বিএনপিসহ বিরোধী দলের চলমান আন্দোলন এবং বাংলাদেশ ইস্যুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ অবস্থানের প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘এই সমস্ত ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। নৌকা সারা জীবন উজান ঠেলে ঠেলে এগিয়ে গেছে।’
আজ শনিবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে পুরোনো বাণিজ্য মেলার মাঠে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে পিপিপি প্রকল্প (কাওলা-ফার্মগেট) অংশের উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত সুধী সমাবেশে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মাঝে মাঝে আন্দোলন-সংগ্রাম দেখে অনেকে একটু ঘাবড়ে যায়। তারপর নিষেধাজ্ঞা আসে। ভিসা নিষেধাজ্ঞা, ইত্যাদি ইত্যাদি। আমার স্পষ্ট কথা। এই মাটি আমাদের। কাজেই ভয় দেখিয়ে কোনো লাভ নেই। ভয়কে জয় করে বাংলাদেশের জনগণ তার উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা দেশ স্বাধীন করেছি জাতির পিতার নেতৃত্বে। বাংলাদেশের মানুষ জানে অধিকার আদায় করতে। তবে বাংলাদেশ তো ছয় ঋতুর দেশ। এ জন্য আমরা দেখি কখনো বর্ষা, কখনো ঝড়, কখনো জলোচ্ছ্বাস, কখনো রৌদ্রোজ্জ্বল। আমরা বিভিন্ন সময় বিভিন্নটা দেখে আমাদের অভিজ্ঞতা আছে।’
উপস্থিত আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি আপনাদের বলতে চাই—আমি কবির ভাষায় বলব, মেঘ দেখে কেউ করিসনে ভয়/ আড়ালে তার সূর্য হাসে/ হারা শশীর হারা হাসি/ অন্ধকারেই ফিরে আসে। মেঘের ঘনঘটা আমরা দেখি। তারপর ওই তো সূর্য ওঠে। কাজেই ভয় দেখিয়ে কোনো লাভ নেই। ভয়কে জয় করে বাংলাদেশের জনগণ তার উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাবে।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, নৌকা সারা জীবন উজান ঠেলে ঠেলে এগিয়ে গেছে। ঝড়ঝঞ্ঝা পাড়ি দিয়েই নৌকা আজকে তীরে ঠেকে জনগণের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। নৌকা মার্কা স্বাধীনতা দিয়েছে। নৌকা মার্কা অর্থনৈতিক উন্নতি দিয়েছে। নৌকা মার্কা ডিজিটাল বাংলাদেশ দিয়েছে। নৌকা মার্কাই স্মার্ট বাংলাদেশ আমাদের দেবে।’
বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘অনেকেই নাকি গণতন্ত্র চোখে দেখে না। আর গণতন্ত্র উদ্ধার করবেন। যাদের জন্মই হচ্ছে অগণতান্ত্রিকভাবে, সংবিধান লঙ্ঘন করে, উচ্চ আদালত যাদের ক্ষমতা দখল অবৈধ ঘোষণা করেছে—তাদের হাতে গড়া দল কী গণতন্ত্র দেবে? তারা তো গণতন্ত্র দিতে জানে না। তারপরও তারা আন্দোলনের নামে অনেক সময় অনেক কথা বলে।’
সুধী সমাবেশে উপস্থিত সবার উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সবাইকে বলব, আত্মবিশ্বাস রেখে জনগণের জন্য কাজ করলে জনগণের ভাগ্য পরিবর্তন করা সম্ভব। আমরা তা প্রমাণ করেছি। তার জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা দরকার। অগ্নি-সন্ত্রাস, খুন, হত্যা—অনেক কিছু আমরা দেখেছি। কিন্তু সেইগুলি উত্তরণ ঘটিয়ে বাংলাদেশ ইনশা আল্লাহ এগিয়ে যাবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা জানি, সরকারি চাকরিজীবীরা পেনশন পায়, সাধারণ মানুষ অবসর ভাতা পায় না। তারা যখন বয়স্ক হয়ে যাবে, কর্মক্ষমহীন হয়ে যাবে, তখন তারা যাতে পেনশন পায়, সেই জন্য সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করেছি। ১৮ বছরের পর থেকে এ স্কিমে যোগ দিতে পারে, ৪০ বছর পরে থেকে সেই টাকা তুলতে পারবেন। ভবিষ্যৎ আর অন্ধকারে থাকবে না। শুধু বর্তমানের উন্নয়ন না, ভবিষ্যৎ যাতে আলোকোজ্জ্বল হয়, তার জন্য পেনশন স্কিম চালু করে দিয়েছি। যা আমাদের নির্বাচনী ওয়াদা ছিল। সেই ওয়াদা রক্ষা করতে পেরেছি।’
গণতান্ত্রিক স্থিতিশীলতায় দেশের এই উন্নয়ন উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আজকে বাংলাদেশের উন্নয়ন কেন হয়েছে। একটাই কারণ, ২০০৯ সাল থেকে গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার আমরা নিশ্চিত করে জনগণের ভোটে ক্ষমতায় এসে একটি গণতান্ত্রিক স্থিতিশীলতার পরিবেশ রাখতে পেরেছি। তার কারণেই আজকে বাংলাদেশের উন্নয়ন।’
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান প্রমুখ।