১৯ নভেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ০৭:২৪:৩৩ অপরাহ্ন
কক্সবাজারের চকরিয়ায় নামতে শুরু করেছে বন্যার পানি, বাড়ছে দুর্ভোগ
  • আপডেট করা হয়েছে : ১০-০৮-২০২৩
কক্সবাজারের চকরিয়ায় নামতে শুরু করেছে বন্যার পানি, বাড়ছে দুর্ভোগ

কক্সবাজারের চকরিয়ায় টানা মুষলধারে বৃষ্টিতে পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যার পানি নামছে ধীর গতিতে। উপজেলার ১৮ ইউনিয়নের মধ্যে ৬ ইউনিয়নের বন্যার পানি কমে গেছে। এখনো ১২টি ইউনিয়নে নিম্নাঞ্চলের মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে।


পানি নেমে যাওয়ায় রাস্তাঘাট ও ঘরবাড়ির ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি, জ্বালানি, গোখাদ্য ও শৌচাগারের অভাবে মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে। খেত তলিয়ে যাওয়ার কারণে বাজারে সবজির সংকট দেখা দিয়েছে। এখনো প্রত্যন্ত এলাকায় সরকারি ত্রাণ তৎপরতা দেখা যায়নি।


উপজেলা মৎস্য, কৃষি ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলায় চিংড়িঘেরে বন্যার পানি প্রবেশ করে ৬৩ কোটি ১২ লাখ টাকা মাছ ভেসে গেছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের আওতাধীন প্রায় ৪৫ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ধসে গেছে। ৯ হাজার ৫৪৭ হেক্টর জমির রোপণ করা চারা, বীজতলা ও শাকসবজির খেত তলিয়ে গিয়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।


সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বীর মুক্তিযোদ্ধা জহিরুল ইসলাম সড়কের (মিনি বাজার রোড) তিন কিলোমিটার সড়কের অন্তত ৫০টি পয়েন্টে ভাঙন দেখা দিয়েছে। প্রপার কাকারায় এক শ মিটার সড়ক নদীতে তলিয়ে গেছে। স্থানীয় লোকজন পায়ে হেঁটে চলাচল করছেন। শান্তিবাজার-ইয়াংছা সড়কের অসংখ্য জায়গায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।


চকরিয়া পৌরসভা, ফাঁসিয়াখালী, হারবাং, বমুবিলছড়ি, চিরিংগা, ডুলাহাজারা ও খুটাখালী ইউনিয়ন থেকে বন্যার পানি সরে যাওয়ায় ক্ষতবিক্ষত আঞ্চলিক ও গ্রামীণ সড়কের চিত্র ভেসে উঠছে। এসব ইউনিয়নের অসংখ্য কাঁচা ঘরবাড়ি ধসে পড়েছে।


কাকারা মিনিবাজার স্থানীয় বাসিন্দা আব্দু রাজ্জাক বলেন, ‘চারদিন ধরে বন্যার পানিতে বন্দী জীবন পার করেছি। এখন পানি নামছে, দুর্ভোগ দ্বিগুণ হচ্ছে। মিনি বাজার সড়কটির অসংখ্য স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। অনেক অংশে ডেবেও গেছে। প্রতিবছর বন্যার পানিতে পুরো চকরিয়ার মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়ে। আমরা চাই দীর্ঘ মেয়াদি বেড়িবাঁধ।’


কাকারা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. সাহাব উদ্দিন বলেন, ‘ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডের পুরো এলাকা বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। এখন পানি নেমে গেলেও মানুষ চুলায় আগুন জালাতে পারছেন না। বিশুদ্ধ পানি, খাবার ও গবাদিপশুর গোখাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। ক্ষতবিক্ষত সড়ক দিয়ে মানুষ চলাচল করতে পারছেন না। জরুরিভাবে সড়ক সংস্কারের দাবি করছি।’ 


চকরিয়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা ফারহান তাজিম বলেন, ‘বন্যার পানিতে উপজেলার ৫ হাজার ৪৬২ হেক্টর জমিতে ১ হাজার ৬৪২টি চিংড়িঘের ও ৯৪২ হেক্টর জমিতে অবস্থিত ৫ হাজার ৬৮২টি পুকুরের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ৬৩ কোটি ১২ লাখ টাকার ২২৪ মেট্রিক টন মাছ ও ৬৬২ মেট্রিক টন চিংড়ি ভেসে গেছে। 


চকরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এস এম নাসিম হোসেন বলেন, ‘চলতি আমন মৌসুমে হাজার ১৯ হাজার ৫০০ হেক্টর আবাদের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। ইতিমধ্যে ৭ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে আমনের চারা রোপণ করা হয়। টানা বৃষ্টির প্রভাবে বন্যার পানিতে ৯ হাজার ৫৪৭ হেক্টর জমির রোপণ করা চারা, বীজতলা ও শাকসবজির খেত তলিয়ে গিয়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বন্যার পানি নেমে গেলে ক্ষতির পরিমাণ জানা যাবে।’ 


চকরিয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো. আবু হাসনাত সরকার বলেন, ‘চকরিয়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। বন্যার্ত মানুষদের জন্য ২০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।’ 


স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের চকরিয়া উপজেলা কার্যালয়ের প্রকৌশলী সাফায়াত ফারুক চৌধুরী বলেন, ‘উপজেলায় এলজিইডির আওতাধীন ৪২১ কিলোমিটার সড়ক রয়েছে। বন্যায় প্রায় ২৮০ কিলোমিটার মতো সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরমধ্যে কাকারা, ডুলাহাজারা, বমুবিলছড়ি, হারবাং ও পূর্ব বড়ভেওলায় প্রায় ৪৫ কিলোমিটার সড়ক ভেঙে ধসে গেছে।’


শেয়ার করুন