রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শাখা ছাত্রদলের দুই নেতাকে মারধর করে ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের এক সাবেক নেতা ও তাঁর অনুসারীদের বিরুদ্ধে।
রোববার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ একাডেমিক ভবনের সামনের একটি চায়ের দোকানে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর দপ্তর ও থানায় অভিযোগ দায়ের করবেন বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
মারধরের শিকার ছাত্রদলের দুই নেতা হলেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ আলী ও আহ্বায়ক কমিটির সদস্য নাফিউল ইসলাম জীবন। তাঁরা আহত হয়ে নগরের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (রামেক) চিকিৎসাধীন।
অভিযুক্তরা হলেন, ছাত্রলীগ নেতা সাকিবুল হাসান বাকী। তিনি নিজেকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক বলে পরিচয় দিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র তিনি। এ ছাড়া মতিহার হল শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি রিয়াদ, সোহরাওয়ার্দী হল ছাত্রলীগের কর্মী মুন, দর্শন বিভাগের ছাত্র টিপু সুলতান প্রমুখ।
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন ও ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রোববার বেলা ২টার দিকে ছাত্রলীগ নেতা সাকিবুল হাসান বাকী ও তাঁর অনুসারীরা শহীদুল্লাহ একাডেমিক ভবনের সামনের একটি চায়ের দোকানে বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন। সেখানে ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য নাফিউলকে ডেকে নেন সাকিবুলের অনুসারীরা। পরে ছাত্রদল নেতা রাশেদ আলীকেও ডেকে নেওয়া হয়। একপর্যায়ে নাফিউল ও রাশেদের ওপর হামলা চালানো হয়। তখন তাঁরা দৌড় দিলে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তাঁদের ধাওয়া করেন। পরে তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক দিয়ে ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন।
মারধরের শিকার ছাত্রদলের সদস্য নাফিউল ইসলাম বলেন, ‘একাডেমিক কাজে বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলাম। ক্যাম্পাসের শহীদুল্লাহ একাডেমিক ভবনের সামনে চায়ের দোকানে বসেছিলাম। এরপর বাকী একটা ছেলেকে দিয়ে আমাকে ডেকে নেয়। তাদের সঙ্গে বসার পর নানা প্রশ্ন করে। একপর্যায়ে আমার মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়। এ সময় রাশেদ ভাই এলে আমাদের দুজনকে মারধর করে। এমনকি আমার বাইকের চাবিও তারা রেখে দেয়। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর দপ্তর ও থানায় অভিযোগ দায়ের করা হবে।
অপর ছাত্রদল নেতা রাশেদ আলী বলেন, ‘ছাত্রলীগের এক কর্মী আমাকে ডেকে শহীদুল্লাহ কলা ভবনের সামনে নিয়ে যায়। সেখানে ছাত্রলীগ নেতা সাকিবুল ও তার অনুসারী ১৫ জন আড্ডা দিচ্ছিল। সেখানে আগে থেকে উপস্থিত ছিল আমাদের সদস্য নাফিউল। তারা আমাকে বসতে বলে ও পরিচয় জানতে চায়। আমি উত্তর দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা “ভাইয়ের মুখে মুখে উত্তর দিস” বলে আমার ও নাফিউলের ওপর হামলা চালায়। একপর্যায়ে তারা মাটিতে ফেলে কিল-ঘুষি মারতে থাকে। পরে দৌড়ে আমরা ক্যাম্পাস ত্যাগ করি।’
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সুলতান আহম্মেদ রাহী বলেন, ‘আমাদের নেতা-কর্মীর ওপর হামলা করে তারা অপরাধ করেছে। আমরা ছাত্র হিসেবে আইন নিজের হাতে তুলে নিতে পারি না। তাই আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানিয়েছি। প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ না নিলে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’
তবে মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন ছাত্রলীগ নেতা সাকিবুল হাসান বাকী। তিনি বলেন, ‘ছাত্রদলের কয়েকজন নেতা-কর্মী ক্যাম্পাসে অবস্থান করে বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে চেয়েছিল। তাদের দুজনকে ডেকে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। সেখানে মারধরের কোনো ঘটনা ঘটেনি।’
মোটরবাইকের চাবি রেখে দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ছাত্রদল নেতাদের একজন বাইকের চাবি রেখে চলে গেছেন। পরে চাবিটি আমরা প্রক্টর দপ্তরে জমা দিয়েছি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আসাবুল হক বলেন, ‘আমরা কিছুক্ষণ আগে ঘটনাটি সম্পর্কে জেনেছি। আমাকে কেউ একজন ফোন করে একটা বাইকের চাবি অফিসে জমা দিয়ে গেছে। আমরা এখন পর্যন্ত কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’