১৫ এপ্রিল ২০২৫, মঙ্গলবার, ০৭:০৭:১৯ অপরাহ্ন
এইডসের জ্ঞান নিতে মালয়েশিয়া যাচ্ছেন ১১ কারা কর্মকর্তা
  • আপডেট করা হয়েছে : ০১-১০-২০২৩
এইডসের জ্ঞান নিতে মালয়েশিয়া যাচ্ছেন ১১ কারা কর্মকর্তা

কারাবন্দী এইডস (এইচআইভি পজিটিভ) রোগীদের দেখভালসংক্রান্ত কর্মশালায় যোগ দিতে ১১ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল মালয়েশিয়ায় যাচ্ছে। কিন্তু প্রতিনিধিদলে নেই কোনো চিকিৎসক, নার্স বা ফার্মাসিস্ট। যাঁরা যাচ্ছেন, তাঁরা সবাই কারা কর্মকর্তা, যাঁদের রোগী ও তাদের চিকিৎসার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। বিষয়টি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন কারাগারে কর্মরত চিকিৎসকেরা।


জানা যায়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্পের আওতায় কারাবন্দী এইডস রোগীদের কীভাবে দেখভাল করতে হয়, তা জানতে মালয়েশিয়ায় যাবে এই প্রতিনিধিদলের সদস্যরা। তাঁরা মালয়েশিয়ার কারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। সরেজমিনে সেখানকার কারাগার দেখবেন। এ জন্য কারা কর্মকর্তা ও চিকিৎসাসেবাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সমন্বয়ে একটি প্রতিনিধিদল গঠন করতে বলা হয়। গত ২৪ সেপ্টেম্বর সুরক্ষা সেবা বিভাগের একজন উপসচিবের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলের নামের তালিকা প্রকাশ করা হয়। তালিকার ১০ জনই কারাগারের নির্বাহী ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা। তাঁরা হলেন যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের চলতি দায়িত্বে থাকা সিনিয়র জেল সুপার সুরাইয়া আক্তার, কক্সবাজার জেলা কারাগারের জেল সুপার মো. শাহ আলম খান, নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারের জেল সুপার মোহাম্মদ মোকাম্মেল হোসেন, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মোহাম্মদ মাহবুবুল ইসলাম ও কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২-এর জেলার শাহাদাত হোসাইন। 


এ ছাড়া তালিকায় আছেন কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার হাসনা জাহান বিথি, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মো. এমরান হোসেন মিয়া, সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মো. শাখাওয়াত হোসেন, রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মো. নিজাম উদ্দিন এবং কারা অধিদপ্তরের ডেপুটি জেলার মো. সাইদুল ইসলাম। ৩-৫ অক্টোবর পর্যন্ত তিন দিনের এই সফরে যাচ্ছেন তাঁরা।


স্বাস্থ্যবিষয়ক কর্মশালায় অংশগ্রহণের জন্য এই সফরের আয়োজন হলেও সেখানে স্বাস্থ্যসংশ্লিষ্ট কেউ না থাকায় হতাশা প্রকাশ করেছেন কারাগারে কর্মরত চিকিৎসক ও নার্সরা। এসব কারণে ক্ষোভ ও হতাশায় অনেক চিকিৎসক ও নার্স কারাগারের চাকরি ছেড়েছেন।


এ প্রসঙ্গে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের চিকিৎসক ডা. রেজা মো. সারোয়ার আকবর বলেন, ‘ভাই, এসব বলে কোনো কাজ হয় না। কিছুদিন আগে শ্রীমঙ্গলে একটি স্বাস্থ্যসংক্রান্ত সেমিনার বা কর্মশালা হয়েছে, সেখানেও স্বাস্থ্যসেবা দেন এমন কাউকে বলা হয়নি। জেল সুপার ও জেলাররাই সেখানে অংশগ্রহণ করে থাকেন। আর এটা তো বিদেশ! এখানে আমাদের যেতে দেবেন? এসব কারণে কোনো চিকিৎসক থাকতে চান না। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের একজন ভালো ডাক্তার প্রেষণ বাতিলের আবেদন করছেন। সবাই চলে যেতে চান।’ 

ঢাকার কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারের একজন চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, কারাগারে কেন স্বাস্থ্যসেবাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা থাকতে চান না এই ঘটনাই তার প্রমাণ। নাম প্রকাশ করে কোনো কথা বললেই নানা ধরনের হয়রানিতে পড়তে হয়।


চাঁদপুর জেলা কারাগারের ফার্মাসিস্ট মো. আতিকুর রহমান জানান, ‘যেকোনো ধরনের সরকারি ট্যুর জেলাররাই সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। এখানে হক কথা বললেই ঝামেলায় পড়তে হয়। যাঁরা অধিকারের কথা বলেন, তাঁদের বান্দরবান-খাগড়াছড়িতে পাঠানো হয়। তাই কেউ আর কথা বলেন না।’


ভোলা জেলা কারাগারের ডিপ্লোমা নার্সিং কর্মকর্তা সুপ্রকাশ ব্যাপারী বলেন, ‘এইডসসহ যেকোনো ধরনের রোগব্যাধিসংক্রান্ত আলোচনা সভা, সেমিনার বা কর্মশালায় ডাক্তার, ফার্মাসিস্ট ও নার্সিং কর্মকর্তারাই যাওয়ার কথা। কিন্তু কারাগারে তা কখনো হয়েছে বলে মনে পড়ে না। ২০০৪ সাল থেকেই এমন অবস্থা দেখে আসছি। এ কারণে অনেকে চাকরি ছেড়ে চলে গেছেন।’


শেয়ার করুন