মহারাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন (এমসিএ) স্টেডিয়ামে গতকাল বাংলাদেশ দলের অনুশীলনে যে শব্দটা বেশি শোনা গেল, ‘ওয়াচ! ওয়াচ!’ বেলা ২টা থেকে অনুশীলনের শুরুতে মাঝ উইকেটের পাশে ঝালিয়ে নিচ্ছিলেন মুশফিকুর রহিম আর নাজমুল হোসেন শান্ত। কিছুক্ষণ পরপর তাঁদের শট উড়ে এসে পড়তে থাকল গ্যালারিতে। লং অন-লং অফ সীমানার গ্যালারিতে থাকা সংবাদমাধ্যমকর্মীদের দিকেই বল বেশি আসতে থাকল। শট খেললেই শাঁ করে বল পার হয়ে যাচ্ছে সীমানা। শান্ত-মুশফিকের মতো দলের বাকি ব্যাটাররাও উড়িয়ে মারার ভালোই প্রস্তুতি নিয়ে রাখলেন। স্কয়ারের সীমানা কিছুটা বড় মনে হলেও লং অন-লং অফ ৬৫ মিটারের বেশি হওয়ার কথা নয়।
পুনের নেটের পিচই এমন ব্যাটিংবান্ধব, তাহলে মূল উইকেট কেমন হতে পারে? এ মাঠে যে ৭টি ওয়ানডে এখন পর্যন্ত হয়েছে, ইনিংসে গড়ে রান উঠেছে ২৯৪! ১৪ ইনিংসের ৮টিতেই ৩০০ পেরিয়েছে। এই আটটি ৩০০ পেরোনো ইনিংসের চারটিই ভারতের। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে ইংল্যান্ডের করা ৩৫০ রান ভারত পেরিয়েছিল ৩ উইকেট আর ১১ বল হাতে রেখে। সেই ম্যাচে ভারতের করা ৭ উইকেটে ৩৫৬ রান এ মাঠের সর্বোচ্চ। এই মাঠে নিয়মিত রানবন্যা বইয়ে দেওয়া বিরাট কোহলি ৭ ম্যাচে ২ সেঞ্চুরি, ৩ ফিফটিতে ৪৪৮ রান করে আছেন সবার ওপরে। গড় তাঁর ৬৪।
২০১১ বিশ্বকাপ সামনে রেখে তৈরি করা হয়েছিল মহারাষ্ট্রের নতুন স্টেডিয়ামটি। ১২ বছর আগে ম্যাচ না পেলেও এবার পাঁচটি ম্যাচ পেয়েছে তারা। এর মধ্যে দুটি ম্যাচ বাংলাদেশের। শহর থেকে ৩২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মহারাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের নতুন এই স্টেডিয়ামে কালই বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ। স্টেডিয়ামের সতেজ উইকেটে যে মুঠো মুঠো রান অপেক্ষা করছে, পরিসংখ্যান আর দুই দলের অনুশীলনের চিত্র তা বলে দিচ্ছে। দুই দলকেই কাল পাওয়ার হিটিং বা ছক্কা মারার অনুশীলন বেশি করতে দেখা গেল।
বাংলাদেশ ফিরে যাওয়ার পর সন্ধ্যায় ভারতীয় ব্যাটারদের অনুশীলন দেখে মনে হলো, আগে ব্যাটিং করলে নির্ঘাত এঁরা ৪০০ করে ফেলবেন! এই বিশ্বকাপে ভারত অবশ্য এখনো আগে ব্যাটিং পায়নি। পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, আফগানিস্তানের বিপক্ষে টানা যে তিন জয়—প্রতিটিতে বোলাররা জয়ের মঞ্চ প্রস্তুত করে দিয়েছেন। ব্যাটাররা শুধু আনুষ্ঠানিকতা সেরেছেন। ভারতের শক্তিশালী টপ অর্ডার বাংলাদেশের বিপক্ষে রানবন্যা বইয়ে দিতে প্রস্তুত। উপমহাদেশের দল বাংলাদেশের বিপক্ষে ভারত নিশ্চয়ই কোনো ঘূর্ণি-মন্থর উইকেটে খেলবে না। হাই স্কোরিং উইকেটই হবে কোহলি-রোহিতদের প্রথম পছন্দ।
প্রশ্ন হচ্ছে, কাল বাংলাদেশ কি পারবে পুনের রানপ্রসবা উইকেটে ৩০০ পেরোনো স্কোর গড়তে? দলের ব্যাটিংয়ের যে বিবর্ণ দশা, এ প্রশ্নের উত্তর এখনই দেওয়া কঠিন। পাওয়ার প্লে শেষ না হতেই নিয়মিত বাংলাদেশের টপ অর্ডার তাসের ঘরের মতো ধসে পড়ছে। ওপেনাররা রান পাচ্ছেন না। দ্রুত মিডল অর্ডার উন্মোচিত হয়ে যাচ্ছে। দুর্বল টপ অর্ডারের কারণে বাংলাদেশকে খেলতে হচ্ছে আট ব্যাটার নিয়ে। মিডল, লোয়ার মিডল অর্ডার অভিজ্ঞ তিন ব্যাটার সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম আর মাহমুদউল্লাহর ওপর শেষ পর্যন্ত ভরসা করতে হচ্ছে। ব্যাটিং ভালো হচ্ছে না, দ্বিধায় ভোগা টিম ম্যানেজমেন্ট ইচ্ছেমতো ব্যাটিং অর্ডার পরিবর্তন করছে। তাতে ব্যাটাররা নিশ্চিত থাকতে পারছেন না কে কোন পজিশনে নামবেন।
অবশ্য কাল প্রতিপক্ষ যতই শক্তিশালী হোক, ৫০ ওভারের ক্রিকেটে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের রেকর্ড যথেষ্ট ভালো। ২০১৯ বিশ্বকাপের পর গত ৫ বছরে ৫ ওয়ানডের ৩টিতেই জিতেছে বাংলাদেশ। গত মাসে এশিয়া কাপে কলম্বোয় সেই জয়ের স্মৃতি এখনো টাটকা সাকিবদের। পুনেতে আরেকটি উজ্জ্বল স্মৃতি রাখতে হলে কিছুতেই ওই কাঁপাকাঁপির ব্যাটিং চলবে না। এখানে রান উৎসবই শেষ কথা।