২৯ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার, ১১:১৪:৩৬ পূর্বাহ্ন
রাজশাহীর প্রাথমিক শিক্ষা খুঁড়িয়ে চলছে
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৯-০৯-২০২২
রাজশাহীর প্রাথমিক শিক্ষা খুঁড়িয়ে চলছে

অনেকটাই খুঁড়িয়ে চলছে রাজশাহীর প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থা। সহকারী শিক্ষকসহ ৪২০টির বেশি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নেই প্রধান শিক্ষক। গ্রাম ও চরাঞ্চলের স্কুলগুলোয় নেই শিক্ষক। রাজশাহীতে মোট ১ হাজার ৫৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে অর্ধেক স্কুলে বর্তমানে প্রধান শিক্ষক নেই। আর ৯৫৬ সহকারী শিক্ষকের পদও শূন্য। পাঠদান ও প্রশাসনিকসহ নানাবিধ সংকটে চলছে এসব স্কুল। এদিকে সুষ্ঠু তদারকির অভাবে রাজশাহীর সরকারি প্রাথমিক স্কুলগুলোয় শিক্ষাব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে বলেও দীর্ঘদিন অভিভাবক মহল থেকে অভিযোগ আসছে।




এছাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোয় শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের উপস্থিতির হারও কমে গেছে বলে জানা গেছে। তবে কাগজে-কলমে সব ঠিকঠাকই আছে। অভিভাবকদের আরও অভিযোগ, যেসব স্কুলে শিক্ষক দরকার সেখানে প্রয়োজনীয়সংখ্যক শিক্ষক নেই। আবার রাজশাহী মহানগরী এলাকা বা আশপাশের এক স্কুলে ৫ জনের জায়গায় ৭-৮ জন করে শিক্ষক আছেন। অনেকের পোস্টিং অন্য স্কুলে কিন্তু প্রেষণে চাকরি করছেন শহরের কাছাকাছি এলাকায়। অথচ শহরের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোয় শিক্ষার্থীর অনুপাতে বরং শিক্ষকের সংখ্যাই বেশি।


জানা যায়, রাজশাহীর যে ৪২০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে সেগুলোর ১৯৩টিতে সহকারী প্রধান শিক্ষকরা ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। আর মামলা জটিলতার কারণে ৬টি স্কুলের প্রধান শিক্ষক দায়িত্ব পালন থেকে বিরত আছেন। বাকি স্কুলগুলোয় সহকারী শিক্ষকরা প্রধান শিক্ষকের পদে দায়িত্ব পালন করছেন জোড়াতালি দিয়ে।


রাজশাহী মহানগরীর বোয়ালিয়া থানার আটটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই। এছাড়া গোদাগাড়ী উপজেলার ৩১টি, চারঘাটের ৪৫টি, তানোরের ৭২টি, দুর্গাপুরের ৩১টি, পুঠিয়ার ৩৯টি, পবা উপজেলার ৩৩টি, বাগমারার ১০১টি, বাঘার ৩০টি ও মোহনপুরের ৩০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। শুধু প্রধান শিক্ষকই নয়, নির্দিষ্ট বিষয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকের সংকটও রয়েছে রাজশাহীর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোয়।


প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীত ও শরীরচর্চা বিষয়ে শিক্ষক থাকা আবশ্যক। কিন্তু কোনো স্কুলে সংগীতের ওপর মাত্র ছয় দিনের প্রশিক্ষণ নিয়েই তারা শিক্ষার্থীদের সংগীত শেখাচ্ছেন। আর সাত দিনের প্রশিক্ষণ শেষে কোনো কোনো স্কুলে শরীরচর্চা শেখাচ্ছেন শিক্ষকরা। অভিযোগ রয়েছে, সংগীত ও শরীরচর্চা বিষয়ের শিক্ষাদান বাধ্যতামূলক করা হলেও এসব বিষয়ে তালিমপ্রাপ্ত দক্ষ শিক্ষক নেই। আবার সংগীত ও শরীরচর্চা বিষয়ে অধিকাংশ স্কুলে সরঞ্জাম নেই।


অন্যদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজশাহীর পবা উপজেলার একাধিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক বলেন, শিক্ষা অধিদপ্তরের খেয়ালি চিন্তাভাবনা শিক্ষার্থীদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। রাজশাহীর অধিকাংশ সরকারি প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর অনুপাতে কোনো ভারসাম্য নেই। গ্রাম ও চরাঞ্চলের স্কুলগুলোতে ৭ জনের জায়গায় রয়েছে সর্বোচ্চ এক অথবা দুজন শিক্ষক। চাকরি পেয়ে যোগদানের কিছুদিনের মধ্যেই ঘুস দিয়ে তারা শহরের স্কুলে বদলি হয়ে যান। ফলে চরাঞ্চল ও গ্রামের স্কুল পড়ে থাকে ফাঁকা। দূরবর্তী ও চরাঞ্চলের স্কুলগুলোতে এক বা দুজন শিক্ষককেই সব ক্লাসের পাঠদান করাতে হয়। এতে শিক্ষার্থীরাও বিশেষ কিছু শিখতে পারে না।


একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জানান, গ্রামের স্কুলগুলোর দিকে নজর দেওয়ার সময় কারও নেই। গ্রামের দরিদ্র পরিবারের ছেলেমেয়েদের শিক্ষা গ্রহণ পুরোটাই এসব সরকারি প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠাননির্ভর। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, ‘শিক্ষক সংকট প্রতি মাসেই বাড়ছে। প্রতি মাসেই কেউ না কেউ অবসরে যাচ্ছেন, কেউ বা চাকরি ছাড়ছেন। কিন্তু এ বিষয়ে অধিদপ্তর বা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ ছাড়া তেমন কিছুই করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। রাজশাহীর প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুস সালাম বলেন, সামনে জেলায় প্রায় ৬০০ সহকারী শিক্ষক নিয়োগ হচ্ছে।

শেয়ার করুন