১৯ নভেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ১০:৪৩:২৫ পূর্বাহ্ন
রাজশাহীতে নৌকা পেলেও অস্বস্তিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৬-১২-২০২৩
রাজশাহীতে নৌকা পেলেও অস্বস্তিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা

রাজশাহীর ৬টি আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দৌড়ে ছিলেন ৪১ নেতা। তাঁদের মধ্যে বর্তমান সরকার দলের বর্তমান এমপিদের মধ্যে থেকেই ৩ জনকে বাদ দেওয়া হয়েছে। বাদ পড়লেও তারা তিনজনই প্রার্থী হয়েছেন। আর জোটের শরীক দল ওয়াকার্স পার্টির এমপি ফজলে হোসেন বাদশার ভাগ্যের চাকা এখনো দদুল্যমান। এই অবস্থায় নৌকা পেলেও রাজশাহীর ৪টি আসনের প্রার্থীরা রয়েছেন চরম অস্বস্তিতে। বিশেষ করে রাজশাহীর তিনটি আসনে সরকারদলীয় এমপিরা স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকায় অনেকটা বেকায়দায় আছেন নৌকার প্রার্থীরা। তবে দুই-একজন এমপি নির্বাচন থেকে সরে আসার আভাস দিয়েছেন দলের সিদ্ধান্ত মেনে।


দলীয় সূত্র মতে, রাজশাহী-২ আসনে (সদর) আসন থেকে মনোনয়ন তুলেছিলেন আওয়ামী লীগের ৬ নেতা। তাঁদের মধ্যে থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী কামাল। তবে এখানে গত তিনবার সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়া মহাজোটের প্রার্থী ও ওয়াকার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা নৌকা নিয়ে নির্বাচন করতে আগ্রহী।যদিও গত ১৫ বছরে বাদশা এই শহরের এমপি হয়েও তেমন কোনো অবদান রাখতে পারেননি উন্নয়নে। এমনকি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ভোটের জয়ী হলেও তিনি তাদের সঙ্গেই তৈরী করেছেন দূরুত্ব। ফলে আগামী নির্বাচনে বাদশাকে নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মাঝে রয়েছে চরম ক্ষোভ।


আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের এবার শক্ত অবস্থানের কারণে বাদশাকে নৌকা আর না দেওয়া হতে পারে বলেও মনে করছেন অনেকেই। আবার বাদশাও নৌকা ছাড়তে নারাজ। এই অবস্থায় নৌকা পেলেও আশা-নিরাশার দলা-চলে অবস্থান করছেন মোহাম্মদ আলী কামাল। আবার বাদশাকে নৌকা দেওয়া হলেও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা শেষ পর্যন্ত এবার তার পাশে থাকবেন কিনা সেটি নিয়েও রয়েছে চরম শঙ্কা।


রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক আহসানুল হক পিন্টু বলেন, আমরা আর নৌকা কারো হাতে দিতে চাই না। রাজশাহী সদরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের এবার প্রাণের দাবি এবার এখানে দলীয় এমপি থাকুক। এ কারণে আমরা আর জোটের এমপি এখানে চাই না।’


রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসন থেকে মনোনয়ন তুলেছিলেন বর্তমান এমপি আয়েনসহ ৬জন। তাঁদের মধ্যে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদকে। তবে এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে এখান থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নিচ্ছেন বর্তমান এমপি আয়েন উদ্দিন। এই অবস্থায় নৌকা পেয়েও অস্বস্তিতে আছেন আসাদ। এমপি আয়েনের ঘোনিষ্ট হওয়ায় পবা-মোহনপুর আওয়ামী লীগের অধিকাংশ শীর্ষ নেতাদের বাদ দিয়ে আসাদ তার নির্বাচন পরিচালনা কমিটি করেছেন। এই অবস্থায় দলের নেতার্কীদেরই এখনো মাঠে নামাতে পারেননি আসাদ। ফলে নৌকা পেলেও এমপি আয়েন প্রার্থী থাকায় অনেক নেতাকর্মী এখনো আয়েনের সঙ্গেই আছেন।


তবে জানতে চাইলে এমপি আয়েন উদ্দিন বলেন, ‘আমি দলের স্থানীয় নেতাকর্মীদের চাপের কারণে নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছি। তবে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যাবো না। দলের স্বার্থের জন্য আমি সব করবো। আমি দ্রুতই কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে আমার শেষ সিদ্ধান্ত নিবো।’


নৌকার প্রার্থী আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, ‘আমি সবাইকে নিয়ে কাজ করতে চাই। আশা করি সব নেতাকর্মীরা নৌকার পক্ষেই থাকবেন।’


রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন তুলেছিলেন বর্তমান এমপি এনামুল হকসহ ৫ জন। তবে তাহেরপুর পৌরসভার মেয়র আবুল কালাম আজাদকে মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ। এখানেও নিজ সমর্থকদের দাবিরমুখে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন বর্তমান এমপি এনামুল হক। এখানেও দলের অনেক নেতাকর্মী এমপি এনামুলের সঙ্গে সঙ্গে আছেন। আবার একটি অংশ আছেন নৌকার প্রার্থী কালামের দিকে। এই অবস্থায় দুই প্রার্থীর মধ্যেই চলছে রশি টানাটানি। কে কাকে ভাগিয়ে নিয়ে নির্বাচনী মাঠে নামাতে পারেন, সে প্রতিযোতিগাও চলছে। ফলে নৌকা পেলেও চাপেরমুখে মুখে আছেন আবুল কালাম আজাদ। তবে অধিকাংশ নেতাকর্মীরাই তাঁর সঙ্গে আছেন বলে দাবি করেছেন নৌকার প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ।


এদিকে, রাজশাহী-৫ আসনে (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আওয়ামী লীগের মনোনয়ন তুলেছিলেন বর্তমান এমপি মুনসুর রহমানসহ ৮ জন। তাদের মধ্যে থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে সাবেক এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী আব্দুল ওয়াদুদ দারাকে। এখানেও দুই প্রার্থীর মধ্যে চলছে মনোস্তাত্বিক দ্বন্দ্ব। দুইজনের দিকেই নেতাকর্মীরা ভাগ হয়ে নির্বাচনী কাজে অংশ নিচ্ছেন। ফলে দারা নৌকা পেলেও খুব একটা স্বস্তিকর পরিস্থিতিতে নাই। যেমনটি ঘটেছিলে ২০১৪ সালের নির্বাচনে। ওই বার বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি হয়েছিলেন দারা।


জানতে চাইলে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী আব্দুল ওয়াদুদ দারা বলেন, ‘নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হলেও ভালো লাগে। আমি চাই প্রতিদ্বন্দ্বিতা হোক। খালি মাঠে জয় পেলেও ভালো লাগবে না।’


শেয়ার করুন