বর্তমান সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে ধারাবাহিক কর্মসূচি দিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে বিরোধী দলগুলো। এবার এই আন্দোলনে যুক্ত হচ্ছে ছাত্রসংগঠনগুলোও। নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের আদলে ছাত্র আন্দোলন শুরু করে তা গণ-আন্দোলনে পরিণত করার লক্ষ্যে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে সংগঠনগুলো। ছাত্রনেতারা বলছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগের একক আধিপত্য কমিয়ে ক্যাম্পাসের গণতান্ত্রিক চরিত্র পুনরুদ্ধার এবং জাতীয় স্বার্থে ভূমিকা রাখতে বদ্ধপরিকর তারা।
সম্প্রতি সরকারবিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ছাত্রসংগঠনের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে বড় আন্দোলনের প্রস্তুতির বার্তা পাওয়া গেছে। পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) এ নিয়ে একটি প্রতিবেদনও তৈরি করেছে।
সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১৩ দফা দাবি ঘোষণা করেছে ৭টি বামপন্থী ছাত্রসংগঠনের জোট ‘গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট’। গত বছরের নভেম্বর থেকে জোটটি কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এই জোটে রয়েছে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (মার্ক্সবাদী), বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন (জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল), বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলন এবং বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ। গত শুক্রবার ১৩ দফা দাবিতে শাহবাগে ছাত্র-জনতার সমাবেশ করেছে জোটটি।
গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি রাগীব নাঈম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে চলমান নিপীড়নমূলক ব্যবস্থা আজ চূড়ান্তে পৌঁছেছে। আমরা সরকারের পদত্যাগ এবং সম্পূর্ণ ব্যবস্থা বদলের আরও ১২টি দাবি নিয়ে আন্দোলন করছি। ভবিষ্যতে আমাদের সকল কর্মসূচি এই ১৩ দফা আদায়ের লক্ষ্যে পরিচালিত হবে।’
এদিকে ডানপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলোও নির্বাচন সামনে রেখে ঐক্যবদ্ধ হতে শুরু করেছে। এরই মধ্য ‘সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য’ নামে এক মঞ্চে সংগঠিত হয়েছে ১০টি ডানপন্থী ছাত্রসংগঠন, যার অধিকাংশই ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যুক্ত।
সরকার পদত্যাগের দাবি না জানালেও আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ শেষে দুই পক্ষের সংঘর্ষে ছুরিকাঘাতে মাদ্রাসাছাত্র হাফেজ রেজাউল করিমের হত্যার বিচার দাবিতে জোটবদ্ধ হয়েছে এই সংগঠনগুলো। এই জোটে রয়েছে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ, ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশ, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক ছাত্র আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত ছাত্র মজলিস, বাংলাদেশ মুসলিম ছাত্র লীগ, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র সমাজ, ভাসানী ছাত্র পরিষদ, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র আন্দোলন, ছাত্রপক্ষ বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশ খেলাফত ছাত্র আন্দোলন। ডান ও বামপন্থী অন্য ছাত্রসংগঠনগুলোকেও জোটে যুক্ত করার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন নেতারা।
সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের লক্ষ্যের বিষয়ে জোটের মুখপাত্র ও ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের সভাপতি শরিফুল ইসলাম রিয়াদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘’৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে ছাত্রসংগঠনগুলো এক মঞ্চে এসে সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য গঠনের মাধ্যমে যেভাবে গণ-অভ্যুত্থান গড়ে তুলেছিল, সেভাবে সকল ছাত্রসংগঠনকে এক মঞ্চে নিয়ে আসার চেষ্টা করছেন তাঁরা। ইতিমধ্যে ছাত্রদল ও ছাত্র অধিকার পরিষদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছে এই জোট।’
১৯৯০ সালের ১০ অক্টোবর ছাত্রদল নেতা নাজিরউদ্দিন জেহাদ পুলিশের গুলিতে মারা যান। জেহাদের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগ, ছাত্রদলসহ তৎকালীন ক্রিয়াশীল ২৪টি ছাত্রসংগঠন নিয়ে ‘সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য’ গড়ে উঠেছিল। ছাত্রদের ধারাবাহিক আন্দোলনের সঙ্গে তখন দেশের অন্যান্য শ্রেণি-পেশার মানুষ যুক্ত হলে তা গণ-আন্দোলন থেকে গণ-অভ্যুত্থানে রূপ নেয়।
তবে যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দলগুলোর ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা এখনই সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন না। একাধিক সূত্র জানিয়েছে, তারা নিজেদের উদ্যোগে আরেকটি ছাত্রসংগঠনের জোট করার চেষ্টা করছে।
কয়েক মাস ধরে ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্য’ নামে একটি জোট গঠনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ। এ বিষয়ে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম আদীব আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এখনো চূড়ান্ত হয়নি, আলাপ-আলোচনা চলছে।’
বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৈকত আরিফ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বর্তমান ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের লক্ষ্যে গণতান্ত্রিক ছাত্রসংগঠনগুলোর ঐক্যবদ্ধ লড়াই জরুরি। যদিও আমরা এখনো সেটি গঠন করতে পারিনি। তবে আলাপ-আলোচনা চলছে, আমরা আশাবাদী।’
ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ছাত্রসংগঠনগুলোর সঙ্গে ঐক্যের চেষ্টা চালাচ্ছে ছাত্রদলও। ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরেই আহ্বান জানাচ্ছি যে যার জায়গা থেকে যেন ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ হয়। বেশ কিছু ছাত্রসংগঠনের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে। শিগগিরই আমরা ঐক্যের ডাক দেব। নানান কর্মসূচির উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।’