০৪ মে ২০২৫, রবিবার, ০১:৩০:০৪ পূর্বাহ্ন
আ.লীগের ঝটিকা মিছিল, নিষিদ্ধের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ দলগুলো
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৩-০৫-২০২৫
আ.লীগের ঝটিকা মিছিল, নিষিদ্ধের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ দলগুলো

শেখ হাসিনার পতনের পর থেকেই ফ্যাসিবাদবিরোধী ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা সব মহল থেকেই আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি ওঠে। তাদের অভিযোগ, গণহত্যার পর দলটি রাজনীতি করার অধিকার হারিয়েছে। বিশেষ করে ভারতে পালিয়ে থেকে অনলাইন মাধ্যমে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনার উসকানিমূলক বক্তব্য প্রচারের পর সে দাবি আরও জোরালো হয়ে ওঠে। তবে দেশের রাজনৈতিক দলগুলো এতদিন আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেনি।


এই সুযোগে মাঠে নামার চেষ্টা করেন ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে প্রকাশ্যে বেশ কিছু ঝটিকা মিছিলও করেন তারা। শেখ হাসিনাসহ দলটির পালিয়ে যাওয়া নেতারাও ভারতে বসে আরও বেশি করে নানা ধরনের উসকানিমূলক বক্তব্য দিতে শুরু করেন। দেশের মধ্যে থেকেও আওয়ামী লীগকে নির্বাচন ও রাজনীতিতে ফেরানোর পাঁয়তারা শুরু করে তাদের সহযোগী ও সুবিধাভোগী একটি মহল। তবে এখন আওয়ামী ফ্যাসিবাদবিরোধী সব পক্ষ এক সুরে আওয়ামী লীগের রাজনীতি ও দলটির বিচারসহ নিষিদ্ধের বিষয়ে কথা বলছে। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ইস্যূতে আবার সরব হয়েছে গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষের সব রাজনৈতিক দল ও শক্তি।


বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শুরু থেকেই ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের বিচার ও তাদের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে অনড়। সর্বশেষ শুক্রবার ‘গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগের বিচার ও রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ’ করার দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে এনসিপি। বায়তুল মোকাররমের সামনে আয়োজিত এই সমাবেশে আওয়ামী লীগের বিচার ও সংস্কারের আগে এই দেশে কোনো নির্বাচন হবে না বলে ঘোষণা দিয়েছেন এনসিপি নেতারা। তারা বলেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে অন্তর্বর্তী সরকার থেকে শুরু করে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে টালবাহানা দেখা যাচ্ছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে নিষিদ্ধ হবে, এই সিদ্ধান্ত জনগণ গত বছরের ৫ আগস্টই দিয়েছে। এর পরও কেউ আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করলে জুলাই যোদ্ধারা তাদের প্রতিহত করবে।


এদিকে বিএনপিও ‘স্বৈরাচার দল আওয়ামী লীগ’ ইস্যুতে নিজেদের কঠোর অবস্থানের কথা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছে। শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এবি পার্টির পঞ্চম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান আওয়ামী লীগকে ইঙ্গিত করে বলেছেন, স্বৈরাচার আবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। সংবিধান লঙ্ঘন করে তিনবার অবৈধ সরকার গঠন করেছিল। এই লঙ্ঘনের দায়ে অভিযুক্তদের আগামী দিনের রাজনীতিতে অপ্রাসঙ্গিক করে দিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কী পদক্ষেপ নিয়েছে, গণতন্ত্রকামী জনগণ তা জানতে চায়।


আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের ব্যাপারে জামায়াতের অবস্থান কী- জানতে চাইলে দলটির সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার সম্প্রতি যুগান্তরকে বলেন, এটা আমরা আগেই বলেছি, নিষিদ্ধ করার কাজ সরকারের। জনগণের প্রত্যাশা সরকারকে বিবেচনায় নিতে হবে।


এ ছাড়া বৃস্পতিবার সাভারের আশুলিয়ার জিরাবো এলাকায় মে দিবস উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ শ্রমিক অধিকার পরিষদ আয়োজিত শ্রমিক সমাবেশে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নূর বলেন, যে আওয়ামী দুর্বৃত্তরা ইতিহাসের বর্বরতম গণহত্যা ঘটিয়েছে, এত মানুষকে পঙ্গু করেছে, এখন পর্যন্ত কেন তাদের নিষিদ্ধের বিষয়ে সরকারি সিদ্ধান্ত দেখছি না। আমরা পরিষ্কারভাবে সরকারকে বলতে চাই, অনতিবিলম্বে এই গণহত্যাকারী রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করতে হবে।


এ ছাড়া জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষে অন্যান্য দলের মধ্যে বাম ঘরানার রাজনৈতিক নেতারাও আওয়ামী লীগের বিচার ও দলটির নিষিদ্ধের দাবিতে সোচ্চার হয়ে উঠেছে। অপরদিকে ইসলামি দলগুলো শুরু থেকেই ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের বিচার ও দলের কার্যক্রম বন্ধের দাবি জানিয়ে আসছে। তারা শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করারও দাবি জানাচ্ছেন।


শেয়ার করুন