২৮ মার্চ ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৬:৪৬:০০ অপরাহ্ন
দশ প্রকল্পে বাড়তি ব্যয় ৫২০০০ কোটি টাকা
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৮-১১-২০২২
দশ প্রকল্পে বাড়তি ব্যয় ৫২০০০ কোটি টাকা

নির্ধারিত সময় ও ব্যয়ে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না দেশের গুরুত্বপূর্ণ ১০টি উন্নয়ন প্রকল্প। দায়িত্বপ্রাপ্তদের গাফিলতি, নকশায় ত্রুটি, সঠিকভাবে সম্ভাব্যতা যাচাই না হওয়া, পণ্যমূল্য বেড়ে যাওয়া এবং যথাসময়ে অর্থ না পাওয়ার কারণেই মূলত এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

এছাড়া আছে ভূমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসন ব্যয়বৃদ্ধি, অহেতুক দীর্ঘসূত্রতা, বাস্তবায়নে নানা অনিয়ম এবং নতুন কাজ অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টিও। এতে প্রকল্পগুলোয় এখন পর্যন্ত অতিরিক্ত ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৫২ হাজার ৪৪১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা, যা দুটি পদ্মা সেতু নির্মাণ ব্যয়ের সমান।

এছাড়া কোনো প্রকল্পই নির্ধারিত মেয়াদে শেষ হয়নি। ফলে বাস্তবায়নের মেয়াদ কমপক্ষে আড়াই বছর এবং সর্বোচ্চ ৯ বছর বাড়তি সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। চিহ্নিত সমস্যাগুলো জরুরি ভিত্তিতে দূর করা না হলে বর্ধিত মেয়াদের মধ্যেও কয়েকটির বাস্তবায়ন শেষ নাও হতে পারে, সেক্ষেত্রে আবার বেড়ে যেতে পারে প্রকল্প ব্যয়-এমন আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, যে ১০ প্রকল্প নির্ধারিত সময় ও ব্যয়ে শেষ হয়নি, সেগুলো হচ্ছে পদ্মা সেতু, কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ, সাপোর্ট টু ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে পিপিপি প্রজেক্ট, পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ এবং দোহাজারী-রামু-গুনদুম পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ। আরও আছে বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি), খুলনা-মোংলা রেলপথ নির্মাণ, সিরাজগঞ্জ শিল্পপার্ক স্থাপন, চিটাগাং সিটি আউটার রিংরোড নির্মাণ এবং খুলনা শিপইয়ার্ড সড়ক প্রশস্তকরণ প্রকল্প।

প্রকল্পগুলোর মূল অনুমোদিত ব্যয় ছিল ৬৩ হাজার ৭৫৭ কোটি টাকা। এই মুহূর্তে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৬ হাজার ১৯৮ কোটি টাকা।

এছাড়া উল্লিখিত প্রকল্পগুলোর মেয়াদ বৃদ্ধির চিত্র হচ্ছে-পদ্মা সেতু প্রকল্পের মূল অনুমোদিত মেয়াদ ছিল ৮ বছর, বর্তমানে প্রকল্পটি শেষ হতে সময় লাগছে ১৪ বছর। ফলে বাড়তি সময় যাচ্ছে ৬ বছর। এছাড়া কর্ণফুলী টানেল প্রকল্পটি সাড়ে ৪ বছরের স্থলে ৮ বছর এবং অতিরিক্ত সময় সাড়ে ৩ বছর।

পাঁচ বছর মেয়াদি ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে সাড়ে ১২ বছর, অতিরিক্ত সময় সাড়ে ৭ বছর। পাঁচ বছর মেয়াদি পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্পটি লাগছে ৮ বছর, বাড়তি সময় আড়াই বছর। সাড়ে ৩ বছরের দোহাজারী-রামু-গুনদুম রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পটি লাগছে ১২ বছর, অতিরিক্ত সময় যাচ্ছে সাড়ে ৮ বছর।

