প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই চেতনায় বাংলাদেশের মানুষ জাগ্রত হবে। এই চেতনায় উদ্বুদ্ধ জনগণই আগামীতে দেশকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে। শুক্রবার জাতীয় জাদুঘরে স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত চিত্রশিল্পী বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহাবুদ্দিন আহমেদের চিত্রকর্ম প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। মাসব্যাপী এই প্রদর্শনীতে শিল্পী শাহাবুদ্দিনের ১৪০টি নির্বাচিত শিল্পকর্ম স্থান পেয়েছে।
প্রদর্শনীকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের প্রকৃতি, জনগণের অবস্থা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে জনগণ বিশেষ করে তরুণ-তরুণীদের সামনে তুলে ধরা হয়েছে। প্রদর্শনীর মাধ্যমে তারা দেশপ্রেম ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে শিল্পীর অনুভূতি জানার পাশাপাশি তার (শাহাবুদ্দিন) অনেক দুর্লভ চিত্রকর্ম দেখার সুযোগ পাবেন।’
প্রদর্শনীর সফলতা কামনা করে তিনি বলেন, ‘শাহাবুদ্দিন একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তিনি এখনো মুক্তিযোদ্ধা। কারণ তার শিল্পকর্ম মুক্তিযুদ্ধের চিন্তা ও চেতনাকে প্রতিফলিত করে। এটা আমাকে আরও অনুপ্রাণিত করে।’
এ সময় প্রধানমন্ত্রী শাহাবুদ্দিন আহমেদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘তিনি (শাহাবুদ্দিন) শিল্পকর্ম ও চিত্রকর্মের মাধ্যমে সারা বিশ্ব থেকে বাংলাদেশের জন্য সম্মান বয়ে এনেছেন।’ এর আগে প্রধানমন্ত্রী ফিতা কেটে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন এবং চিত্রকর্ম পরিদর্শন করেন। অনুষ্ঠানে তিনি ‘শাহাবুদ্দিন, এ রেট্রোস্পেকটিভ ১৯৭৩-২০২৩’ শীর্ষক বইয়ের মোড়কও উন্মোচন করেন। সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মো. কামরুজ্জামান। আরও বক্তব্য দেন জাতীয় জাদুঘরের ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক খলিল আহমেদ, শিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদ এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত ফরাসি রাষ্ট্রদূত মারি মাসদুপুয়। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘চিত্রকর্ম মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে যায়। শিল্পকর্ম মানুষের মধ্যে দেশপ্রেম ও চেতনা জাগ্রত করতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, আদর্শ ও ইতিহাস মুছে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। তবে কবি, শিল্পী, সাহিত্যিক ও লেখকরা তাদের রচনার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধরে রাখতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। এ কারণেই আমরা রাজনীতিবিদরা পরে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করেছি এবং রাজনৈতিক উপায়ে জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করেছি। এখন দেশের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ফিরে আসতে শুরু করেছে, যা একটি বড় অর্জন। আশা করছি প্রদর্শনীর মাধ্যমে জনগণের হৃদয়ে দেশপ্রেম ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা জাগ্রত হবে।
শিল্পী শাহাবুদ্দিন তার বক্তব্যে আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বঙ্গবন্ধুর প্রতি তার অনুরাগ ও স্মৃতিকথা তুলে ধরেন। স্বাধীনতার পর কীভাবে বঙ্গবন্ধু তাকে স্বাধীনতার পর ফ্রান্সের প্যারিসে পাঠিয়েছিলেন সে কথাও জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা উপস্থিত ছিলেন।