১৬ এপ্রিল ২০২৫, বুধবার, ০৮:২৪:৪৬ পূর্বাহ্ন
ব্যাংক ডাকাতদের আইনের আওতায় আনার নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার
  • আপডেট করা হয়েছে : ১০-০২-২০২৫
ব্যাংক ডাকাতদের আইনের আওতায় আনার নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার

লুটপাটের মাধ্যমে ব্যাংক ডাকাতির সঙ্গে জড়িতদের খুব দ্রুত আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরসহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল রবিবার প্রধান উপদেষ্টা তার কার্যালয়ে ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি: সাম্প্রতিক চ্যালেঞ্জ এবং ভবিষ্যৎ করণীয়’ বিষয়ক এক সভায় এই নির্দেশ দেন। পরে রাজধানীর হেয়ার রোডে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।


প্রেস সচিব বলেন, যারা ব্যাংক ডাকাতির সঙ্গে জড়িত, যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আছে, তাদেরকে দ্রুত আইনের আওতায় আনার কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা।      


অধ্যাপক ইউনূস বলেছেন, তারা যেন আইনের আওতার বাইরে না থাকে। যে করেই হোক তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে হবে। প্রধান উপদেষ্টার বরাত দিয়ে প্রেস সচিব বলেন, যারা ব্যাংকের টাকা লুট করেছেন তারা আসলে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের টাকা লুটপাট করেছেন। তাই যেভাবেই হোক তাদেরকে আইনের আওতায় আনা জরুরি।


সভায় অধ্যাপক ইউনূস অর্থনীতির বর্তমান পরিস্থিতিতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। তবে তিনি বলেন, আমাদের আরও ভালো করা দরকার। আমরা খুব বাজে অবস্থায় ছিলাম, সেই জায়গা থেকে এখন ভালো জায়গায় আসছি। তবে আরও ভালো জায়গায় নিতে হবে, এটা আমাদের চ্যালেঞ্জ। বেক্সিমকোর যে জটিলতা রয়েছে, সেটির সুষ্ঠু সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন প্রধান উপদেষ্টা।


উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার অধ্যাপক ইউনূসের বরাত দিয়ে ব্রিফিংয়ে বলেন, প্রবাসী আয়ে ২৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। অভিবাসন বাড়ছে। তবে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, এখনই এটা নিয়ে উৎসব করার কিছু নেই। এ খাতে এখনো অনেক সম্ভাবনা রয়ে গেছে। প্রধান উপদেষ্টা এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন। এছাড়া, অধ্যাপক ইউনূস অভিবাসন বৃদ্ধির লক্ষ্যে যেসব দেশে বর্তমানে বাংলাদেশি অভিবাসনগামীদের ভিসা বন্ধ রয়েছে, সেগুলো  যেন দ্রুত চালু করা যায় সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন।


সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ফিরে এসেছে, সামনে রিজার্ভ আরও ভালো হবে :অর্থ উপদেষ্টা :সভায় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ জানান, সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ফিরে এসেছে। এখন আমরা একটা স্থিতিশীল জায়গায় আসছি। বর্তমানে যে বৈদেশিক রিজার্ভ রয়েছে, তা দিয়ে সাড়ে তিন মাসের বৈদেশিক দায় মেটানো সম্ভব। রিজার্ভের অবস্থা সামনে আরও ভালো হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।


ব্যাংক থেকে টাকা লুটপাটের ১২ অলিগার্ককে চিহ্নিত করা হয়েছে :বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর : সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর প্রধান উপদেষ্টাকে জানান, ব্যাংকের চুরি হওয়া টাকা উদ্ধারে ইতিমধ্যে এস আলম গ্রুপের সব সম্পদ জব্দ করা হয়েছে। এর পাশাপাশি ‘নগদ’-এর বিরুদ্ধে বেশকিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। গভর্নর জানান, ব্যাংক থেকে টাকা লুটপাট করেছেন এমন ১২ জন অলিগার্ককে চিহ্নিত করা হয়েছে। এরা কীভাবে টাকা নিয়েছেন সেগুলো বের করতে আমরা বিদেশি বিশেষজ্ঞদের সহযোগিতা নিচ্ছি। আন্তর্জাতিক প্রটোকল মেনে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সরকারের সব সংস্থা এ বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে।


