১৯ নভেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ০৩:৩৮:০৪ অপরাহ্ন
সেপ্টেম্বরে পাবনা-ঢাকা ট্রেন চালু না হওয়ার কারণ জানালেন রাষ্ট্রপতি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৮-০৯-২০২৩
সেপ্টেম্বরে পাবনা-ঢাকা ট্রেন চালু না হওয়ার কারণ জানালেন রাষ্ট্রপতি

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেছেন, ‘সরকার তো প্রতিশ্রুতি দেয়, ক্ষমতায় এসে অনেক প্রতিশ্রুতি দেয়, পাঁচ বছরের মধ্যে কি সেই সব প্রতিশ্রুতি পালন করতে পারে? কিছু পারে, কিছু পারে না। তাই আমি যে পাবনা-ঢাকা ট্রেন চলাচল সেপ্টেম্বরে উদ্বোধন বলে দিলাম মানে যে সেপ্টেম্বরেই হয়ে গেল, এটা ভাবার সুযোগ নেই। সবকিছুরই তো একটা নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিয়ে এটা হয় না। কোনো সময় হয়ে যায়, কোনো সময় হয় না।’


গতকাল বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে পাবনা সার্কিট হাউসে জেলায় কর্মরত সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এ কথা বলেন তিনি। 


দায়িত্ব গ্রহণের পর গত ১৬ মে প্রথম পাবনা সফরে এসে এডওয়ার্ড কলেজ মাঠে জনসভায় সেপ্টেম্বরে পাবনা-ঢাকা সরাসরি ট্রেন চলাচলের ঘোষণা দিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। গতকাল বুধবার সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে সেই ঘোষণা আর সেপ্টেম্বরে ট্রেন চালু না হওয়ার ব্যাখ্যা দেন তিনি।


রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘সেদিন প্রথমবার পাবনায় এসে তাড়াহুড়ো করে তো বলেছিলাম, সেপ্টেম্বরেই পাবনা থেকে ঢাকা ট্রেন চলবে। কিন্তু ট্রেন চালু হলো না কেন, তার পেছনে প্রেক্ষাপট রয়েছে। এখানেও অনেকেই প্রশ্ন করছে, ‘সেপ্টেম্বর মাস তো আইসে গেল, কাম তো কিছু দেহি না।’ অনেকেই আমাকে ফোন করে জানিয়েছে। আমি তো এদিকে লেগে আছি। ট্রেন চালুর বিষয়টি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য ফাইল প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর পর্যন্ত গিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মত দিয়েছেন যে, পাবনা থেকে ঢাকা ট্রেন চললে সরকারের বা রেল বিভাগের কী লাভ আছে, এটা একটু যাচাই করা দরকার। এটা সরকারপ্রধান যাচাই করতে বলতেই পারেন। তিনি সন্তুষ্ট হতে চান। তিনি রেল কর্তৃপক্ষকে সার্বিক বিষয় বিবেচনা করতে বলেছেন। রেল কর্তৃপক্ষও সেগুলো নিয়ে কাজ করছে। তাই আপাতত ট্রেন চালু না হলেও নিরাশ হওয়ার কিছু নেই। এখন এই পর্যায়ে আছে। কেউ এটা নিয়ে সমালোচনা করতেও পারে, না-ও করতে পারে। আমি যতটুকু করার আল্লাহর মর্জি ততটুকু করছি।’


জনপ্রতিনিধিরা পাবনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে কখনো কথা বলেননি উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘পাবনায় মেডিকেল কলেজ আছে, হাসপাতাল নেই। সবাই বিস্মিত হয়। আশা-আকাঙ্ক্ষা নিয়ে, আপনারা যাঁদের জনপ্রতিনিধি বানিয়েছেন, তাঁরা এ বিষয় নিয়ে সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট জায়গায় গিয়ে কখনো কথাই বলেনি, উত্থাপনই করেনি। কারও নলেজেই নাই। ২০০৮ সাল থেকে আজ পর্যন্ত এটা নিয়ে কোনো উচ্চবাচ্চ্য হয় নাই। বিষয়টা এমন দাঁড়িয়েছে যে, এটা ডেট কেস, মৃত কেস, এটা হওয়ার মতো নয়।’


