রাজশাহীতে উদয়ন নার্সিং কলেজের শিক্ষার্থীদের অপেশাদার আচরণ নিয়ে শুরু হয়েছে ব্যাপক সমালোচনা। ক্লিনিক্যাল প্র্যাকটিসে গিয়ে এক প্রসূতি নারীর ডেলিভারির অপারেশন চলাকালে অপারেশন থিয়েটারের ভেতরেই মোবাইলে ‘সেলফিবাজি’ শুরু করেন তারা। এমনকি ছবিগুলো পরবর্তীতে কলেজটির অফিসিয়াল ফেসবুক আইডিতে পোস্টও করা হয়। এ নিয়ে শুরু হয়েছে নানা বিতর্ক ও সমালোচনা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত সপ্তাহে বিএসসি ইন নার্সিং সাইন্স কোর্সের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীদের ক্লিনিক্যাল প্র্যাকটিসে পাঠায় উদয়ন নার্সিং কলেজ কর্তৃপক্ষ। এ ধাপে নারী ও শিশুদের সরকারি সেবাদান কেন্দ্র নগর মাতৃসদনে ক্লিনিক্যাল প্র্যাকটিস করানো হয় তাদের। কিন্তু প্র্যাকটিসে গিয়ে মোবাইলে সেলফিবাজিতে মত্ত হয়ে উঠেন ৫ জন শিক্ষার্থী। এক প্রসূতি নারীর ডেলিভারির অপারেশন চলাকালে অপারেশন থিয়েটারের ভেতরেই চিকিৎসকদের সামনে রীতিমতো সেলফি তুলতে থাকেন তারা। প্রসূতির আপত্তিকর জায়গার দৃশ্যও উঠে ছবিতে। একজন বাচ্চাকে কোলে নিয়ে ছিলেন। এসময় রোগীকেও শোয়ানো অবস্থায় তাকে ক্যামেরার দিকে তাকাতে বাধ্য করা হয়। তিনি ওই অবস্থাতেই নার্সিং শিক্ষার্থীদের ক্যামেরার দিকে তাকান। এমনকি পরে ছবিগুলো উদয়ন নার্সিং কলেজের অফিসিয়াল ফেসবুক আইডিতে আপলোড করা হয়। ক্যাপশনে লেখা হয়, ‘আজ নগর মাতৃসদনে উদয়ন নার্সিং কলেজের শিক্ষার্থীরা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন এবং সঙ্গে ছিলেন ডাক্তার রোকসানা পারভিন।’
সূত্র জানায়, নগর মাতৃসদন হলো রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) আওতাধীন একটি নারী ও শিশু স্বাস্থ্য সেবাদান কেন্দ্র।
তবে চিকিৎসকরা বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে না নিলেও রোগী ও তাদের স্বজনরা এ নিয়ে তুলেছেন আপত্তি। তাদের ভাষ্য, নার্সিং শিক্ষার্থীদের এসব কাণ্ডে বেশ বিব্রত হতে হয় তাদের। এ ধরণের কাজ করতে বারণ করলে উল্টো দুর্ব্যবহার করেন এসব শিক্ষার্থী।
রোগীর স্বজনরা জানান, এমন কাণ্ড নার্সিং পেশারও মর্যাদাহানি হয়। রোগীর অপারেশন চলাকালে এভাবে ছবি তোলা কোনো ‘সুস্থ’ মানুষের কাজ হতে পারে না। যেকোন জায়গায় ছবি তোলার ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের সজাগ দৃষ্টি রাখা দরকার।
রাসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. এফ.এ.এম আঞ্জুমান আরা বেগম বলেন, অপারেশন থিয়েটারের ভেতরে এভাবে সেলফি তোলা বা ছবি তোলা সঠিক কাজ হতে পারে না। বিষয়টি আমি দেখছি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নগর মাতৃসদন রাজশাহী সিটি করপোরেশন পরিচালিত নয়। তবে এটি সিটি করপোরেশনের আওতাধীন।
এ বিষয়ে উদয়ন নার্সিং কলেজের অধ্যক্ষ মাহফুজা খানমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি।
পরে আব্দুল্লাহ সৈকত নামে একজন নিজেকে ওই কলেজের এডমিশন অফিসার পরিচয়ে কল দিয়ে বলেন, ‘ছবি তোলার বিষয়টি ম্যাম জানেন না।’ অবশ্য কিছুক্ষণ পরই ছবিগুলো কলেজটির ফেসবুক আইডি থেকে ডিলিট করে দেয়া হয়।
এরপর শনিবার কলেজটির একটি নম্বরে কল দিয়ে অধ্যক্ষকে চাওয়া হয়। তখন এডমিশন অফিসার পরিচয়দানকারী সৈকত বলেন, নামাজের পর ম্যামের সাথে কথা বলে জানাবো তিনি সাংবাদিকের সাথে কথা বলবেন কিনা। পরে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও আর সাড়া মেলেনি।