২৯ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার, ০৩:১০:২৭ পূর্বাহ্ন
ডিজিটাইলাইজেশনের আওতায় রুয়েট ক্যাম্পাস, ভোগান্তি ছাড়াই সবাই পাচ্ছে সেবা
  • আপডেট করা হয়েছে : ০১-০৮-২০২২
ডিজিটাইলাইজেশনের আওতায় রুয়েট ক্যাম্পাস, ভোগান্তি ছাড়াই সবাই পাচ্ছে সেবা

ডিজিটালাইজেশনের সকল সুবিধার আওতায় এসেছে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিদ্যালয় (রুয়েট)। গত চার বছরে বিভিন্ন ধাপে এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। আর ডিজিটালাইজেশনের কারণে রুয়েটের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী, ভর্তিচ্ছু এবং চাকরিপ্রার্থীসহ সংশ্লিষ্ট সকলেই কোনো ধরনের ভোগান্তি ছাড়া খুব সহজেই দ্রুততার সাথে তাদের সেবা পাচ্ছেন। রুয়েটের এ ডিজিটাইলেজন সুযোগ-সুবিধা এখন দেশের অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাছে রোল মডেল হিসেবে উপস্থাপিত হয়েছে বলে জানিয়েছে রুয়েট কর্তৃপক্ষ।

রুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ইকবাল মতিন। গত বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি ছিল তাঁর শেষ কর্মদিবস। শেষ কর্মদিবসে অধ্যাপক ইকবাল মতিনকে ফোন করে রুয়েটের হিসাব বিভাগ। এরপর একটা সই নিয়ে তাঁকে বুঝিয়ে দেওয়া হয় আনুতোষিকের (গ্রাচ্যুইটি) সমস্ত টাকা। এর দুই মাসের মধ্যে পেনশনেরও সব টাকা বুঝে পেয়েছেন অধ্যাপক ইকবাল মতিন।

শেষ কর্মদিবসেই আনুতোষিকের টাকা পাওয়া অধ্যাপক ইকবাল মতিনের কাছে ছিল একরকম অবিশ্বাস্য। তবে তাঁর মত এখন অন্য শিক্ষক, কর্মকর্তা এবং কর্মচারীরারাও ডিজিটাইলেজনের এ সুবিধা পাচ্ছেন। আর এটি অনলাইনে স্যালারি সিস্টেম অটোমেশনের কারণে সম্ভব হয়েছে।

অধ্যাপক ইকবাল মতিন বলেন, ‘অবিশ্বাস্যভাবে শেষ কর্মদিবসেই রুয়েট আমাকে পেমেন্ট করেছে। অত্যন্ত সুন্দরভাবে যাবতীয় পাওনা দিয়েছে। একটা দিনও দেরি হয়নি। সেদিন আমি ১৮ মাসের বেতনও পেয়েছি। একরকম আমাকে জোর করেই ডেকে একটা সই নিয়ে সব বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। সত্যিই এটা ভাবা যায় না। পেনশনও দুমাসের মধ্যে পেয়েছি। এটার পেছনে যারা আছেন তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।’

রুয়েট কর্তৃপক্ষ বলছে, স্যালারি অটোমেশনের মাধ্যমে শুধু কর্মরত শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পাওনা পরিশোধ করা হচ্ছে তা নয়, যথাযথ ই-টিন এর আওতায় তাদের আনা হয়েছে। ওয়েবসাইটে নিজস্ব আইডি-পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে ঘরে বসেই নিজের বেতন, ঋণ সুবিধা, কিস্তি পরিশোধ, ছুটিসহ সার্বিক বিষয়ে তথ্য পাচ্ছেন তারা।

এছাড়া স্যালারি অটোমেশনের মাধ্যমে সব হিসাব স্বচ্ছ ও সুন্দরভাবে গোছানো থাকায় কল্যাণ সেলের আওতায় অবসর গ্রহণকালীন ছুটিতে (পিআরএল) যাওয়া শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের শেষ কর্মদিবসেই নিজ নিজ হিসাবে সমস্ত আর্থিক সুবিধা পেয়ে থাকেন। প্রযুক্তির এই উৎকর্ষতার কারণে চাকরি শেষে রুয়েটের কাউকে আর নিজের পাওনা টাকার জন্য দফতরে দফতরে ঘুরতে হয় না।

রুয়েটের কম্পট্রোলার নাজিম উদ্দিন বলেন, সদ্যবিদায়ী উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম সেখের নির্দেশনায় অ্যাকাউন্ট অটোমেশন সফটওয়্যার তৈরি করা হয়েছে। এর মাধ্যমেই এ অসম্ভবকে সম্ভব করা যাচ্ছে। এ সফটওয়্যারের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মেধাবৃত্তির বিষয়টিও দ্রুত সম্পন্ন হচ্ছে।