তিনি বলেন, ‘পরে পরিকল্পনামন্ত্রীকে বললাম, এই প্রকল্পটা এমন এক জায়গায় নিয়ে আসেন, যাতে বাস্তবায়ন করা যায়। তারপর অত্যন্ত তড়িৎগতিতে এটা হতে থাকল। আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলে স্মরণ করিয়ে দিলাম। তারপর সবার আন্তরিকতায় সেটি একনেকে অনুমোদন হয়েছে। এখন পাবনায় এসেছি সেই মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উদ্বোধন করতে। তার পরও যাঁরা এত দিন বিষয়টি উত্থাপনই করেননি, কোনো দিন তাঁদের কেউ কেউ বলেছেন, ‘হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্তর নাকি কী যানি স্থাপন হবি, তে হোনে যায়ে কী হবি, এমনি হইত, ওমনি হইত।’ মানে লোকজন যেন উদ্বোধন অনুষ্ঠানের ওখানে না আসে, এ রকম একটি নেগেটিভ পাবলিসিটি হয়েছে। যারা ব্যর্থ তারা তো এটা করবেই।’


ইছামতী নদীর সৌন্দর্য বর্ধন এবং খনন, এটার কাজও অনেক দূর এগিয়ে গেছে জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘এসব কাজ করে আমার তো পাঁচ পয়সা লাভ নাই। আমি করব পাবনার মানুষের জন্য। যেখানে জন্মগ্রহণ করেছি, যেখানে মুক্তিযুদ্ধ করেছি, আমার দায়বদ্ধতা থেকে এগুলো করি। করার দায়িত্ব মনে করি। যাঁরা আপনাদের দ্বারা নির্বাচিত তাঁরা কী করলেন, না করলেন এটা আমার দেখার দরকার নাই। আমি যাঁদের দ্বারা নির্বাচিত এবং পাবনার মানুষ হিসেবে একটা দায়িত্ববোধ থেকে আমি পাবনার উন্নয়নে কাজ করে যাব।’ 


সাংবাদিকদের উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আপনারা আমাকে পছন্দ করেন, ভালোবাসেন, আগাগোড়াই। আমি এ জন্য কৃতার্থ এবং কৃতজ্ঞ। আপনারা তো জানেন, পাবনা থেকে এখন ঢাকায় প্রায় স্থায়ী হয়ে গেছি। পাবনার সঙ্গে আমার যোগাযোগ থাকত। আমি তো আসতাম সব সময়, নিজের বাসভবনে আসতাম। সবার সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ হতো। প্রেসক্লাবে তো আমি অন্তত একবার হলেও যেতাম এবং সবার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করতাম। খুবই ভালো লাগত। এবার এই সময়ে তাড়াহুড়োর মধ্যে পাবনায় এসেছি, তাই আর প্রেসক্লাবে যাওয়া হলো না।’


মতবিনিময় সভায় পাবনা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি প্রবীণ সাংবাদিক বীর মুক্তিযোদ্ধা রবিউল ইসলাম রবি, পাবনা প্রেসক্লাবের সভাপতি এ বি এম ফজলুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক সৈকত আফরোজ আসাদ, পাবনা সংবাদপত্র পরিষদের সভাপতি আব্দুল মতীন খান, প্রবীণ সাংবাদিক হাবিবুর রহমান স্বপনসহ জেলায় কর্মরত সাংবাদিকেরা উপস্থিত ছিলেন।


উল্লেখ্য, তিন দিনের সফরে বুধবার বিকেল ৪টা ২৫ মিনিটে হেলিকপ্টারযোগে পাবনায় আসেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় পাবনা মেডিকেল কলেজের ৫০০ শয্যা হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন এবং বিকেল ৪টায় সাঁথিয়া উপজেলার ইছামতী নদীতে নৌকাবাইচ দেখবেন ও পুরস্কার বিতরণ করবেন। এরপর শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে হেলিকপ্টারযোগে বঙ্গভবনের উদ্দেশ্যে পাবনা ত্যাগ করবেন।


শেয়ার করুন