চার বছর মেয়াদি বিআরটি প্রকল্পটি লাগছে ১১ বছর, বাড়তি সময় ৭ বছর। এছাড়া খুলনা-মোংলা রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পটি ৩ বছরের মেয়াদ ছিল। এখন যাবে ১২ বছর। ফলে অতিরিক্ত লাগবে ৯ বছর। সিরাজগঞ্জ শিল্পপার্ক স্থাপন প্রকল্পটি ৪ বছরে বাস্তবায়নের মেয়াদ ছিল। এখন যাচ্ছে সাড়ে ১২ বছর।

ফলে অতিরিক্ত সময় চলে যাচ্ছে সাড়ে ৮ বছর। চিটাগাং সিটি আউটার রিংরোড প্রকল্পটি ৩ বছরের মেয়াদ ছিল। বর্তমানে লাগছে ১১ বছর। অতিরিক্ত সময় চলে যাচ্ছে ৮ বছর। এছাড়া খুলনা শিপইয়ার্ড সড়ক প্রশস্তকরণ প্রকল্পটি ২ বছরে বাস্তবায়নের কথা ছিল। এখন যাচ্ছে ৯ বছর। ফলে এ প্রকল্পটিতে অতিরিক্ত সময় চলে যাচ্ছে ৭ বছর।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাস্তবায়ন দেরি হলে ব্যয় তো কিছুটা বাড়বেই। কিন্তু এসব প্রকল্পে ব্যয়বৃদ্ধির যুক্তিসংগত কারণও রয়েছে। কিন্তু অর্থনীতিবিদরা বলছেন, অবশ্যই বাড়তি এ খরচ জনগণের টাকার অপচয়। কেননা নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পগুলো শেষ হলে হয়তো এত অতিরিক্ত ব্যয় করতে হতো না।

এদিকে বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) সূত্র বলছে, প্রায় ৭০ শতাংশ প্রকল্পই নির্ধারিত সময়ে শেষ হয় না। অনেক সময় বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ব্যয় ও মেয়াদ বাড়লেও নির্দিষ্ট সময়ে, নির্দিষ্ট ব্যয়ে এবং নির্দিষ্ট মানে প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন জরুরি।

বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন শনিবার যুগান্তরকে বলেন, ৫২ হাজার কোটি টাকা কম টাকা নয়। এই টাকা দিয়ে আরও দুটি পদ্মা সেতু নির্মাণ করা যেত। তবে ব্যয়বৃদ্ধির কারণগুলো খতিয়ে না দেখলে বলা মুশকিল। এক্ষেত্রে ভূমি অধিগ্রহণের নতুন নীতিমালা হওয়ার আগেই যদি কোনো প্রকল্প অনুমোদন হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে ভিন্নকথা।

কিন্তু শুধু গাফিলতি, নকশায় ত্রুটি, বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতা-এরকম কারণে ব্যয় বেড়ে গেলে তা অবশ্যই অপচয়। এক্ষেত্রে কী ধরনের অঙ্ক পরবর্তী সময়ে যোগ করা হয় এবং কেন প্রকল্প তৈরির সময় গুরুত্ব দেওয়া হয়নি, সেসব বিষয়ে খতিয়ে দেখতে হবে। ঠিকাদারদের দিকে নজর রাখতে হবে। তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনাও জরুরি। 

বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সচিব আবু হেনা মোর্শেদ জামান যুগান্তরকে বলেন, এই বাড়তি ব্যয়কে অপচয় বলা যায় না। কেননা অনেক সময় সম্ভাব্যতা সমীক্ষায় ভুল থাকে। আবার সমীক্ষা ঠিক থাকলে বাস্তবতার কারণে নতুন অঙ্গ অন্তর্ভুক্তি কিংবা পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটে। আবার বর্তমানে যেমন ডলারের দাম বাড়ায় অনেক ক্ষেত্রে খরচ বাড়ছে। ফলে তখন ব্যয়বৃদ্ধি বা সংশোধন ছাড়া উপায় থাকে না। আর একটি প্রকল্প যখন চলমান থাকে, তখন সেটি শেষ না করলে তো এরই মধ্যে করা বিনিয়োগ নষ্ট হয়ে যাবে। ফলে শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়ন করতে হয়।

