রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ দেশের প্রায় সব বিমানবন্দরে উড়োজাহাজের উড্ডয়ন ও অবতরণে পাইলটরা পাখি আতঙ্কে ভুগছেন। বিমানবন্দরের কাছাকাছি এলাকায় জলাশয় থাকায় মাছসহ কীটপতঙ্গ শিকার করতে আসে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি। রানওয়ে এলাকায় তাদের তাড়াতে রয়েছে এক দল বার্ড শুটার। পাশাপাশি কয়েক কোটি টাকার সাউন্ড মেশিনসহ লেজার যন্ত্রও রয়েছে। কিন্তু এত কিছুতেও কাজ হচ্ছে না।
জানা যায়, তিন বছরে বিভিন্ন বিমানবন্দরে পাখির আঘাতে (বার্ড হিট) ক্ষতিগ্রস্ত হয় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের লন্ডনগামী অত্যাধুনিক ড্রিমলাইনারসহ দেশি-বিদেশি অন্তত পাঁচটি উড়োজাহাজ। এর মধ্যে শাহজালালে এক দিনেই পৃথক দুটি পাখির আঘাতের ঘটনা ঘটেছে। এতে দুটি উড়োজাহাজই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর আগে বিমানবন্দরে পাখির আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ইউএস-বাংলা, কাতার এয়ারওয়েজ ও আমিরাত এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজ। অভিযোগ আছে, বিমানবন্দরে পাখি তাড়ানোর ক্ষেত্রে মনিটরিং ও জোরালো পদক্ষেপ নেই। ফলে প্রায়ই বার্ড হিটের ঘটনা ঘটছে।
শনিবার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পাখির আঘাতে পৃথক দুটি এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। উড্ডয়নের মুহূর্তে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি উড়োজাহাজে পাখি আঘাত হানে। এ সময় যাত্রী নিরাপত্তার কথা ভেবে পাইলট উড্ডয়ন ঠেকাতে উড়োজাহাজে জরুরি ব্রেক করেন। এতে পেছনের চাকা ফেটে যায়। ওই ফ্লাইটের ব্যাংককগামী যাত্রী আব্দুল করিম বলেন, এ ঘটনায় তারা অত্যন্ত আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন। তাদের ফ্লাইটটি প্রত্যাহার করা হয়। পরে তারা অন্য উড়োজাহাজে যাত্রা করেন।
বিমানের ওই ব্যাংককগামী ফ্লাইট ছাড়াও একই দিনে ফ্লাই দুবাই এয়ারলাইন্সের আরব আমিরাতগামী ফ্লাইটেও আঘাত হানে পাখি। বিমানবন্দরের কর্মকর্তারা জানান, গত বছর সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৃথক দুটি উড়োজাহাজে পাখি আঘাত হানে। এতে বিমানের লন্ডনগামী অত্যাধুনিক ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজের যাত্রা ব্যাহত হয়; ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা।
পাখির আঘাত নিয়ে শুধু যাত্রীরাই নন, আতঙ্কে থাকেন পাইলটরাও। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন পাইলট তাদের অভিযোগের কথা জানিয়েছেন। তাদের অভিযোগ, বিমানবন্দরে পাখি তাড়ানোর কাজে নিয়োজিত কর্মীদের দক্ষতায় ঘাটতি আছে। তাদের উদাসীনতার কারণে যেসব দুর্ঘটনা ঘটছে, তার জবাবদিহি নেই। তাদের কার্যক্রমও পর্যবেক্ষণ করা হয় না। এ কারণে উড়োজাহাজ উড্ডয়ন-অবতরণের সময় তারা পাখি আতঙ্কে থাকেন। তবে বিমানবন্দরের কর্মকর্তারা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
এ বিষয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম বলেন, বিমানবন্দর রানওয়ের দুই পাশে পাখি তাড়ানোর জন্য সার্বক্ষণিক ছয়জন বার্ড শুটার আছেন। এ ছাড়া রয়েছে অত্যাধুনিক সাউন্ড সিস্টেম ও লেজার মেশিন। তিনি জানান, বিমানবন্দরের আশপাশের এলাকায় বাসাবাড়ি ও গাছপালা থেকে পাখিরা আসে। তারা রানওয়ে এলাকায় এলে উড়োজাহাজের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এতে পাখি মারা গেলেও উড়োজাহাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অনেক সময় বড় দুর্ঘটনায় শঙ্কা সৃষ্টি হয়। পাখি তাড়ানোর জন্য নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মো. শফিউল আজিম বলেন, বিমানবন্দরে পাখির আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত উড়োজাহাজের মেরামতের কাজ চলছে।