চট্টগ্রামের যোগাযোগ খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের আশা : এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে মহিউদ্দিনের নামে
উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রার মুকুটে যুক্ত হচ্ছে আরেকটি পালক, চট্টগ্রামের মেগা প্রকল্প স্বপ্নের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। এক্সপ্রেসওয়েটি চালু হলে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটবে চট্টগ্রাম ও বন্দরকেন্দ্রিক যোগাযোগব্যবস্থায় এমনটাই আশা সংশ্লিষ্টদের। এরই মধ্যে প্রকল্পের কাজ ৮০ শতাংশের বেশি শেষ হয়েছে। আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে অক্টোবর মাসেই এটি উদ্বোধনের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে পরিচিত বন্দরনগরী চট্টগ্রামের ব্যবসাবাণিজ্যের প্রধান অন্তরায় যানজট। মূল শহর থেকে বিমানবন্দরে যেতেই লেগে যায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। এই যানজট দূর করে যোগাযোগ ও ব্যবসাবাণিজ্য স¤প্রসারণে নির্মিতব্য এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালু হলে মাত্র ২০-২৫ মিনিটে যাওয়া যাবে বিমানবন্দরে।
চট্টগ্রাম নগরের লালখান বাজার থেকে শাহ আমানত বিমানবন্দর পর্যন্ত নির্মাণাধীন চার লেনের এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নাম হবে চট্টল বীর খ্যাত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের তিন-তিনবারের নির্বাচিত মেয়র নগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর নামে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (চউক) বোর্ড সভায় ‘চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে’ মহিউদ্দিন চৌধুরীর নামে করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। চউক চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষের সভাপতিত্বে বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত হয়। ১৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে ও ৫৪ ফুট প্রশস্ত চার লেনের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে থাকবে ২৪টি লোপ ও র্যাম্প। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বাস্তবায়নে এই মেগা প্রকল্পে ব্যয় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে আমরা রাত-দিন কাজ করে যাচ্ছি। এরই মধ্যে ৮০ শতাংশের বেশি কাজ শেষ হয়েছে। তবে নানা প্রতিষ্ঠানের বাধার কারণে আমাদের বেগ পেতে হয়। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের জন্য টাইগার পাস রেলওয়ের উপরের অংশটি নিয়ে জটিলতা ছিল। দীর্ঘ আলোচনার পর সমস্যাটির সমাধান হয়েছে। তিনি জানান, ১৬ কিলোমিটারের মধ্যে বিমানবন্দর থেকে নিমতলা পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার কাজ শেষ। নিমতলা থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত বাকি ৬ কিলোমিটারের মধ্যে অধিকাংশ জায়গায় উপরের ঢালাই শেষ। চলছে রেলিংয়ের কাজ। বর্তমানে আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে মূল ফ্লাইওভার চালু করা। মূল ফ্লাইওভার চালু হলে আমরা র্যাম্প নির্মাণের কাজ করব। মানুষের ভোগান্তির কথা ভেবে আমরা এখন র্যাম্পের কাজ করছি না।
নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ শেষ হলে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের যোগাযোগ অবকাঠামোতে আমূল পরিবর্তন আসবে। এটি চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরের সঙ্গে যোগাযোগ সহজ ও দ্রুততর করবে। সরাসরি সংযোগ স্থাপন করবে বঙ্গবন্ধু টানেলের সঙ্গে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বাস্তবায়িত হলে চট্টগ্রামের যোগাযোগব্যবস্থার মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হবে। এক্সপ্রেসওয়েটি চালু হলে নগরীর যানজট নিরসনের পাশাপাশি চাপ কমবে বাণিজ্যিক রাজধানী বন্দর সড়কের ওপর। যেটি টানেল দিয়ে চট্টগ্রামকে যুক্ত করবে এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে। নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি আশিক ইমরান বলেন, এটির সুফল পুরো নগরবাসী পাবে। যাতায়াতে সময় কমবে। আগে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় লাগলেও এখন ২০ মিনিটে যাওয়া যাবে। এটি বাস্তবায়িত হলে চট্টগ্রাম শহরের যোগাযোগ অবকাঠামোতে নতুন দিগন্তের সূচনা হবে। তিনি বলেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ শেষ হলে শাহ আমানত সেতু কিংবা কালুরঘাট এলাকা থেকেও দ্রুততম সময়ে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে যাওয়া যাবে।
চউকের প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শাম জানান, এটি চট্টগ্রামের জন্য একটি মাইলফলক প্রকল্প। এ মেগা প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষের দিকে। অক্টোবরে
এক্সপ্রেসওয়েটি উদ্বোধন করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই এক্সপ্রেসওয়ের ফলে বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের যোগাযোগব্যবস্থা পাল্টে যাবে। যানজট কমবে নগরের। বন্দরকেন্দ্রিক নানা জটিলতা দূর হবে। তিনি বলেন, চউকের বোর্ড সভায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নামকরণের বিষয়টি সর্বসম্মতিক্রমে এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ফ্লাইওভার নামে অনুমোদন হয়েছে।’
নগরের লালখান বাজার থেকে শুরু হয়ে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সংযোগ সড়ক পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মিত হচ্ছে। র্যাম্প ও লুপ মিলে উড়াল সড়কটির মোট দৈর্ঘ্য হবে ২০ কিলোমিটার। চার লেনের এই এক্সপ্রেসওয়ের ৫৪ ফুট প্রস্থ রয়েছে। ৯টি এলাকায় ২৪টি র্যাম্প (গাড়ি ওঠানামার পথ) থাকবে এবং ৩৯০টি পিলার। নগরের টাইগারপাস মোড়ে চারটি, আগ্রাবাদ মোড়ে চারটি, বারিক বিল্ডিং মোড়ে দুটি, নিমতলী মোড়ে দুটি, কাস্টমস মোড়ে দুটি, সিইপিজেড মোড়ে চারটি, কর্ণফুলী ইপিজেডের সামনে দুটি, কাঠগড়ে দুটি এবং পতেঙ্গা সৈকত এলাকায় দুটি র্যাম্প থাকবে। এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মিত হলে চট্টগ্রামের শিল্প-বাণিজ্যে ইতিবাচক প্রভাব তৈরি করবে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ১১ জুলাই জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়। যৌথভাবে প্রকল্পটির নির্মাণকাজ পায় বাংলাদেশি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স ও চীনা প্রতিষ্ঠান র্যাঙ্কিন। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্পের পাইলিং কাজের উদ্বোধন করেন। সবশেষ সংশোধনীতে প্রকল্প ব্যয় ও সময় বাড়ানো হয়। সংশোধিত ব্যয় অনুযায়ী প্রকল্পের মোট ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে চার হাজার ৩৬৯ কোটি সাত লাখ ১০ হাজার ৮১৯ টাকা।