১৯ নভেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ০৯:২০:৪০ অপরাহ্ন
আলোচনায় আবার মার্কিন নিষেধাজ্ঞা
  • আপডেট করা হয়েছে : ৩১-১০-২০২৩
আলোচনায় আবার মার্কিন নিষেধাজ্ঞা

শান্তিপূর্ণ পরিবেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক উপায়ে সম্পন্ন করার পথে যে বা যারা অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে, তাদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের স্পষ্ট ঘোষণা আছে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে। এর বাইরে মানবাধিকারের মারাত্মক লঙ্ঘনের অভিযোগে ব্যক্তি, সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের ওপর দেশটির নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করার নজির আছে। ২৮ অক্টোবর ঢাকায় রাজনৈতিক সমাবেশকে কেন্দ্র করে সংঘটিত সহিংসতা ও প্রাণহানির পর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের বিষয়টি জোরালোভাবে আলোচনা হচ্ছে ঢাকায় বিদেশি কূটনৈতিক মহলে।


মার্কিন অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লুর গত ২৮ জানুয়ারির বিবৃতির প্রতি ইঙ্গিত করে ঢাকা ও ওয়াশিংটনের কূটনীতিকেরা জানান, সেদিনের সহিংসতার পর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরসহ দেশটির বিভিন্ন সংস্থা বাংলাদেশ-সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় পুনরায় পর্যালোচনা শুরু করেছে। ভয়েস অব আমেরিকার মাধ্যমে দেওয়া এই বিবৃতিতে লু বলেছেন, ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র সহিংসতার ‘সব ঘটনা’ পর্যালোচনা করবে।


ডোনাল্ড লুর এই বক্তব্যের অন্তর্নিহিত অর্থ কী, এমন প্রশ্নে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের এক কূটনীতিক বলেন, যদি তারা ঘটনাগুলো বিস্তারিত পর্যালোচনা করে, তাহলে তারা কোনো না কোনো ছোটখাটো পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে।


ঢাকায় কূটনৈতিক ও অন্যান্য সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, ২৮ অক্টোবরের সহিংসতার ভিডিও চিত্র ও তথ্য মার্কিনরা নিজস্ব বিভিন্ন সূত্র থেকে সংগ্রহ করেছে। সরকার ও বিরোধী বিএনপির পক্ষ থেকে কিছু ভিডিও চিত্র মার্কিনদের দেওয়া হলেও তারা নিজেদের সূত্রে পাওয়া ভিডিও চিত্র ও তথ্যকেই গুরুত্ব দিচ্ছে বেশি। তাদের পর্যবেক্ষণ হলো, সেদিনের সহিংসতায় একাধিক রাজনৈতিক দলের কিছু নেতা-কর্মীর পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাংশের, বিশেষ করে পুলিশের কিছু সদস্যের জড়িত থাকার ইঙ্গিত পাচ্ছে তারা। 


এমন পরিস্থিতিতে সরকার বা বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কী করার আছে, এমন প্রশ্নে বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্ট হুমায়ুন কবির আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘তাঁদের (যুক্তরাষ্ট্র) প্রত্যাশার সঙ্গে আমাদের (বাংলাদেশের) প্রত্যাশার সমন্বয় ঘটাতে হবে। খোঁজখবর রাখতে হবে। বিষয়গুলো একটু আগেভাগে বুঝে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগে থাকতে হবে।’ 


ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের দুজন কূটনীতিক জানান, বাংলাদেশ ইস্যুতে সক্রিয়, এমন কিছু মার্কিন ব্যক্তি ও লবিস্ট ফার্ম বাংলাদেশ পুলিশ ও বিভিন্ন পদধারী ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য দেশটির সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে চাপ দিয়ে চলেছে। 


ঢাকায় কাজ করে যাওয়া সাবেক মার্কিন কূটনীতিক জন ডেনিলউইজ গতকাল সোমবার এক এক্স (সাবেক টুইটার) পোস্টে বলেন, বাংলাদেশ পুলিশ অনেক আগে নাগরিকদের নিরাপত্তার দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছে। বরং এটি একটি দমনমূলক হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। 


ডেনিলউইজের এই সমালোচনা সম্পর্কে বাংলাদেশ পুলিশের বক্তব্য জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গণমাধ্যম ও জনসংযোগ) এনামুল হক সাগর আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের নজরে আসেনি। তাই এ বিষয়ে মন্তব্য করতে পারব না।’


ডেনিলউইজ পুলিশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী ব্যক্তিদের জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত না করার জন্য মার্কিন পররাষ্ট্র বিভাগ ও জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।


ঢাকায় দেশটির এক কূটনীতিক আজকের পত্রিকাকে বলেন, নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের ২৮ অক্টোবরের ভূমিকার পাশাপাশি তাদের অতীত রেকর্ডও বিবেচনায় নেওয়া হতে পারে। 


কী ধরনের রিপোর্ট বা রেকর্ড বিবেচনায় নেওয়া হতে পারে, এমন প্রশ্নে মার্কিন ওই কূটনীতিক বলেন, মানবাধিকারের মারাত্মক লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব গোয়েন্দা রিপোর্ট, মানবাধিকার পরিস্থিতি সম্পর্কে ঢাকার দূতাবাস ও পররাষ্ট্র দপ্তরের নিজস্ব বার্ষিক রিপোর্ট, জাতিসংঘ, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের রিপোর্টগুলো এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। 


যুক্তরাষ্ট্র শিগগির কোনো সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকলে, দেশটি বাংলাদেশ সরকারের ওপর মহলে কাউকে না কাউকে আগেভাগে অনানুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে থাকতে পারে বলে এক কূটনীতিক জানান। 


স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান পুলিশ, র‍্যাব, বিজিবি, কোস্ট গার্ডসহ বিভিন্ন বাহিনীর প্রধানদের সঙ্গে গতকাল সচিবালয়ে বৈঠক করেছেন। এ বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি আলোচনায় এসেছে কি না, নিশ্চিত হওয়া যায়নি।


তবে যুক্তরাষ্ট্র সাধারণত কোনো শক্ত পদক্ষেপ নেওয়ার আগে সময় দেয় বলে জানান দেশটিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে ইতিপূর্বে দায়িত্ব পালন করা হুমায়ুন কবির। তিনি বলেন, ভিসা নিষেধাজ্ঞার কথা যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ সরকারকে জানিয়েছিল গত ৩ মে। এরপর ওদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এ বিষয়ে ঘোষণা দেন ২৪ মে। আর ভিসা নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করার কথা বলেছে ২২ সেপ্টেম্বর। 


এর আগে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র‍্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের আগে মার্কিন কংগ্রেস ও সরকার ১৪ মাস সময় নিয়েছিল বলে হুমায়ুন কবির জানান।


শেয়ার করুন