বিএনপির সঙ্গে সরকারের সংলাপের দরজা বন্ধ হয়ে যায়নি বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
তিনি বলেছেন, দরজা তো বন্ধ হয়নি। আমরা সংবিধানের কাঠামোর মধ্য থেকে যে কোনো শর্তহীন আলোচনায় রাজি আছি।
বুধবার সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ কথা বলেন। এর আগে ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।
বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে কী আলাপ হয়েছে, জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তেমন কোনো আলাপ হয়নি। তিনি বলেছেন, সঙ্কট সমাধানে সংলাপ হচ্ছে প্রধান হাতিয়ার। আমরা বলেছি, আমরা সবসময় সংলাপকে স্বাগত জানাই। সংলাপের মাধ্যমে রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান হওয়া উচিত বলে আমরাও মনে করি। সংবিধান আমাদের যেভাবে কাঠামো করে দিয়েছে, সেটা অনুসারে সংলাপ করতে হবে। এটা সারাহ কুকও স্বীকার করে নিয়েছেন। তিনিও বলেন, সংলাপের বিকল্প নেই। সব অংশীজনের সঙ্গে সংলাপের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করার কথা তিনিও বলেছেন। এটা কোনো পরামর্শ নয়, এটা আমাদের মধ্যে আলাপচারিতা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য সামনে এসে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ চাই, সহিংসতা চাই না। তিনি আলাপ-আলোচনা করার জন্য সবসময় নির্দেশ দেন, যেন পরিস্থিতি শান্ত থাকে, সেটা আমরা চালিয়ে যাচ্ছি।
আপনারা সংলাপের কোনো উদ্যোগ নিচ্ছেন কিনা- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, যারা আসবে, তাদের সঙ্গে আমরা কথা বলবো। শর্তহীনভাব আসতে হবে। সংবিধানের কাঠামো মেনেই আমাদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। সংবিধানের বাইরে যদি কেউ কিছু বলেন, তাহলে তো সেটা হবে না।
আপনারা ক্ষমতায় আছেন, বিরোধীদের তো আপনাদের ডাকতে হবে- এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনেকেই তো আসছেন। তাদের প্রয়োজনে আমাদের ফোন করছেন। তারা তো বলতে পারেন, আমরা কথা বলতে চাই, আমরা হরতাল চাই না। এটা তো তারা বলেননি কোনোদিন। আমরা তো বলছি, দরজা তো বন্ধ হয়নি। আমরা যে কোনো আলোচনায় রাজি আছি, সেটা সংবিধানের কাঠোমোর মধ্য থেকে।
নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলকে আলোচনার জন্য ডেকেছে নির্বাচন কমিশন। বিএনপি বলেছে, তারা যাবে না- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সেটা তারা সবসময় বলে। ২০১৪ সালেও বলেছে। যে দলের প্রতি দেশের জনগণ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, সেই দল নিশ্চিতভাবে নির্বাচনে এলে জয়লাভ করতে পারবে না। তারা সংলাপ চায় না, সহিংসতা চায়। সহিংসতা করে তারা একটি পরিবেশ তৈরি করতে চায়। কিন্তু আমাদের দেশের জনগণ সহিংসতা চায় না।
জাতিসংঘ সরকারকে সংযম প্রদর্শনের জন্য বলেছে- এ বিষয়ে আসাদুজ্জামান খান বলেন, জাতিসংঘ তাদের দায়িত্ব পালন করছে। যেন তারা (বিএনপি) ভায়োলেন্সে না যায়, তাদের তো এটা মানা উচিত। ভায়োলেন্সে তারা না গেলেই তো পারে, আমরা তো সংযম দেখাচ্ছি। আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এত অত্যাচারের পরেও ধৈর্য ধরেছে। একজন পুলিশকে কুপিয়ে হত্যা করেছে, কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিল। আমাদের পুলিশ যেভাবে সংযম দেখিয়েছে এজন্য আমি গর্বিত। ভায়োলেন্স আমরা করছি না। জাতিসংঘ এটা বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে বলেছে।
অবরোধের বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সব তো আপনারা নিজেরাই দেখছেন। গাড়ি-ঘোড়া চলছে। দোকানপাট খুলছে, অফিস-আদালত চলছে। বিচ্ছিন্নভাবে দু-একটি বাসে আগুন ধরাচ্ছে। আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিচ্ছে।
এর আগে, ব্রাসেলস সফর নিয়ে মঙ্গলবার বিকালে গণভবনে সংবাদ সম্মেলন করেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে এক সাংবাদিক জানতে চান, মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস নির্বাচন নিয়ে শর্তহীন সংলাপে বসার কথা বলেছেন। এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান কী?
বিএনপিকে খুনিদের দল আখ্যা দিয়ে দলটির সঙ্গে সংলাপের বিষয়টি একরকম উড়িয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, কার সঙ্গে সংলাপ করব। খুনিদের সঙ্গে আবার কীসের সংলাপ?
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বিরোধী দলের সঙ্গে সংলাপ। বিরোধী দলটা কে? সংসদীয় নিয়মে বিরোধী দলের একটা ব্যাখ্যা আছে। বিরোধী দল হচ্ছে সেই দল যাদের সংসদে নির্বাচিত প্রতিনিধি আছে। এর বাইরেরগুলো পরিগণিত হয় না। আমেরিকায়ও হয় না। ট্রাম্পকে তারা (যুক্তরাষ্ট্র) কী বলবে? যদিও আমরা তাদের মতো সরকার ব্যবস্থায় নেই। এটা মাথায় রাখতে হবে।