এছাড়া চাকরির কোর্স রেজিস্ট্রেশন, স্নাতকোত্তর ভর্তির যাবতীয় কার্যাবলীর ক্ষেত্রে অনলাইন আবেদন প্রক্রিয়া চালু করেছে রুয়েট প্রশাসন। ফলে দেশের যেকোনো স্থান থেকে রুয়েটে চাকরিতে আবেদন ও এসএসএলের মাধ্যমে পেমেন্ট করা যায়। এতে শুধু সময়ই বাঁচে তা নয়, বরং আবেদন প্রক্রিয়ায় ভোগান্তি ও ত্রুটি দূর হয়েছে। একইসঙ্গে অনলাইন পদ্ধতিতে স্বচ্ছতার সাথে সহজেই চাকরি প্রার্থীদের আবেদনও যাচাই-বাছাই করা যায়।

এদিকে অত্যাধুনিক ও ডাইনামিক একটি অফিসিয়াল ওয়েবসাইট তৈরি করেছে রুয়েট। এই ওয়েবসাইটে প্রতিটি বিভাগ তাদের নিজ নিজ দফতরের তথ্যগুলো আপলোড করে। আবার রুয়েটের শিক্ষকদের গবেষণার সব তথ্যই পাওয়া যায় এখানে। ডিজিটাল লাইব্রেরি অটোমেশনও সম্পন্ন করেছে রুয়েট। ফলে লাইব্রেরিতে থাকা বইগুলোর মধ্যে নিজের প্রয়োজনীয় বইটি আছে কি না তা ঘরে বসেই সার্চ করে দেখতে পারছেন শিক্ষার্থীরা। লাইব্রেরির নিয়ম-নীতি, বই নেওয়া ও জমা দেওয়াসহ নানা সেবা পাওয়া যায় এই ওয়েবসাইটে।

একইসঙ্গে স্টুডেন্ট ডাটাবেজও তৈরি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ফলে আইডি কার্ডের বারকোড ব্যবহার করে বিভিন্ন সেবা পাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। প্রায় ছয় হাজার শিক্ষার্থীর প্রত্যেকের নামে প্রতিষ্ঠানিক ওয়েব মেইল খোলা হয়েছে। মাস্টার্স ও পিএইচডির শিক্ষার্থীদের ভর্তি কার্যক্রমও অনলাইনে সম্পন্ন করার সুযোগ সৃষ্টি করেছে রুয়েট।

আবার গেস্ট হাউজ বুকিং, যানবাহন, ই-নথিসহ প্রায় সব কিছুই অটোমেশন প্রক্রিয়ায় আনা হচ্ছে। নিরাপত্তার জন্য সিসি ক্যামেরা ও ওয়াকিটকির আওতায় আনা হয়েছে পুরো ক্যাম্পাস। ফলে সংশ্লিষ্টরা বিশ্বের যেকোনো জায়গা থেকে ক্যাম্পাসের সার্বিক বিষয়ে তদারকি করতে পারেন। এতে ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা আরও জোরদার হয়েছে।

রুয়েটের কেন্দ্রীয় কম্পিউটার সেন্টারের প্রশাসক অধ্যাপক ড. আলী হোসেন ও আইসিটি সেলের পরিচালক প্রফেসর ড. আল মামুন বলেন, রুয়েটের প্রায় প্রতিটা ক্ষেত্র ডিজিটাল হয়েছে। গত চার বছরে শিক্ষা, গবেষণা ও প্রযুক্তিগত দিকসহ নানা বিষয়ে রুয়েট যে পর্যায়ে পৌঁছেছে তা অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে দৃষ্টান্ত। এই ধারা অব্যাহত থাকলে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে রুয়েট।

সদ্যবিদায়ী উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম সেখ বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের সঙ্গী হতে রুয়েটকেও ডিজিটাল করা হয়েছে। এবার রেজাল্ট সিস্টেমও অটোমেশন হতে যাচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীরা ঘরে বসেই তার কোর্স কারিকুলাম থেকে শুরু করে পরীক্ষার ফলাফলসহ সব বিষয়ে জানতে পারবেন। অভিভাবকরাও মোবাইল ফোনে এসএমএসের মাধ্যমে সন্তানের পরীক্ষার ফলাফল জানতে পারবেন। কিউএস ব্যাংকিংয়েও রুয়েটের ডাটা যুক্ত হচ্ছে। আগামীতে রুয়েট দৃশ্যমান র‌্যাংকিংয়ে অবস্থান করবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

শেয়ার করুন