সারা জীবন লড়াই-সংগ্রাম করেছেন দেশ ও মানুষের জন্য। এনে দিয়েছেন মুক্ত স্বাধীন প্রিয় স্বদেশ। সেই দেশের কেউ তার নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারে, এটা বিশ্বাসই করতেন না জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেজন্যই সরকারি বাসভবনের পরিবর্তে তিনি থাকতেন নিজের প্রিয় ধানমন্ডির বাসভবনেই। বাঙালির স্বাধিকার-স্বাধীনতা আন্দোলনের সূতিকাগার ঐতিহাসিক ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িটি অসম্ভব প্রিয় ছিল বঙ্গবন্ধুর। এখান থেকেই যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগড়ার কাজে তিনি সর্বশক্তি নিয়োগ করেছিলেন। কিন্তু জঘন্য ঘাতকের দল তাকে সেই কাজ শেষ করে যেতে দেয়নি। ১৯৭১ সালের ১৫ আগস্ট ভোরের সূর্য ওঠার আগেই হায়েনারা নিভিয়ে দেয় বাঙালির সূর্য পুরুষের জীবন আলো।
শোকাবহ সেই আগস্টের দ্বিতীয় দিন আজ। ১৯৭৫ সালের ২ আগস্ট ছিল শনিবার। সেদিন সকাল পৌনে ১০টায় বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করেন উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের বিশেষ দূত ইয়াং ফপ। এছাড়া সাড়ে ১০টায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর কফিলুদ্দিন মাহমুদ, সন্ধ্যা ৬টায় সাবেক এমসিএ মোশাররফ হোসেন চৌধুরী এবং সোয়া ৬টায় সিলেটের মোস্তফা শহীদ এমপি সাক্ষাৎ করেন।
একজন মানুষ মৃত্যুর পরও যে কতটা শক্তিশালী, একটা জাতির কতটাজুড়ে থাকতে পারেন, এর উদাহরণ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ঘাতকরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করলেও বাঙালির হৃদয় থেকে সরাতে পারেনি। আজও বাঙালির মুক্তমননে দীপ্ত শিখা হয়ে জ্বলে রয়েছেন ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ পুরুষ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি নাম নয়, একটি ইতিহাস, একটি দেশ। কবির ভাষায়-‘এই বাংলার আকাশ-বাতাস, সাগর-গিরি ও নদী/ডাকিছে তোমারে বঙ্গবন্ধু, ফিরিয়া আসিতে যদি/হেরিতে এখনও মানবহৃদয়ে তোমার আসন পাতা/এখনও মানুষ স্মরিছে তোমারে, মাতা-পিতা-বোন-ভ্রাতা।’
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে একাত্তরের পরাজিত শক্তি, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্তে বাংলাদেশকেই হত্যা করতে চেয়েছিল। তারা পৃথিবীর মানচিত্র থেকে মুছে দিতে চেয়েছিল প্রিয় স্বদেশকে। ঘৃণ্য চক্রান্তে সেদিন ঘাতকরা হত্যা করেছিল পিতার নশ্বর শরীরকে। কিন্তু তার অবিনশ্বর চেতনা ও আদর্শ প্রকৃত অর্থে ছিল মৃত্যুঞ্জয়ী। ফলে ঘাতকের সাধ্য ছিল না ইতিহাসের সেই মহানায়কের অস্তিত্বকে বিনাশ করার।
সব্যসাচী কবি সৈয়দ শামসুল হক তার ‘আমার পরিচয়’ কবিতায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে লিখেছেন, ‘এই ইতিহাস ভুলে যাবো আজ, আমি কি তেমন সন্তান?/যখন আমার জনকের নাম শেখ মুজিবুর রহমান;/তাঁরই ইতিহাস প্রেরণায় আমি বাংলায় পথ চলি-/চোখে নীলাকাশ, বুকে বিশ্বাস, পায়ে উর্বর পলি।’