়তে শুরু করেছে।


গ্যাজপ্রম বলছে, নর্ড স্ট্রিম-১ নামে পরিচিত রাশিয়া থেকে জার্মানিতে গ্যাস সরবরাহের প্রধান পাইপলাইনে রক্ষণাবেক্ষণ কাজের কারণে উৎপাদন ২০ শতাংশ হ্রাস পাবে। আজ থেকে সরবরাহ কমতে পারে। তবে জার্মানি বলছে, প্রযুক্তিগত এ রকম কিছুই আসলে ঘটেনি। রাশিয়া সরবরাহ আরও কমিয়ে দিলে শীতের আগে ইউরোপের দেশগুলোর পর্যাপ্ত গ্যাস মজুত করা কঠিন হয়ে পড়বে। শীতে ইউরোপের দেশে গ্যাসের ব্যবহার অনেক বেশি থাকে।


নর্ড স্ট্রিম-১-এর মাধ্যমে ইউরোপে গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই ক্ষমতার চেয়ে অনেক কম গ্যাস সরবরাহ হচ্ছে। চলতি মাসেই রক্ষণাবেক্ষণ বিরতির কারণে ১০ দিনের জন্য পুরোপুরি বন্ধ রাখা হয়েছিল সরবরাহ। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউরোপের দেশগুলোর ৪০ শতাংশ গ্যাস দিয়ে থাকে রাশিয়া।


রাশিয়ার পক্ষ থেকে সরবরাহ কমিয়ে দেওয়া বা পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি আসার পর ইউরোপীয় কমিশন সদস্য দেশগুলোকে গ্যাসের ব্যবহার ১৫ শতাংশ কমিয়ে আনার আহ্বান জানায়। এ প্রেক্ষাপটে পরিকল্পনা চূড়ান্ত করতে ইইউর দেশগুলোর জ্বালানিমন্ত্রীরা গতকাল ব্রাসেলসে বৈঠকে বসেন। আলজাজিরার খবরে বলা হয়, বৈঠকে আসন্ন শীতে গ্যাসের ব্যবহার কমানোর বিষয়ে একমত হন মন্ত্রীরা। বৈঠকের পর এক টুইটে চেক রিপাবলিকের মন্ত্রী বলেন, এটা অসম্ভব কোনো বিষয় নয়। শীত সামনে রেখে মন্ত্রীরা গ্যাসের ব্যবহার কমানোর বিষয়ে রাজনৈতিক ঐকমত্যে পৌঁছেছেন। আগামী আগস্ট থেকে মার্চ পর্যন্ত ১৫ শতাংশ গ্যাস ব্যবহার কমানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।


গ্যাজপ্রমের ঘোষণার পর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদেমির জেলেনস্কি বলেছেন, ইউরোপের বিরুদ্ধে গ্যাস নিয়ে রাশিয়া প্রত্যক্ষ যুদ্ধ ঘোষণা করেছে- বিষয়টি এভাবেই দেখা উচিত। জার্মানির অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র এএফপিকে বলেন, তাঁদের কাছে যেসব তথ্য আছে, সে অনুযায়ী সরবরাহ কমিয়ে দেওয়ার কোনো প্রযুক্তিগত কারণ নেই। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর গ্যাজপ্রম ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে দেয়।


রাশিয়া গ্যাস সরবরাহ কমালে ইউরোপ অপরিশোধিত তেলের দিকে ঝুঁকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দর বাড়তে শুরু করেছে। ব্রেন্ট ক্রুড ফিউচারসের সেপ্টেম্বরে সরবরাহ হবে- এমন তেলের দর গতকাল ৪৫ সেন্ট বা শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ বেড়ে ব্যারেলপ্রতি ১০৫ দশমিক ৬০ ডলারে দাঁড়িয়েছে। রয়টার্স জানায়, আগের দিনও দর ১ দশমিক ৯ শতাংশ বেড়েছিল।


এদিকে ইউক্রেনের শস্য রপ্তানি শুরু হলে প্রতি মাসে যুদ্ধ-পূর্ববর্তী সময়ের সমান চালান যাবে বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘের দু'জন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। জাতিসংঘ জানিয়েছে, তাদের মধ্যস্থতায় হওয়া চুক্তি অনুযায়ী ইউক্রেন থেকে খাদ্যশস্য রপ্তানির চালান কয়েক দিনের মধ্যেই কৃষ্ণসাগরের বন্দরগুলো থেকে শুরু হবে। রয়টার্স জানায়, গত সোমবার জাতিসংঘের সহকারী মুখপাত্র ফারহান হক এ তথ্য দিয়েছেন।


কৃষ্ণসাগরের বন্দর দিয়ে শস্য রপ্তানি আবারও শুরুর জন্য রাশিয়া, ইউক্রেন, তুরস্ক ও জাতিসংঘ গত শুক্রবার একটি চুক্তি সই করে। খবর এএফপি, বিবিসি ও সিএনএনের।

শেয়ার করুন