১৯ নভেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ০৫:২০:৫০ অপরাহ্ন
বৈধ প্রার্থীর বিরুদ্ধে আপিল বেড়েছে
  • আপডেট করা হয়েছে : ১০-১২-২০২৩
বৈধ প্রার্থীর বিরুদ্ধে আপিল বেড়েছে

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র বাছাইয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের সিদ্ধান্তের (প্রার্থিতা বৈধ বা বাতিল) বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) মোট ৫৬১টি আপিল হয়েছে। এর মধ্যে বৈধ প্রার্থীর বিরুদ্ধে আপিল হয়েছে অন্তত ৩০টি। কোনো কোনো আসনের প্রার্থীরা একে অন্যের বিরুদ্ধেও আপিল করেছেন। বাকি আপিলগুলো হয়েছে প্রার্থিতা ফিরে পেতে।


ইসি সূত্র জানায়, ২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচনের চেয়ে এবার বৈধ প্রার্থীর বিরুদ্ধে আপিল হয়েছে দ্বিগুণের বেশি। তখন ৫৪৬টি আপিল হয়েছিল। এর মধ্যে বৈধ প্রার্থীর বিরুদ্ধে আপিল ছিল ১২টি। 


সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বিএনপিবিহীন এবারের নির্বাচনে মূলত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সঙ্গে দলটির স্বতন্ত্র প্রার্থীদের। এমন প্রতিদ্বন্দ্বিতার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে একজনের প্রার্থিতার বিরুদ্ধে অন্যজনের আপিলের মধ্য দিয়ে।


গতকাল শনিবার ইসিতে আপিলের শেষ দিন শাহজাহান ওমরসহ মোট ১৯ জন বৈধ প্রার্থীর বিরুদ্ধে আপিল হয়। এর আগের চার দিনে অন্তত ১১ জন বৈধ প্রার্থীর বিরুদ্ধে আপিল হয়েছিল। বেশির ভাগ আপিল হয়েছে তথ্য গোপনের অভিযোগে।


বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা শাহজাহান ওমর ঝালকাঠি-১ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন। তাঁর মনোনয়নপত্রের বৈধতার বিরুদ্ধে আপিল হয়েছে। ইসির পক্ষ থেকে গণমাধ্যমকর্মীদের আপিলসংক্রান্ত যেসব তথ্য দেওয়া হয়, সেখানে শাহজাহান ওমরের বিরুদ্ধে আপিলকারী হিসেবে মনিরুজ্জামানের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। মনিরুজ্জামান ওই আসন থেকে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী। বাছাইয়ে তাঁর মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। তিনি নিজের প্রার্থিতা ফিরে পেতেও আপিল করেছেন।


গতকাল সন্ধ্যায় মনিরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর অনুমতি নিয়ে তাঁর পক্ষে এলাকার একজন ভোটার শাহজাহান ওমরের মনোনয়নপত্র গ্রহণের বিরুদ্ধে ইসিতে আপিল করেছেন। শাহজাহান ওমর তাঁর হলফনামায় মামলাসংক্রান্ত তথ্য গোপন করেছেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনের সময়ও তাঁর হলফনামায় মামলাসংক্রান্ত তথ্য ছিল। এবার নেই।


একে অন্যের বিরুদ্ধে আপিল

ইসি সূত্র জানায়, ফরিদপুর-৩ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী এ কে আজাদের মনোনয়নপত্র গ্রহণের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী শামীম হক। এর আগে শামীম হকের বিরুদ্ধে এ কে আজাদ আপিল করেছিলেন।


বরিশাল-৪ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী পঙ্কজ নাথের বিরুদ্ধে গতকাল ইসিতে আপিল করেছেন ওই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাম্মী আহমেদ। তিনি নিজের প্রার্থিতা ফিরে পেতেও আপিল করেছেন। এর আগে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছেও তাঁরা একে অন্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছিলেন। এর ভিত্তিতে শাম্মী আহমেদের প্রার্থিতা বাতিল হয়।


বরিশাল-৫ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহিদ ফারুকের মনোনয়নপত্রের বৈধতার বিরুদ্ধে আপিল করেছেন আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। এর আগে জাহিদ ফারুক আপিল করেছিলেন সাদিক আবদুল্লাহর বিরুদ্ধে।


আরও আপিল

চট্টগ্রাম-১০ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মনজুর আলমের মনোনয়নের বৈধতার বিরুদ্ধে ইসিতে আপিল করেছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মহিউদ্দীন। চট্টগ্রাম-১৫ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবু রেজা মোহাম্মদ নেজামুদ্দীনের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আ স ম মিজানুর রহমান। চট্টগ্রাম-২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী খাদিজাতুল আনোয়ারের মনোনয়নপত্রের বৈধতার বিরুদ্ধে ইসিতে আপিল করেছে ওয়ান ব্যাংক। আর চট্টগ্রাম-৯ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর মনোনয়নপত্রের বৈধতার বিরুদ্ধে আপিল করেছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী সানজীদ রশীদ চৌধুরী।


নোয়াখালী-৪ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী একরামুল করিম চৌধুরীর মনোনয়নপত্র বৈধতার বিরুদ্ধে আপিল করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী শিহাব উদ্দিন। কুমিল্লা-৫ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবুল হোসেন খানের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী সাজ্জাদ হোসেন আপিল করেন।


আরও যাঁদের প্রার্থিতা বৈধতার বিরুদ্ধে আপিল হয়েছে তাঁদের মধ্যে আছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুস সালাম (ময়মনসিংহ-৯), সাজ্জাদুল হাসান (নেত্রকোনা-৪), ছোট মনির (টাঙ্গাইল-২), মোতাহার হোসেন (লালমনিরহাট-১) ও রাজী মো. ফখরুল (কুমিল্লা-৪)। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে আছেন জালাল আহমেদ (চাঁদপুর-৪), বিশ্বজিত কুমার ঘোষ (দিনাজপুর-৩), মো. আবু হাশেম (চুয়াডাঙ্গা-২) ও গাজী মঈন উদ্দীন (চাঁদপুর-৫ আসন)।


গতকাল সন্ধ্যায় ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম সাংবাদিকদের বলেন, রিটার্নিং কর্মকর্তাদের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিলের সময় শেষ হয়েছে। মোট ৫৬১টি আপিল হয়েছে। আজ রোববার থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত কমিশন আপিল শুনে সিদ্ধান্ত দেবেন।


আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ করা হবে। এবার ৩০০ সংসদীয় আসনে ২ হাজার ৭১৬টি মনোনয়নপত্র জমা পড়েছিল। যাচাই-বাছাইয়ে ৭৩১টি মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। এখন পর্যন্ত মোট বৈধ প্রার্থী আছেন ১ হাজার ৯৮৫ জন। আপিলের মাধ্যমে অনেকে প্রার্থিতা ফিরে পেতে পারেন। ইসির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাওয়ারও সুযোগ পাবেন প্রার্থীরা। আর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এরপর চূড়ান্ত প্রার্থীর সংখ্যা জানা যাবে।


শেয়ার করুন