১৯ নভেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ০৪:৪২:৩০ অপরাহ্ন
এমসি কলেজে দলবদ্ধ ধর্ষণ: হাইকোর্টের আদেশ মানেনি রাষ্ট্রপক্ষ, বিচারে দীর্ঘসূত্রতা
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৫-০৯-২০২৩
এমসি কলেজে দলবদ্ধ ধর্ষণ: হাইকোর্টের আদেশ মানেনি রাষ্ট্রপক্ষ, বিচারে দীর্ঘসূত্রতা

সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় দুটি মামলা ৩০ দিনের মধ্যে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বদলির ব্যবস্থা করতে আদেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। কিন্তু তা বাস্তবায়ন করেনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বরং এই আদেশের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। ফলে দুই মামলার বিচার কার্যক্রম থমকে আছে। ২০২০ সালের ওই ঘটনার তিন বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ সোমবার।


মামলার বাদী গতকাল রোববার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এক বছর ধরে মামলার কোনো অগ্রগতি নাই। মন্ত্রণালয় গেজেট না করায় বিচারকাজ আটকে আছে। তারপরও আমরা ন্যায়বিচারের ব্যাপারে আশাবাদী।’


ধর্ষণের মামলা দুটি বর্তমানে সিলেটের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে আছে। ২০২২ সালের ১৫ ডিসেম্বর এক রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ মামলা বদলির আদেশ দিয়েছিলেন। চলতি বছরের ২৬ জুন আপিল বিভাগের আইনজীবী হরিপদ পালের স্বাক্ষরিত চিঠিতে বাদীপক্ষের আইনজীবীকে লিভ টু আপিল করার বিষয়ে জানানো হয়। তবে লিভ টু আপিলের এখনো শুনানি হয়নি। 


এ বিষয়ে হরিদাস পাল বলেন, ‘এটা সরকার করতে দিছে। সরকার আমাদের যখন যা দেয়, তখন তা করতে হয়। এটা আমাদের কাজ।’


বাদীপক্ষের আইনজীবীরা বলছেন, চাঞ্চল্যকর ওই ঘটনার বিচার কার্যক্রম দীর্ঘসূত্রতার দিকে যাচ্ছে। সে সুযোগে আসামিরা জামিনে বের হতে পারেন, শঙ্কা আছে ন্যায়বিচার পাওয়া নিয়েও। আইনজীবী শহিদুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘মামলা দুটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বদলির জন্য হাইকোর্ট বিভাগ আদেশ দেওয়ার পর রাষ্ট্রপক্ষ এর বিরোধিতা করে লিভ টু আপিল করল কোন স্বার্থে? কার স্বার্থে? ন্যায়বিচারের পক্ষে না বিপক্ষে, সেটা আমরা বুঝতে অপারগ।’ 


এ বিষয়ে আইন বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ‘যে মামলাটি দ্রুত বিচারে পাঠানোর জন্য বলা হয়েছে, সেটি না পাঠালেও ১৮০ দিনের মধ্যে বিচার করতে আইনত বাধ্যবাধকতা আছে। এরপরও সেটা এত দিন ধরে চলছে।’ 


জ্যোতির্ময় বড়ুয়া আরও বলেন, ‘হাইকোর্টের আদেশের বিপক্ষে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে ছয় মাস পরে আপিল করেছে। ফৌজদারি মামলা বিচারের সর্বোচ্চ দায়িত্ব রাষ্ট্রের। রাষ্ট্রই বিচার নিশ্চিত করবে। আদালত রাষ্ট্রের তৈরি এবং উপস্থাপিত সাক্ষ্য-প্রমাণ ও তথ্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত দেন। সুতরাং রাষ্ট্রের এখানে বড় ভূমিকা আছে। বিচার দ্রুত করতে পারবে না, এটার জন্য আবার রাষ্ট্রের আপিল করতে যাওয়াটা খুবই হতাশাজনক।’


২০২০ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন এক নারী। অভিযুক্তরা তাঁকে কলেজের প্রধান ফটকের সামনে থেকে তুলে ছাত্রাবাসে নিয়ে যান। তাঁর স্বামীকে আটকে রাখা হয় আরেকটি কক্ষে। অভিযুক্তরা দম্পতির সঙ্গে থাকা টাকা, সোনার অলংকার ছিনিয়ে নেন। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর স্বামী ধর্ষণের এবং পুলিশ বাদী হয়ে চাঁদাবাজি ও ছিনতাইয়ের মামলা করে।


আইনজীবীদের সূত্রে জানা গেছে, সবশেষ ১২ সেপ্টেম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলার শুনানির তারিখ ধার্য ছিল। কিন্তু ওই দিন কারাবন্দী কোনো আসামিকে হাজির করা হয়নি। আগামী ২৯ অক্টোবর একই আদালতে শুনানির পরবর্তী তারিখ ধার্য করা হয়েছে। 


বিচারের দীর্ঘসূত্রতার বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা সরকারি দলের হওয়ায় তাঁদের রক্ষা করতে নানা তালবাহানা শুরু হয়েছে। প্রথমে মানুষের যেভাবে আগ্রহ ছিল, এখন সেটা নেই। এ জন্য কালবিলম্ব করা হচ্ছে। আমরা মনে করেছিলাম দেশে সুশাসন আছে, এখন দেখছি সেটিও প্রশ্নবিদ্ধ।’


শেয়ার করুন