বৈশ্বিক উষ্ণতা, জলবায়ু পরিবর্তন ইত্যাদি কারণ বিবেচনায় নিয়ে বিশ্ব যখন গ্রিন এনার্জি বা জ্বালানির দিকে ঝুঁকছে, তখনো বিশ্বে কয়লার ব্যবহার বেড়েই চলেছে। জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার নিষিদ্ধ করার পক্ষে বিজ্ঞানী-পরিবেশবাদীদের দাবির বিপরীতে ২০২২ সালে কয়লার ব্যবহার ইতিহাসে নতুন রেকর্ড করেছে। আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থা (আইইএ) এ তথ্য জানিয়েছে।
জ্বালানিবিষয়ক সংবাদমাধ্যম ওয়েলপ্রাইসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২ সালে জ্বালানি হিসেবে কয়লার ব্যবহার অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র কয়লার ব্যবহার উল্লেখযোগ্য হারে কমালেও বিশ্বে কয়লার ব্যবহার খুব একটা কমেনি।
আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থার তথ্য বলছে, ২০২২ সালে বিশ্বে মোট কয়লা ব্যবহৃত হয়েছে ৮৩০ কোটি টন, যা কিনা আগের বছরের চেয়ে ৩ দশমিক ৩ গুণ বেশি। এসব কয়লার বেশির ভাগই ব্যবহার করা হয়েছে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজে। ২০২২ সালে বিশ্বের মোট বিদ্যুতের ৩৬ শতাংশই এসেছে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে। যার পরিমাণ ১০ হাজার ৪৪০ টেরাওয়াট।
রাশিয়া ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেন আক্রমণের পর বিশ্বের জ্বালানি বাজারে এক নতুন যুদ্ধের সূত্রপাত হয়। রাশিয়ার ওপর নির্ভর করা ইউরোপে তেল-গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেয় দেশটি। পরে রাশিয়ার তেল-গ্যাস বা জ্বালানি খাতের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। আরও পরে এসে তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর জোট ওপেক এবং ওপেক প্লাস জ্বালানি উৎপাদন হ্রাস করার ঘোষণা দেয়। সব মিলিয়ে বিশ্ববাজারে তেলের দাম অনেক বেড়ে যায়। ফলে পশ্চিমা বিশ্ব বিকল্প হিসেবে গ্রিন এনার্জির দিকে ঝুঁকে পড়ে। ক্রমেই তারা কয়লার ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনে।
কিন্তু চীন ও ভারতের মতো দেশগুলোতে এই চিত্র বিপরীত। চীন এরই মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানির পথে বিশ্বের শীর্ষ অবস্থানে থাকলেও দেশটি একই সঙ্গে তেল, গ্যাস ও কয়লার ওপর দারুণভাবে নির্ভরশীল। আবার ভারত এখনো ট্র্যাডিশনাল কয়লা এবং অন্যান্য জ্বালানিনির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্রের ওপর নির্ভরশীল। ফলে সব মিলিয়ে এই দেশ দুটিসহ বিশ্বের অনেক দেশেই কয়লার চাহিদা বেড়েছে।
আইইএর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আঞ্চলিক দিক বিবেচনায় চলতি বছরের প্রথমার্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন যথাক্রমে কয়লার ব্যবহার ২৪ ও ১৬ শতাংশ কমিয়েছে। কিন্তু ভারত ও চীনের মতো দুটি দেশ অতীতের চেয়েও আরও ৫ শতাংশ বেশি কয়লার ব্যবহার বাড়িয়েছে।
জীবাশ্ম জ্বালানির সবচেয়ে বড় দুই ব্যবহারকারী বিশেষ করে ভারতকে কয়লা ব্যবহার থেকে সরিয়ে নেওয়া মোটেও সহজ হবে না। বিশেষ করে এই খাত থেকে ভারতকে সরিয়ে নিতে হলে তার আগে অন্তত ১ লাখ কোটি ডলার অর্থ বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে। তবে ভবিষ্যৎ প্রয়োজন বিবেচনায় এই খাতে অর্থলগ্নি খুব বেশি ঝুঁকিপূর্ণ নয়। তবে যাই হোক, আপাতত ভারত ও চীনে কয়লার ব্যবহার কমার কোনো সম্ভাবনা নেই। বরং ২০২৩ সালেও কয়লার ব্যবহার ২০২২ সালের রেকর্ড পরিমাণের কাছাকাছি থাকতে পারে।