সূত্র জানায়, পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্পটি ২০০৭ সালের জুলাই থেকে ২০১৫ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের কথা ছিল। সেসময় মূল অনুমোদিত ব্যয় ধরা হয়েছিল ১০ হাজার ১৬১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। কিন্তু বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন থেকে সরে যাওয়াসহ নানা জটিলতায় শুরুতেই হোঁচট খায় প্রকল্পটি।

পরবর্তীকালে সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করে প্রথম সংশোধনীতে ব্যয় ধরা হয় ২০ হাজার ৫০৭ কোটি ২০ লাখ টাকা। কিন্তু বাস্তবায়ন পর্যায়ে নদীর তলদেশে মাটির স্তরের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ডিজাইন পরিবর্তনের কারণে দ্বিতীয় সংশোধন করতে হয়।

এ পর্যায়ে ব্যয বেড়ে দাঁড়ায় ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। পরবর্তী সময়ে মেয়াদ আরও বাড়িয়ে করা হয় ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত। সর্বশেষ ব্যয় বেড়ে মোট ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে মূল বরাদ্দের তুলনায় ব্যয় বেড়েছে ২০ হাজার ৩২ কোটি ৩০ লাখ টাকা। যদিও এরই মধ্যে যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে সেতুটি। কিন্তু প্রকল্প চলবে মেয়াদ পর্যন্ত। 

সাপোর্ট টু ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে (পিপিপি) প্রকল্পটি ২০১১ সালের জুলাই থেকে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়নের কথা ছিল। মূল অনুমোদিত ব্যয় ধরা হয় ৩ হাজার ২১৬ কোটি টাকা। কিন্তু সর্বশেষ মেয়াদ বাড়িয়ে করা হয়েছে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। জমির দাম এবং পুনর্বাসন ব্যয়সহ নানা কারণে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৪ হাজার ৯১৭ কোটি টাকা। এক্ষেত্রে অতিরিক্ত ব্যয় বেড়েছে ১ হাজার ৭০১ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। জানতে চাইলে প্রকল্পটি সাবেক পরিচালক (পিডি) কাজী মো. ফেরদৌস যুগান্তরকে বলেন, প্রকল্পের বাস্তবায়ন দেরি হলে ব্যয় বাড়বে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এ প্রকল্পের ক্ষেত্রে ভূমি অধিগ্রহণ এবং পুনর্বাসনের বেশি টাকা লাগায় ব্যয় বেড়ে যায়। তাই এই বৃদ্ধিকে অপচয় বলা যায় না।

এছাড়া পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্পটি ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের জুনের মধ্যে ৩৪ হাজার ৯৮৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়নের কথা ছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে চায়না এক্সিম ব্যাংকের অর্থায়ন সংক্রান্ত জটিলতায় প্রকল্পের বাস্তবায়ন পিছিয়ে যায়। এ পরিপ্রেক্ষিতে প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে ব্যয় ৪ হাজার ২৫৭ কোটি ৯৩ লাখ টাকা বাড়িয়ে মোট ব্যয় ধরা হয় ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। বাড়তি খরচ যাচ্ছে ৪ হাজার ২৫৪ কোটি ৮ লাখ টাকা। প্রকল্প পরিচালক ফখরুদ্দিন আহমেদ চৌধুরী এর আগে যুগান্তরকে জানান, বাড়তি ভূমি অধিগ্রহণ করতে হয়েছে। ফলে ব্যয় বেড়েছে। তাছাড়া চীনের অর্থায়নের কারণে কাজটা শুরু করতেও দেরি হয়েছে। 

কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বহুলেন টানেল নির্মাণ প্রকল্পটি ৮ হাজার ৪৪৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০১৫ সালের নভেম্বর থেকে ২০২০ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের জন্য অনুমোদন দেয় একনেক। কিন্তু চীনা এক্সিম ব্যাংকের ঋণ প্রক্রিয়ায় নানা জটিলতার কারণে বাস্তবায়ন পিছিয়ে যায় প্রকল্পটি।