আহসান এইচ মনসুর সভায় বলেন, পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে সহযোগিতা প্রদানের লক্ষ্যে যুক্তরাজ্যের একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ ঘুরে গেছে, সুইজারল্যান্ডের একটি প্রতিনিধিদলও বাংলাদেশে আসছে। এর বাইরে আমরা যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার সঙ্গে কথা বলছি। গভর্নর বলেন, সরকারের উদ্দেশ্য হচ্ছে—বাংলাদেশ থেকে ২৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের যে অর্থ পাচার হয়েছে, সেটা ফিরিয়ে আনা। এই টাকা কারা নিয়েছেন, কোথায় গেছে—এগুলো যদি চিহ্নিত করতে পারি, তাহলে যে দেশে টাকা পাচার হয়েছে, সেখানে এই টাকার সম্পদ জব্দ করে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা থাকবে।


আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিবিড় পর্যবেক্ষণে ‘কমান্ড সেন্টার’ চালু :প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ব্রিফিংয়ে জানান, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণের লক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনায় গতকাল সন্ধ্যা ৬টা থেকে যাত্রা শুরু করেছে কেন্দ্রীয় ‘কমান্ড সেন্টার’। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে এ কমান্ড সেন্টারটি পরিচালিত হবে। সেন্টারটির সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনী—পুলিশ, বিজিবি, র্যাব, কোস্ট গার্ড, আরমড ফোর্স ব্যাটালিয়নের সদস্যরা যুক্ত থাকবেন।


পতিত সরকারের রেখে যাওয়া ভঙ্গুর অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে :প্রেস সচিব :ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, পতিত সরকারের রেখে যাওয়া ভঙ্গুর অর্থনীতি ইতিমধ্যে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। কমেছে মূল্যস্ফীতি। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, রপ্তানি আয়, রেমিট্যান্স প্রবাহ, বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্য, কর্মসংস্থান এবং মাথাপিছু আয় বেড়েছে।


প্রেস সচিব বলেন, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের আগস্ট-ডিসেম্বর এই পাঁচ মাসে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। আগামী জুলাই মাসে মূল্যস্ফীতি কমে ৭ থেকে ৮ শতাংশে নেমে আসবে। গত তিন বছরের মধ্যে এই প্রথম বারের মতো বৈদেশিক  লেনদেনের ভারসাম্য উদ্বৃত্ত হয়েছে। মজুত ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে চলতি বছর ৯ লাখ টন খাদ্যশস্য আমদানি করা হচ্ছে বলেও তিনি জানান।


প্রধান উপদেষ্টার বরাত দিয়ে প্রেস সচিব বলেন, বৈঠকে অধ্যাপক ইউনূস কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। বৈঠকে গত ছয় মাসে দেশের অর্থনৈতিক অর্জন এবং আগামী দিনের পরিকল্পনা তুলে ধরেন অর্থ সচিব ড. মো. খায়রুজ্জামান।


এক প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেন, আইনশৃঙ্খলা নিয়ে কথা আসছে। কিন্তু বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো অবস্থায় রয়েছে। পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরের মধ্যে খুন সবচেয়ে কম হয়েছে। ৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগের নেতাদের পালিয়ে যেতে যারা সহায়তা করেছে, তাদেরকে বিচারের আওতায় আনা হচ্ছে না কেন? জবাবে শফিকুল আলম বলেন, যারা বিদেশে পালিয়ে গেছে, তাদের বেশির ভাগই ৫ থেকে ৮ আগস্টের মধ্যে গেছে। ঐ সময় দেশে কোনো সরকার ছিল না। ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিলেও পুলিশ নিষ্ক্রিয় ছিল। পুলিশকে কাজে  ফেরাতে অনেক সময় লেগেছে। এরপর এই অপরাধে কারা জড়িত ছিল, তাদের ব্যাপারে তদন্ত চলছে।


শেয়ার করুন