২৯ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার, ০৬:১৯:২৯ অপরাহ্ন
এবার সদর ছাড়তে নারাজ আ.লীগ, নতুন মুখ চায় বিএনপি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১০-০২-২০২৩
এবার সদর ছাড়তে নারাজ আ.লীগ, নতুন মুখ চায় বিএনপি

বায়ুদূষণের মাত্রা কমিয়ে আনার জন্য বিশ্বের এক নম্বরের খেতাব প্রাপ্ত শহর রাজশাহী সিটি করপোরেশন। এই শহর নিয়েই গঠিত রাজশাহী-২ (সদর) আসন। পদ্মা পাড়ে অবস্থিত প্রাচীন ঐতিহ্যের এই নগরী নিয়ে ২০০৮ সালে সংসদীয় আসন গঠিত হয়। এর আগে রাজশাহী-২ আসনটি ছিল সিটি করপোরেশন ও পবা উপজেলা নিয়ে।

১৯৯১ সালের পর বিএনপির ঘাটি হিসেবে খ্যাত রাজশাহী সদর আসনে প্রথম নৌকার জয় হয় ২০০৮ সালের নির্বাচনে। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটের প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীক নিয়ে ভোট করে সাংসদ নির্বাচিত হন ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা। ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নেয়ায় বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় দ্বিতীয়বারের মত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এক সময়ের রাজশাহী কাঁপানো তুখোড় ছাত্র নেতা বাদশা। তবে সর্বশেষ ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী তিনবারের সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনুর সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করে জিততে হয়েছে তাকে।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন জোটগত হলে আবারো নৌকা প্রতীক চাইবেন ফজলে হোসেন বাদশা। তবে এ আসনে এবার মনোনয়ন নিয়ে আগাম শুরু হয়েছে ১৪ দলীয় জোটের ঠান্ডা লড়াই। এবার ছাড় দিতে চায়না স্থানীয় আওয়ামী লীগ।

অপরদিকে, সদর আসনে এবারও মনোনয়ন চাইবেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু। তিনি মেয়র থাকাকালে ২০০১ সালে একবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তবে এবার স্থানীয় বিএনপির একটি অংশ এ আসনে দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রেজভীকে চাই। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি থাকালে দীর্ঘদিন এখানে রাজনীতি করেছেন।

আওয়ামী লীগ

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজশাহীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন এ আসনে এবার জোটের শরীকদের ছাড় দিতে রাজি নন নগর আওয়ামী লীগ। তারা চাইছেন আওয়ামী লীগ থেকে এবার প্রার্থী দিতে। গত নির্বাচন থেকে তারা তাদের এ দাবি দলের হাই কমান্ডে তুলে ধরা আসছে। সে ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ নিজ দল থেকে প্রার্থী দিলে মনোনয়ন চাওয়ার তালিকায় থাকবে পারে হাফ ডজন নেতার নাম।

এদের মধ্যে রয়েছেন, রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কালাম, সহসভাপতি শাহীন আক্তার রেনী, অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশা, সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আহসানুল হক পিন্টু। এর মধ্যে বেশী আলোচনায় মোহাম্মদ আলী কামাল, শাহীন আক্তার রেনী ও ডাবলু সরকার।

নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার বলেন, আগামী নির্বাচনে রাজশাহী সদর আসনে নৌকা প্রতীক যে পাবেন আমরা তাঁর হয়েই কাজ করবো। এর বাহিরে যাওয়ার সুযোগ নেয়। তবে গত তিনবার রাজশাহী সদর আসনে মহাজোটের প্রার্থী দেওয়া হয়েছে। এতে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অনেক ক্ষতি হয়েছে। বঞ্চিত হয়েছেন দলের নেতাকর্মীরা। তাই এবার এই আসনে দলীয় প্রার্থীকে মনোনয়ন দিতে আমরা কেন্দ্রের কাছে দাবি জানাবো। দল যেটি ভালো মনে করবে আমরা সেটি মেনে নিব।

তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী দেয়া হলে আমি মনোনয়ন চাইবো। এ জন্য প্রস্তুতিও রেখেছি বলে জানান তিনি।

আহসানুল হক পিন্টু বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরেই মাঠে থেকে কাজ করে যাচ্ছি। এভাবেই রাজনীতি করতে চাই। দল সুযোগ দিলে আগামীতে নির্বাচনে অংশ নিয়ে তার প্রতিফলন ঘটাতে চাই।

তিনি বলেন, এবার এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকেই মনোনয়ন দেওয়া উচিত। নেতাকর্মীদের মনোবল চাঙ্গা করতে এর কোনো বিকল্প নাই।

বিএনপি

বিএনপি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে এবারও দলীয় প্রার্থী হতে চান বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু। তিনি এখান থেকে তিনবার মেয়র ও একবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০০৮ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশ নিয়ে জোটের প্রার্থী ফজলে হোসেন বাদশা কাছে পরাজিত হন তিনি।

মিনু ছাড়াও স্থানীয় বিএনপির একাংশের নেতারা এ আসনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে দেখতে চান সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রেজভীকে। বর্তমানে তার পোস্টার শোভা পাচ্ছে রাজশাহী নগরের অলিতে গলিতে। রেজভীর মুক্তির দাবিতে রাজশাহীতে এ পোস্টার সাটানো হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজশাহী নগর বিএনপির এক নেতা জানান, রাজশাহী নগরে নেতৃত্বের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। তার বিএনপির নেতাকর্মীরা নতুন মুখ চায়। সে ক্ষেত্রে মিজানুর রহমান মিনুর বিকল্প হিসেবে নেতাকর্মীদের প্রথম পছন্দ রুহুল কবীর রেজভী।

১৯৯১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত রাজশাহী-২ (সদর) আসন ছিল বিএনপির দখলে। এর মধ্যে দুই বার কবির হোসেন ও একবার মিজানুর রহমান মিনু এমপি নির্বাচিত হন। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত মিনু সংসদ সদস্য ছিলেন। মিজানুর রহমান মিনু ৯১ সালে প্রথম রাসিকের মনোনিত মেয়রের দায়িত্ব পান। ৯৪ সালে রাসিকের প্রথম নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন তিনি। এর পর ২০০৭ সাল পর্যন্ত তিনি নির্বাচিত মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন।

মিজানুর রহমান মিনু বলেন, ‘আমরা নির্বাচন প্রস্তুতি ও খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আন্দোলন এক সঙ্গেই চালাচ্ছি। বড় দল হিসেবে অনেকেই মনোনয়ন চাইতে পারেন। কেন্দ্র থেকে যে সিদ্ধান্ত দেবে সবাই মেনে নেবেন এবং ধানের শীষের বিজয়ে কাজ করবেন। তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া দেশে আর কোন নির্বাচন করতে দেয়া হবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।’

শেয়ার করুন