পরবর্তী সময়ে প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে এক হাজার ৪৩৩ কোটি ৭৬ লাখ টাকা বাড়িয়ে মোট ব্যয় ধরা হয় ৯ হাজার ৮৮০ কোটি ৪০ লাখ টাকা। পরে ব্যয় বাড়িয়ে ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি ৪২ লাখ টাকা এবং মেয়াদ ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়। এরই মধ্যে প্রকল্পটির ব্যয় বাড়িয়ে মোট ব্যয় ১০ হাজার ৯৪৯ কোটি ৯১ লাখ টাকা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে।

সেই সঙ্গে মেয়াদও বাড়বে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। ফলে এ প্রকল্পে অতিরিক্ত ব্যয় হবে ২ হাজার ৫০৩ কোটি ৯১ লাখ টাকা। শনিবার প্রকল্পের একটি টিউবের কাজ সমাপ্ত হওয়ায় উদ্বোধন করা হয়েছে। প্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার হারুনুর রশীদ যুগান্তরকে বলেন, মেয়াদ ও ব্যয় বাড়াতে হবে। কেননা ডলারের দাম অনেক বেড়েছে। এর প্রভাব পড়ছে প্রকল্পের মোট ব্যয়ের ক্ষেত্রে। সেই সঙ্গে প্রকল্পে নতুন কার্যক্রম যুক্ত হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে মিয়ানমারের কাছে গুনদুম পর্যন্ত সিংগেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্পটি ২০১০ সালের জুলাই থেকে ২০১৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়নের কথা ছিল। সেসময় ব্যয় ধরা হয় এক হাজার ৮৫২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা।

উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা থেকে অর্থায়নের বিষয়টি নিশ্চিত না হওয়ায় বাস্তবায়ন পিছিয়ে যায়। সেই সঙ্গে প্রথম পর্যায়ে সিঙ্গেল লাইন মিটার গেজ ট্র্যাক নির্মাণের কথা থাকলেও একনেকে এবং ২০১৪ সালে রেলপথ মন্ত্রণালয় পরিদর্শনের সময় প্রধানমন্ত্রী মিটার গেজের পরিবর্তে ডুয়েল গেজ নির্মাণের নির্দেশনা দেন। ফলে প্রথম সংশোধনীতে ১৬ হাজার ১৮২ কোটি টাকা ব্যয় বাড়িয়ে মোট ব্যয় ধরা হয় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। বাস্তবায়নকাল ধরা হয়েছে ২০১৬ সালের জুন থেকে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত। এখন মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে। 

অতিরিক্ত অর্থব্যয়ের আরও একটি প্রকল্প হলো বিসিক শিল্পপার্ক, সিরাজগঞ্জ স্থাপন প্রকল্প। এটি ১৯৯৯ সালের ১৭ জুন অনুষ্ঠিত বিনিয়োগ বোর্ড সভায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী সিরাজগঞ্জে একটি শিল্পপার্ক স্থাপনের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত দেন। এরপর থেকেই শুরু হয় প্রকল্প প্রণয়নের কাজ। এর মাঝে চলে যায় প্রায় ২২ বছর।

দীর্ঘ সময়ে সরকার বদল হয়েছে। বর্তমান সরকারও টানা তিন মেয়াদ ধরে ক্ষমতায়। সেসময় আওয়ামী লীগ সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের সিদ্ধান্তের পরও প্রকল্পটির কাজ আজও শেষ হয়নি। দীর্ঘদিনেও কাজ শেষ না হওয়ায় খরচ বেড়েছে দ্বিগুণ। প্রকল্পটির মূল ব্যয় ছিল ৩৭৮ কোটি ৯২ লাখ টাকা।

কিন্তু সর্বশেষ সংশোধনীর মাধ্যমে করা হয় ৭১৯ কোটি ২১ লাখ টাকা। চলতি অর্থবছরের এডিপিতে প্রকল্পটি তারকা (স্টার) চিহ্ন দিয়ে যুক্ত করা আছে। ‘খুলনা থেকে মোংলা পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ’ প্রকল্পের মূল ব্যয় ছিল ১ হাজার ৭২১ কোটি ৩৯ লাখ ৩৭ হাজার টাকা। দ্বিতীয় সংশোধনীর মাধ্যমে আরও ৪৫৯ কেটি ব্যয় বাড়ানো হচ্ছে।

