প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মানুষ যাতে জেনেশুনে সর্বজনীন পেনশনে অংশগ্রহণ করে এবং কোনো ধরনের প্ররোচনা বা অপপ্রচারে প্রভাবিত না হয়, সেদিকে সবাইকে নজর রাখতে হবে। সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এ নির্দেশ দেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার বিষয়ে জানিয়েছেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু হয়েছে। এটা মানুষের মধ্যে ব্যাপক সাড়া জেগেছে। এরই মধ্যে ১০ হাজারের বেশি রেজিস্ট্রেশন হয়ে গেছে। লাখেরও বেশি রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে। কিন্তু ঐতিহাসিক উদ্যোগটির বিপক্ষে মিথ্যা অপপ্রচার বা নেতিবাচক প্রচারণা চালানো হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী প্রকৃত তথ্য, সরকার কী করেছে, কী করতে যাচ্ছে, কীভাবে মানুষ উপকৃত হবেন-এ ব্যাপারটা জনগণের কাছে উপস্থাপন করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, যারা যেখানে কথা বলবেন, তারা (সরকারের বিভিন্ন সংস্থা) এটা জানাবেন। কেউ যদি এটা নিয়ে কোনো প্রশ্ন করেন, এর উত্তর দেবেন। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় থেকে একটা প্রচারের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যাতে এটা ব্যাপক প্রচার পায় এবং যাতে জনগণ সচেতন হয়। যারা অপপ্রচার চালাবেন, তাদের বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে-জানতে চাইলে সচিব বলেন, এটা নিয়ে আলাদা কোনো নির্দেশ দেওয়ার দরকার নেই।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বজনীন পেনশন স্কিম উদ্বোধন করার পরই প্রবাস স্কিম, প্রগতি স্কিম, সুরক্ষা স্কিম এবং সমতা স্কিমের আবেদন পড়া শুরু হয়ে যায়। উদ্বোধনের পর প্রথম দিনেই নিবন্ধন সম্পন্ন করে ১ হাজার ৭০০ জন চাঁদা পরিশোধ করেন। তারা প্রায় ৯০ লাখ টাকা চাঁদা জমা দেন। আর প্রথম এক সপ্তাহে চাঁদা পরিশোধ করে নিবন্ধনের পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন ৮ হাজার ৫৫১ জন। তাদের জমা দেওয়া চাঁদার পরিমাণ ছিল ৪ কোটি ৩৯ লাখ ২৫ হাজার টাকা।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবীদের জন্য চালু করা হয়েছে প্রগতি স্কিম। অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মরত বা স্বকর্মে নিয়োজিত ব্যক্তি যেমন: কৃষক, রিকশাচালক, শ্রমিক, কামার, কুমার, জেলে, তাঁতি প্রভৃতি পেশার ব্যক্তিদের জন্য চালু করা হয়েছে সুরক্ষা স্কিম। যার বর্তমান আয়সীমা বাৎসরিক সর্বোচ্চ ৬০ হাজার টাকা, তার জন্য চালু হয়েছে সমতা স্কিম। এ স্কিম গ্রহণকারী মাসিক চাঁদা দেবেন ৫০০ টাকা এবং সরকার থেকে দেওয়া হবে ৫০০ টাকা। আর প্রবাসীদের জন্য চালু করা হয়েছে প্রবাস স্কিম।
সর্বজনীন পেনশন স্কিমে ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সি একজন সুবিধাভোগী ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত এবং ৫০ বছরের ঊর্ধ্ব বয়স্ক একজন সুবিধাভোগী ন্যূনতম ১০ বছর চাঁদা দিয়ে আজীবন পেনশন সুবিধা ভোগ করবেন। পেনশনে থাকাকালীন ৭৫ বছর বয়স পূর্ণ হওয়ার আগে মারা গেলে পেনশনারের নমিনি পেনশন স্কিম গ্রহণকারীর ৭৫ বছর পূর্ণ হওয়ার অবশিষ্ট সময় পর্যন্ত পেনশন পাবেন।
চাঁদাদাতা কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা দেওয়ার আগেই মারা গেলে জমা করা অর্থ মুনাফাসহ তা নমিনিকে ফেরত দেওয়া হবে। চাঁদাদাতার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কেবল তার জমা করা অর্থের সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ ঋণ হিসাবে উত্তোলন করা যাবে। পেনশনের জন্য নির্ধারিত চাঁদা বিনিয়োগ হিসাবে গণ্য করে কর রেয়াত পাওয়ার যোগ্য হবেন এবং মাসিক পেনশন বাবদ পাওয়া অর্থ আয়কর মুক্ত থাকবে।
এদিকে বাসস জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রামের লালদিয়ায় একটি নতুন কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনার জন্য ডেনিশ শিপিং এবং লজিস্টিক জায়ান্ট মায়েরস্ক গ্রুপের প্রস্তাব বিবেচনা করবে। সোমবার মায়েরস্ক গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রবার্ট মায়েরস্ক উগলা এবং বাংলাদেশে ডেনিশ চার্জস ডি’অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড্রেস বি কার্লসেন সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি একথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সাক্ষাৎ অনুষ্ঠান হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর দীর্ঘদিন ধরে চালু রয়েছে এবং সরকার পায়রা বন্দর নামে আরেকটি বন্দর উন্নয়ন করছে এবং শিগগিরই এটি চালু হবে। ভারত, নেপাল এবং ভুটানকে পারস্পরিক সুবিধার জন্য এই বন্দরগুলো ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া হয়েছে।’
এ সময় মায়েরস্ক গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, ‘বাংলাদেশে কনটেইনার শিপিং এবং লজিস্টিক সাপোর্টের ক্ষেত্রে প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার স্বপ্নকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরে এর প্রতিফলন ঘটবে।’
বাংলাদেশে বন্দর ও লজিস্টিক সাপোর্টের উন্নয়নে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘এসব খাতে অনেক সুযোগ রয়েছে।’
মায়েরস্ক গ্রুপের সিইও আরও বলেন, এইচএন্ডএম, এমএন্ডএস, ওয়ালমার্ট এবং অন্যান্য বড় কোম্পানিগুলো বাংলাদেশ থেকে আরও আরএমজি পণ্য আমদানি করতে আগ্রহী। তিনি বলেন, ‘সহযোগিতার বৈচিত্র্যের অনেক সুযোগ রয়েছে। ডেনিশ সরকার লজিস্টিক নীতিকে অনেক বেশি সমর্থন করে।’
সাক্ষাৎ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব এম তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া এবং চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহাইল উপস্থিত ছিলেন।