এতে প্রকল্পটির ব্যয় দাঁড়াচ্ছে ৪ হাজার ২৬০ কোটি ৮৮ লাখ ৫৯ হাজার টাকায়। সে হিসাবে প্রথম প্রাক্কলিত ব্যয়ের তুলনায় বর্তমান ব্যয় বেড়েছে আড়াই গুণ। সর্বশেষ সংশোধনী অনুযায়ী প্রকল্পের মেয়াদ ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত রয়েছে। সূত্র জানায়, ২০১১ সালে ‘চিটাগাং সিটি আউটার রিং রোড’ প্রকল্প হাতে নেয় সরকার।

উদ্দেশ্য ছিল শহরের যানজট নিরসনসহ বেশকিছু অবকাঠামো উন্নয়ন। একে একে ১১টি বছর পেরিয়ে গেলেও শেষ হয়নি কাজ। মেয়াদ বেড়েছে সাত দফা। নতুন করে চতুর্থ দফায় ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়ায় ৮৫৬ কোটি ২৮ লাখ ৬০ হাজার টাকার প্রকল্পের খরচ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৩৪৯ কোটি ১৯ লাখ ৪১ হাজার টাকায়। ফলে বাড়তি ব্যয় যাচ্ছে ২ হাজার ৪৯২ কোটি টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ।

জনদুর্ভোগ ও আতঙ্কের বিআরটি গাজীপুর-এয়ারপোর্ট (গ্রেটার ঢাকা সাসটেইনেবল আরবান ট্রান্সপোর্ট প্রজেক্ট) প্রকল্প। ফের মেয়াদ বাড়ছে এক বছর। ফলে চার বছরের এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সময় লাগবে ১১ বছর। মূল অনুমোদিত প্রকল্পটি ২০১২ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়নের কথা ছিল।

বর্তমানে তৃতীয় সংশোধিত প্রস্তাবে আরও ১ বছর বাড়িয়ে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। এটির মূল অনুমোদিত ব্যয় ছিল ২ হাজার ৩৯ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। দ্বিতীয় সংশোধনীর মাধ্যমে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৪ হাজার ২৬৮ কোটি ৩২ লাখ টাকা। ফলে এ প্রকল্পে বাড়ি যাচ্ছে ২ হাজার ২২৮ কোটি ৪৮ লাখ টাকা।

এখন তৃতীয় সংশোধনীতে এসে সরকারি তহবিলের ১৫৩ কোটি ২০ লাখ টাকা কমে যাচ্ছে, সেই জায়গায় বৈদেশিক ঋণ বেড়ে ১৫৩ কোটি টাকা ২০ লাখ টাকা হচ্ছে। কিন্তু মোট ব্যয় ঠিক থাকছে। প্রকল্প পরিচালক এএসএম ইলিয়াস শাহ যুগান্তরকে বলেন, আমরা এক বছর মেয়াদ বাড়ানোর জন্য প্রস্তাব দিয়েছি।

তবে এ পর্যায়ে আর ব্যয় বাড়বে না। আশা করছি, বর্ধিত মেয়াদের মধ্যেই এটির বাস্তবায়ন কাজ শেষ হবে। এদিকে পৌনে ৪ কিলোমিটার সড়ক ১৮.৩০ মিটার প্রশস্ত করতে সাড়ে ১০ বছর লাগছে। অথচ প্রকল্পটি অনুমোদনের সময় ২ বছরে সম্পন্ন করার কথা। পাঁচ দফা মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।

সেই সঙ্গে প্রায় ৯৯ কোটি টাকার ‘খুলনা শিপইয়ার্ড সড়ক প্রশস্তকরণ’ শীর্ষক প্রকল্পটির বাস্তবায়ন খরচ এখন ১৬০ কোটি ৩১ লাখ টাকা বাড়ানো হয়েছে। প্রকল্পটি শেষ করতে ২৫৯ কোটি ২১ লাখ টাকা লাগবে। ফলে বাড়তি খরচ যাবে ১৬০ কোটি ৩১ লাখ টাকা। সম্প্রতি সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে একনেক।

শেয়ার করুন